Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মাঝরাতে দিল্লির রাস্তায় ২০০ নারীর দৌড়

running-dillhiভয়কে জয় করতেই নয়াদিল্লিতে এক ম্যারাথন দৌড়ে পা মেলালেন ভয়হীন নারীরা। ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে নয়াদিল্লির রাজপথ ছিল নারীদের। ৫ কিলোমিটার দৌড়ালেন শুধু নারীরাই। যে নারীরা দৌড়ালেন, তাদের লক্ষ্য কোটি কোটি নারীর কাছে স্বাধীনতা ও ভয়হীন পথচলার বার্তা পৌঁছে দেয়া। তাদের মুখে ছিল শ্লোগান, ‘ভয়হীন শহর আমার’, ‘ভয়হীন পথ আমার’।

উদ্যোক্তাদের চমকে দিয়ে একে একে ২০০ জন নারী দৌড়ে অংশ নিলেন। দিল্লি পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইউনাইটেড সিস্টার্স ফাইন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে মাঝরাতে দৌড় শুরু হয়েছিল দিল্লি শহরের কনটপ্লেস থেকে। পাঁচ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়। প্রায় ২০০ নারী এতে অংশ নেন। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি ২০১২ সালে মিলিন্দ সোমনের সঙ্গে যৌথভাবে ‘দ্য পিঙ্কাথন’ নামে বার্ষিক ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজন করেছিল।

chardike-ad

মাঝরাতে দিল্লিতে এ ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজকদের সামনের সারিতে ছিলেন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (নয়াদিল্লি) অজয় চৌধুরি। তিনি বলেন, ‘এই শহর ও আশ-পাশের অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা আছে যে, সন্ধ্যা হওয়ার আগে বাড়ির মেয়েদের ঘরে ফিরে যেতে হবে। এই ধারণা এমনি এমনি তৈরি হয়নি। নানা অপ্রীতিকর ঘটনার ফলে তা গড়ে উঠেছে।’

অজয় চৌধুরী বলেন, ‘অভিভাবকদের এই ফরমান বহু ক্ষেত্রে মেয়েদের পেছনের দিকে ঠেলে দেয়। সশক্তিকরণের সুযোগ হাতছাড়া হয়। এখন কর্পোরেট দুনিয়ায় সন্ধ্যার পরও নারীদের কাজে যেতে হয়। গভীর রাতে বাড়ি ফিরতে হয়। পুরুষরা অনায়াসে তা পারলেও নারীদের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সুরক্ষার বিষয়টি। মনের মধ্যে ভয় কাজ করে। এই ভয়কে জয় না করলে মেয়েরাই ক্রমশ পিছিয়ে পড়বে। আমাদের সবাইকে উদ্যোগ নিয়ে এই ভয় দূর করতে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

running-dillhiপুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘নয়াদিল্লিতে নারীদের মধ্যে সচেতনতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। সেই চিন্তা মাথায় রেখেই আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে সবার সঙ্গে কথা বলে এই ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজন করেছি। খুব ভালো সাড়া মিলেছে। সবচেয়ে বড় কথা, এই দৌড় দেখে মহিলাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আমরা চাই ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিনব কিছু কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আরো বেশি সংখ্যক নারীকে সচেতন করে তুলতে।’

সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গতবছর প্রতিদিন গড়ে ৫ জন নারী ধর্ষিতা হয়েছেন দিল্লিতে। ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৫৬৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সংখ্যাটা ৫৭৮-এ পৌঁছেছে।

কয়েক দশক ধরে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা পেশায় নারী সুরক্ষা নিয়ে সরব হয়েছেন দিল্লির বাসিন্দা চিত্রিতা সান্যাল। তিনি বলেন,‘এই ধরনের কিছু উদ্যোগকে নারীদের মনে সাহস জোগানোর পদক্ষেপ বলা যেতে পারে। উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানাতেও এমন কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এটাই সব নয়।

কারণ, এর ফলে শিক্ষিত নারীদের মধ্যে হয়ত সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সেই অর্থে শিক্ষিত নন, এমন নারীদের মনেও ভয় দানা বেঁধে আছে, তারা এই দৌড় দেখে সাহস পাবেন বলে আমার মনে হয় না। এটা একটু শহুরে উদ্যোগ।’