Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

তিক্ততায় পরিণত হয়েছে নিউইয়র্কের প্রবাস জীবন

usa-labourনিউইয়র্কে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাংলাদেশির সংখ্যা। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এ সংখ্যা দুই লাখ বলে অনুমান করা হয়। পারিবারিক অভিবাসনসহ নানা সুযোগে নিউইয়র্কপ্রবাসী হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। দেশে ভালো চাকরি বা অর্থ রোজগার করলেও প্রবাসে এসে তাদের অধিকাংশকে বেছে নিতে হচ্ছে অড জব (অমানানসই কাজ)। কিন্তু তারপরও আর্থিকভাবে অধিকাংশ বাংলাদেশি স্বাবলম্বী হতে পারছেন না।

নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার। এখানে ব্যবসা ও বাণিজ্যে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু সোনার হরিণ ডলারের পেছনে ছুটেও নিউইয়র্কপ্রবাসী বাংলাদেশিরা আয়-ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছেন না। সপ্তাহান্তে পাওয়া চেক বা নগদ ডলার দিয়ে চলছে না সংসারের চাকা। ফলে বাংলাদেশিদের কাছে নিউইয়র্ক প্রবাসজীবন ধীরে ধীরে তিক্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও সন্তান এবং দেশের পরিবার-পরিজনের কথা ভেবে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন তারা।

chardike-ad

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কিছু পরিবারের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মারাত্মক অভাবের সম্মূখীন হলেও তারা মুখ খুলে কাউকে বলতে পারছেন না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে মূলধারার চাকরির প্রতি জোর দেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্টরা।

জ্যামাইকার ১৭১ স্ট্রিটের বাসিন্দা নজরুল হোসেনের বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। ডিভি লটারি পেয়ে তিনি নিউইয়র্কে আসেন। প্রবাসজীবনের শুরু থেকেই ম্যানহাটনের রেস্তোরাঁয় চাকরি করেন। একই এলাকা থেকে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন নিউইয়র্কে। দুই সন্তানের জনক নজরুল হোসেন একাই রোজগার করেন। স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তানকে দেখভাল করতে সময় যায় স্ত্রী রেহনুমার। কিছুদিন একটি ফাস্টফুডের দোকানে রেহনুমা কাজ করলেও সংসারের কথা চিন্তা করে চাকরি ছেড়ে দেন। একাই রোজগার করা নজরুল হোসেন শীত মৌসুমে রোজগার করেন সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৬০০ ডলার। মাসে ২ হাজার ৪০০ ডলার।

নজরুল বলেন, ‘থাকি এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে। ভাড়া ১ হাজার ৪৭৫ ডলার। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বিল দিতে হয় ১০০ ডলারের ওপর। সাবওয়ে খরচ আছে মাসে ১২০ ডলারের মতো। এ ছাড়া দেশে স্বজনদের জন্যও কিছু ডলার পাঠাতে হয়। সব মিলিয়ে দিনে আনি দিনে খাই-এর মতো অবস্থা। কোনো সঞ্চয় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ কথা কেউ বিশ্বাস করবেন না।’

usa-bangladeshiজ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশি গ্রোসারিতে কাজ করেন চাঁদপুর সদরের ইদ্রিস আলী। ইদ্রিস নিউইয়র্কে জীবন শুরু করেন ভাইয়ের হাত ধরে। এক কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন সানিসাইডে একটি প্রাইভেট হাউসে। এক বেড রুমের প্রাইভেট হাউসের ভাড়া ১ হাজার ৪০০ ডলার। গ্রোসারিতে সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টা কাজ করার পর পান ৪৫০ ডলার। মাসে রোজগার ১ হাজার ৮০০ ডলার। স্ত্রী নাজিয়া বেগম বেবিসিটিং করে পান ৩৫০ ডলার। ২ হাজার ২০০ ডলার দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন ইদ্রিস দম্পতি।

অপরদিকে হলুদ ক্যাব চালকদের আর্থিকভাবে সচ্ছল ভাবা হয় নিউইয়র্কসহ প্রায় সব অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে। ফ্লাশিংয়ের কলেজ অ্যাভিনিউয়ের মামুনুর রশিদ ক্যাব চালান আট বছর ধরে। তিনি বলেন, গেল দুই-তিন বছর ধরে ক্যাবেও ভালো আয় হচ্ছে না। একসময় ভালো রোজগার হলেও উবার নামার পর মন্দা যাচ্ছে। এখন মেডেলিয়ান ভাড়া দিয়ে সপ্তাহ শেষে কিছুই থাকছে না।

মামুনুর বলেন, ‘স্ত্রী, দুই কন্যা এবং বৃদ্ধ মাকে নিয়ে থাকি। প্রাইভেট বাসায় দুই বেডরুমের জন্য ভাড়া দিতে হয় ১ হাজার ৮০০ ডলার। কোনো মাসে ৩ হাজার আবার কোনো মাসে ২ হাজার ৭০০ ডলার রোজগার হয় রাত-দিন কাজ করলে। এভাবে কাজ করার পরও কোনোভাবে সঞ্চয় করা যায় না। দেশে ছোট দুই ভাইয়ের জন্য নিয়মিত টাকা পাঠাতাম। গেল কয়েক মাস ধরে তা-ও পারছি না, কারণ নিজেরই চলতে কষ্ট হচ্ছে।’

কুইন্স ভিলেজের ইকরাম আলীর বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছায়। তিনি কাজ করেন ম্যানহাটনের ডাউনটাউনের একটি গিফট শপে। ট্রেনে আসা-যাওয়া এবং কর্মঘণ্টা মিলে প্রতিদিন কাজ করেন ১৫ ঘণ্টা। সপ্তাহ শেষে পান ৪৫০ ডলার। এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে বাসা ভাড়া দেন ৮০০ ডলার। তিনি বলেন, ‘অভাব ছাড়ছে না। কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করছি কিন্তু অন্য কোথাও কাজ পাচ্ছি না।’

বাংলাদেশিদের এমন অবস্থার ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নিউইয়র্কে জীবনযাপন অনেক ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। অল্পসংখ্যক প্রবাসী ভালো চাকরি ও ব্যবসা করে ভালো জীবনযাপন করলেও অধিকাংশ বাংলাদেশিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংসার চালাতে।

‘নিজেই চলতে পারি না, দেশে টাকা পাঠাব ক্যামনে’