Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জ্যাকি চ্যান: যারা ভাবে আমি ভয় পাই না, তারা পাগল

Jackie Chanআমার বাবা ছিলেন স্পাই। মা ছিলেন ড্রাগ স্মাগলার। মাত্র ছয় বছর বয়সেই তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। রক্তের সম্পর্ক থাকলেই তো আর পরিবার হয় না, সাথে ভালবাসাও লাগে।

আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বোর্ডিং স্কুলে। সেখানে আমি লিখতে-পড়তে শিখি, একই সাথে মার্শাল আর্ট, ড্রামা, অ্যাক্রোব্যাটিক ও গান শিখি।

chardike-ad

শিশুবেলায় আমি খুব চঞ্চল ছিলাম। তখন আমি নাকি কামানের গোলার মত ঘূরপাক খেতাম। আমার ডাক নাম তাই ছিল ‘পও পও’। স্কুলে আমি কখনোই ভাল কিছু করতে পারিনি। প্রাথমিকের প্রথম বছরেই আমি ফেল করেছিলাম।

কেম নাম্বার পাওয়ার জন্য আমাকে তখন প্রচুর মার খেতে হত। আমি নিজের পক্ষে কিছুই বলতে পারতাম না। তাই, আমাকে ক্রমাগত গঞ্জনা সহ্য করতে হত। আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সব কিছু সহ্য করতে হয়, যতক্ষণ না আমি আমারই মত আরেকজনের হয়ে একই রকম আক্রমণের প্রতিবাদ না করি। তখন আমি ‍বুঝতে শিখি যে, আমাকে নিজের হয়েও কথা বলতে শিখতে হবে।

পড়াশোনা শেষ করে আমি ব্রুস লি’র সিনেমা স্টান্টম্যান হিসেবে কাজ করা শুরু করি। তখন তামি তারকাদের থেকে খুব প্রভাবিত হতাম। খুব তাড়াতাড়ি তাই আমি পরিচিতি পেয়ে যাই, কারণ পাগলাটে সব স্টান্ট করতে স্বানন্দে রাজি হয়ে যেতাম।

ব্রুস লি মারা যাওয়ার পর আমি কিছু কুং-ফু ছবিতে মূল ‘স্টার’ হিসেবে কাজ করি। তবে, সবগুলোই ব্যর্থ হয়। মার্শাল আর্টের দিক থেকে তখনও আমি ঠিক ব্রুস লি’র সমপর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি। তবে, আমি কখনওই আগামী ব্রুস লি হতে চাইতাম না, আমি আমার মতই হতে চাইতাম।

আমি ভাঙা হৃদয় নিয়ে হংকং ছেড়ে যাই। অস্ট্রেলিয়ায় আমি নির্মানকর্মীর কাজ পাই।তবে তখনও স্বপ্নটা আমার মধ্যে ছিল। আমি বিশ্বাস করতাম, পরিস্থিতি কখনো কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বরং, নিজেকেই পরিস্থিতিকে পাল্টে ফেলতে হয়।

নতুন ধারার সিনেমা নির্মানের ধারণা নিয়ে আমি সিনেমায় ফিরে আসি। কমেডি এবং মার্শাল আর্টকে নিয়ে আসি একই ছাতার নিচে। দু’বছরের মধ্যে এশিয়ায় আমি সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতায় পরিণত হই।

Jackie Chanনতুন সাফল্যের পরও যেন ঝামেলা আমার পিছু ছাড়ছিল না। আমার কাছের মানুষরাই আমাকে ধোঁকা দিয়ে লাখ লাখ ডলার নিয়ে যায়। নিজের কাছে বন্দুক আর গ্রেনেড রাখতাম। যে গ্যাং গুলো আমার কাছে চাঁদা চাইতো তাদের কাছ নিজের আত্মরক্ষার জন্যই আমাকে বাধ্য হয়ে এসব করতে হত।

ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা মুক্তির ৩৪ বছর পর আমার সিনেমা ‘র‌্যাম্বল ইন দ্য ব্রঙ্কস’ হলিউডে হিট হয়। তখন আমার বয়স ৪২ বছর। ৫০ বছর বয়স হওয়া অবধি আমি ১০০ টি সিনেমা করেছি।

আমার শরীরের প্রতিটা হাড়ই একবার করে হলেও ভেঙেছে। জীবিত অভিনেতা হিসেবে আমি সবচেয়ে বেশি স্টান্ট করার বিশ্ব রেকর্ডের মালিক। একবার আমি প্লেন থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। সেবার আমি পড়েছিলাম একটা গরম এয়ার বেলুনে।

আমি সাতটি ভাষায় কথা বলতে পারি। আমি একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্লাসিকাল সঙ্গীতের গায়ক। আমার ২০ টি গানের অ্যালবামও আছে।

তবে, আমি ‍দু’টি বিষয় খুব ভয় পাই। প্রথম হল সুঁই, আর দ্বিতীয়টি হল জনপরিসরে কথা বলা। আমার নাম জ্যাকি চ্যান, আর এটাই আমার গল্প।

আমি বিশ্বাস করি, জীবন আমাদের ঘুষি মেরে ধরাসায়ী করে মাটিতে ফেলে দিতে পারে। তবে, এরপর আমরা উঠে দাঁড়াবো কি দাঁড়াবো না, সেই সিদ্ধান্তটা আমাদেরই।

বিজ্ঞাপনে বলা হয়, আমি নির্ভয়। তবে সেটা করা হয় প্রচারণার স্বার্থে। কেউ যদি সত্যিই ভেবে থাকে, আমি ভয় পেয়ে কাঁপতে থাকি না তাহলে সে আমার স্টান্টের চেয়েও পাগলাটে। পাগলামি করি বটে, কিন্তু আমি বোকা নই।

গোলকাস্টের সৌজন্যে