কোটা সংস্কারের আন্দোলনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথন প্রকাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন আহমেদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন হাছান মাহমুদ।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের দাবি, অধ্যাপক মামুনকে গ্রেপ্তার করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে হামলার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় এই দাবি জানান হাছান।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন চলাকালে তারেক রহমানের সঙ্গে অধ্যাপক মামুনের টেলিফোনে কথোপকথন প্রকাশ হয়েছে। যেখানে দেখা যায় এই আন্দোলনে ‘অর্গানাইডজ ওয়েতে’ সাপোর্ট দেয়ার বিষয়ে দুই জনের মধ্যে কথা হয়।
ফোনালাপে তারেক রহমানকে অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত ধারণা, সাপোর্টটা দেওয়া প্রয়োজন। জেনারেল ওয়েতেই সেটা করা প্রয়োজন। তবে অর্গানাইজড করাটা বিভিন্ন কারণে সম্ভব হয় নাই। তবে এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, এখন অর্গানাইজড করার সময় হয়ে এসেছে। আপনি বলায় এটা আরও বেশি এক্সপাডাইজ হবে নিশ্চয়। নিশ্চয় সেটা আমরা করব।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি মনে করি মামুন সাহেবকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে কারা হামলা চালিয়েছে এই মামুনকে গ্রেপ্তার করা হলে এই তথ্য দিতে পারবেন।’
‘তারেক রহমান ইনস্ট্রাকশন দেয়ার পড়ে সম্ভবত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির বাসভবনে হামলা , ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ চালানো হয়েছে।’
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কোটা পদ্ধতি সংরক্ষণ বা কোটা পদ্ধতি বাতিলের কোনটাই নাই। তাহলে কেন তার বাসভবনে হামলা চালানো হল? নিশ্চয়ই শিক্ষকদের একটি অংশ এর সাথে জড়িত থাকতে পারে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।’
বিএনপি-জামায়াত তাদের পেট্রল বোমা বাহিনীকে কোটা আন্দোলনের ঢুকিয়েছিল দাবি করে হাছান বলেন, ‘আপনার সবাই গতকাল দেখেছেন এবং শুনেছেন তারেক রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক মামুনের সাথে কথা বলেছেন। তিনি ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছেন কীভাবে এই আন্দোলনে একটু বাতাস দেয়া যায়। সেটা চেষ্টা করার জন্য।’
‘তখন মামুন সাহেব বলছেন সেটা আমরা আগে খেয়াল করিনি আপনি বলার পরে এটা আমাদের নজরে এসেছে। অর্থাৎ এ আন্দোলনের বাতাস দেব।’
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণায় বিএনপির ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতা।
এই ঘোষণায় সরকারের পরাজয় হয়েছে-বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের এমন দাবির বিষয়ে হাছান বলেন, ‘এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকারের পরাজয় নয় বরং সরকারের জয় হয়েছে।’
‘যারা আন্দোলন করেছে তারা বঙ্গবন্ধুর ছবি হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছবি হাতে নিয়ে জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে কোটা বাতিলের কথা বলেছে।’
‘বিএনপি কোটা অন্দোলনকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছিল। তারা দেশের মাটি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে অর্থাৎ তাদের রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মাধ্যমে।’
সরকারি চাকরিতে কোটা বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে সবসময় ছিল জানিয়ে সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘কোটা সংস্কার সবসময় হয়ে আসছে। কোটা সংস্কার ভবিষ্যতেও হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেই সাথে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত সুচিন্তিত ভাবে ঘোষণা দিয়েছেন তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই।’
মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আন্দোলনকারীদের দাবির বিরোধিতা করেন হাছান। বলেন, ‘তাহলে কি ভিসির বাসভবনে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বিচার হবে না? আমি বরং সরকারকে অনুরোধ জানাব, এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হোক। সেই সাথে জড়িতদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক।’