Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু আজ

ijtemaদেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উপস্থিতিতে ইবাদত বন্দেগি, জিকির আসকার আর আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছে কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগপাড়ের বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।

তুরাগ তীরে সোনাভান বিবির টঙ্গী শিল্পশহরের ইজতেমা মাঠে লাখ লাখ মুসল্লির উপস্থিতিতে চলছে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান।

chardike-ad

বাদ ফজর জর্দানের মাওলানা সৈয়দ ওমর খতিবের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর বাদ জোহর বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন, বাদ আছর বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল বার ও বাদ মাগরিব বয়ান করবেন বাংলাদেশের মাওলান মোহাম্মদ রবিউর হক।

৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আজ প্রথম দিন। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লি বয়ান, তাশকিল, তাসবিহ-তাহলিলে কাটাচ্ছেন। তবে তীব্র শীতের কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুসল্লিদের প্যান্ডেলের বাইরে যেতে দেখা যায়নি।

শুক্রবার থাকায় আজ ইজতেমা মাঠে বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বে রাজধানী ঢাকাসহ ১৪ জেলার মুসল্লি ইজেতেমায় অংশ নিচ্ছেন। সকাল থেকেই সড়ক পথ, রেলপথ ও নৌপথসহ সব পথেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে ঢল নামে মুসুল্লিদের। যদিও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আসতে শুরু করে মুসল্লিরা। গাজীপুরসহ আশপাশের অঞ্চলগুলো থেকে থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করতে ইজতেমা ময়দানে আসবেন।

এ বছর ইজতেমার প্রথম পর্বে ১৭টি জেলা অংশ নেয়ায় চটের বিশাল শামিয়ানার নিচে মুসল্লিদের তেমন ঠাসাঠাসি নেই। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিদের অনেকে মূল প্যান্ডেলের নিচে বসেই জুমার নামাজ আদায় করার সুযোগ পাবেন।

এবারে প্রথম দফায় বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের জন্য পুরো ময়দানকে ২৭টি খিত্তায় (ভাগে) ভাগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তায় নির্দিষ্ট জেলার মুসল্লির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে প্রথম ধাপে অংশগ্রহণ করেছেন ঢাকার একাংশসহ নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষীপুর, সিলেট,চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিী, পঞ্চগড়, নেত্রকোনা, নরসিংদী এবং বগুড়া জেলার বাসিন্দরা। প্রতিটি জেলার জন্য রয়েছে নির্ধারিত স্থান। প্রত্যেকেই স্ব-স্ব খিত্তায় অবস্থান নেবেন।

এ বছর ১৬০ একর এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। বিদেশি মেহমানদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ৪ কামরা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক নিবাস।

এবারের ইজতেমা ময়দানের রয়েছে ১৭টি প্রবেশ পথ। ইজতেমা ময়দানের চারদিকে ১৫টি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। মাঠ জুড়ে রয়েছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের কড়া নজরদারি।

ইজতেমা ময়দানে হামদর্দ, ইবনে সিনা, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতি, আবেদা মেমোরিয়াল প্রাইভেট হাসপাতাল লিমিটেড, সি কে ডি অ্যান্ড ইউরোলজিস্ট হসপিটাল, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদফতর, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ ৫৪ ফ্রি মেডিকেল বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার জন্য ক্যাম্প খুলেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান সংবাদ সম্মেলনে জানান, এবারের ইজতেমায় কোনো হুমকি নেই। তবে হুমকি বিবেচনায় অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে র্যাব কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

পৃথক সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বলেন, দিল্লির মারকাজের মাওলানা সাদকে কেন্দ্র করে চলমান দ্বন্দ্ব ইজতেমায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। প্রথমদিন শুক্রবার থাকায় ইজতেমা মাঠে বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বে দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তায় সাত হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছে। অর্ধশতাধিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ইজতেমা এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান জানান, ১৫টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় চার কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাহমুদ হাসান জানান, আশপাশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।

ইজতেমার মুরুব্বিদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে ও ১৯৫৮সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে ইজতেমার স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।