Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বদলে যাওয়া বাঁধনের সাফল্যের গল্প

badhonআজমেরি হক বাঁধন। শোবিজের জনপ্রিয় নাম। অভিনয় দিয়ে তিনি জয় করেছেন দর্শকের মন। সেই ২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় রানারআপ হয়ে তার পথচলার শুরু। আজও ছড়িয়ে যাচ্ছেন গ্ল্যামার আর অভিনয়ের মুগ্ধতা। মাঝখানে কিছুটা ফ্যাকাশে ছিলো তার ক্যারিয়ারের দিনকাল। পারিবারিক নানা টানাপোড়েন, চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে।

তবে হঠাৎ করেই সবকিছু ঝেড়ে ফেলে নতুন উদ্যমে শুরু করে দিলেন তিনি। আর সেই শুরুতে চমকও দিলেন বেশ। মুটিয়ে যাওয়া বাঁধন এখন দুর্দান্ত নতুন। ফিগার, সৌন্দর্য, স্টাইল, উপস্থাপনা-সবখানেই এনেছেন জৌলুস আর আভিজাত্যের ছোঁয়া। বছরের শুরুতেই নতুন ফটোশুটে নতুন লুকে দেখা মিললো বাঁধনের। সম্প্রতি নিজের ফেসবুকে তিনি কিছু ছবি পোস্ট করেন। সেইসব ছবি দেখেই চমকে গেলেন সবাই। এ কোন বাঁধন? নেই সেই মেদ-মোটা শরীর? নেই কোনো দুশ্চিন্তার ছাপ।

chardike-ad

কেউ কেউ তো বলিউডের ক্যাটরিনা, কারিনা বলেই মন্তব্য করেছেন বাঁধনের পোস্ট করা ছবির নিচের কমেন্টস বাক্সে। সত্যি তাই, নতুন লুকে অনন্য এক বাঁধন প্রমাণ দিয়েছেন চাইলেই সব পারা যায়। হতাশা কাটিয়ে নতুন উদ্যমে জেগে ওঠা যায়। বাঁধনের ভাষাতে, ‘ক্যারিয়ারের প্রতি মনযোগী হতে চাই। সেই ইচ্ছেটাই আমাকে সাহস দিয়েছে নিজেকে বদলে নিতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে বলে মিডিয়ায় কেউ ভালো বন্ধু হয় না। আমি বলব এটা ভুল। মিডিয়ার সবার সাপোর্ট আর সহযোগিতায় আমি কঠিন পরিস্থিতি ওভারকাম করতে পেরেছি। তবে এ ক্ষেত্রে আমার মা-বাবার ভূমিকা সবার আগে। আর আমার কাজে ফেরার শক্তি হচ্ছে আমার সন্তান। ওর দিকে তাকিয়েই সব করতে পেরেছি এবং এখন করছি। আর আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই দুজন মানুষকে যাদের ভাবনায় আমি নিজেকে নতুন করে তুলে ধরতে পেরেছি। তাদের একজন হলো আমার নতুন লুকের ডিজাইনার মাহমুদুল হাসান মুকুল। অন্যজন আলোকচিত্রী রফিকুল ইসলাম রাফি। তাদের জন্যই নিজেকে এই রুপে খুঁজে পেয়েছি আমি।’

হঠাৎ এই বদলে যাওয়ার রহস্য কী জানতে চাইলে জবাবে এই লাক্স সুন্দরী বলেন, ‘গেল বছরে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু নিজেকে তৃপ্ত করার মতো কিছু পাইনি। তাই ভাবলাম নিজেকে একটু পরিবর্তন করা দরকার। পথ খুঁজতে থাকলাম নতুন বছরে নিজেকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে। এমন কিছু কাজ করে দেখাতে- যার মাধ্যমে শুধু আমি নই, মিডিয়াটাও যেন উপকৃত হয়। শুরু করলাম ডায়েট আর জিম দিয়ে। ওজন কমালাম ১২ কেজি! এরপর ভাবলাম এবার নিজের একটা পোর্টফোলিও তৈরি করা দরকার। তাই বছরের শেষ প্রান্তে এসে টানা শুট করলাম। ডন লুক, স্পোর্টি লুক, শাড়ি ফিউশন, বৌ লুক, ওয়েস্টার্ন লুক ও নিজস্ব চিন্তার কিছু লুক নিয়ে হাজির হলাম। আমি যে নিজেকে তৈরি করতে পেরেছি সেটা নিজেকে জানাতেই এই ফটোশুট। আমি এখন তৈরি নতুন করে সংগ্রামের পথে।’

নতুন বছরের পরিকল্পনা হিসেবে জানালেন, ‘ক্যারিয়ারের প্রতি মনযোগী হতে চাই। দর্শকের মনে দাগ কাটার মতো কিছু কাজ করতে চাই। কারণ, বছর শেষে হিসেব করতে গিয়ে দেখলাম অনেক কাজই করেছি, কিন্তু কেউ তো মনে রাখেনি। তাই ভিন্ন গল্প আর চরিত্রে দর্শকের সামনে আসতে চাই। দিনশেষে কাজের মান গুরুত্বপূর্ণ। ভালো অভিনয়ের তৃষ্ণা মেটাতে চাই।’

আপনার সমসাময়িক অনেক তারকাই ছোট পর্দা থেকে চলচ্চিত্রে গিয়ে ব্যস্ত হয়েছেন, প্রশংসিত হয়েছেন। আপনার পরিকল্পনা আছে চলচ্চিত্র নিয়ে? জবাবে বাঁধনের সহাস্য উত্তর, ‘অবশ্যই। সবাই চায় অভিনয়ের বড় ক্যানভাসে নিজেকে তুলে ধরতে। আমিও চাই চলচ্চিত্রে কাজ করি। আমার সঙ্গে মানানসই, গুরুত্ব আছে এমন চরিত্র পেলে চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই আমি। এ ক্ষেত্রে অফট্রাক আর কমার্শিয়াল কোনো মূখ্য বিষয় না। প্রাধান্য পাবে দর্শক ছবিটি দেখবে কী না, আমাকে গ্রহণ করবে কী না। আমি তো প্রস্তুত।’

দেখতে দেখতে বাঁধনের ক্যারিয়ারের এক যুগ পূর্ণ হচ্ছে এ বছর। তাই নতুন বছরটিকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা তার। এরইমধ্যে দীপ্ত টিভিতে চমৎকার একটি কাজ শুরু করেছেন। কথা চয়নিকা চৌধুরীর একটি নাটকে অভিনয়ের ব্যাপারে। শিগগিরই আরও কিছু নাটক-টেলিছবিতে চুক্তিবদ্ধ হবেন তিনি।

প্রসঙ্গত, বাঁধন পড়াশোনা করেছেন দাঁতের চিকিৎসা নিয়ে। চাইলে চিকিৎসক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারতেন। তবে অভিনয়ের প্রতি ভালো লাগা থেকেই নিজেকে শোবিজে জিইয়ে রেখেছেন। ২০১০ সালে বিয়ে করেন বাঁধন। মা হন পরের বছর। গেল বছর জানা গেল, সেই সংসার শত চেষ্টা করেও টিকিয়ে রাখতে পারেননি তিনি। মেয়েকে নিয়ে একা একাই লড়াই করেছেন প্রতিকূল সময়ের সাথে। আশার কথা হলো, পারিবারিক সব ক্রাইসিস কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। বাঁধন এখন সাফল্যের ময়দানে একজন যোদ্ধা। যার হাতে জিতে যাবার সব অস্ত্রই রয়েছে। বদলে যাওয়া এই অভিনেত্রীকে অভিনন্দন।