Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জার্মানিতে নতুন শ্রম বাজারের সম্ভাবনা

germanyজার্মানিতে বিদেশি দক্ষ শ্রমিকদের আকৃষ্ট করতে নতুন একটি আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে জার্মানির ইন্টেরিয়র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশের অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের জন্য এই সুযোগ কাজে লাগানো কঠিন, তবে অসম্ভব না। সেক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক তৈরির উদ্যোগ জোরেশোরে নিতে হবে।

মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) শ্রম আইন সংক্রান্ত খসড়াটি তৈরি করে জার্মানির শ্রম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বিলটি নিয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য। মন্ত্রণালয় বলছে, খসড়াটি এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে শুধু কাজের নিয়োগপত্র প্রাপ্ত দক্ষ শ্রমিক সেদেশে ভবিষ্যতে কাজের সুযোগ পাবেন। দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে স্বীকৃত কোনও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

chardike-ad

নতুন খসড়া অনুযায়ী, জার্মানির নাগরিক কিংবা ইউরোপের বাইরের নাগরিকদের প্রাধান্য দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল তা আর নতুন এই বিলটিতে থাকছে না। এছাড়া নতুন এই বিল অনুযায়ী সেবা খাত, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বিদেশি শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে অন্যান্য শিল্পেও বিদেশি শ্রমিকদের প্রবেশের সুযোগ আরও প্রসারিত হবে বলে মনে করছে সেদেশের সরকার।

নতুন বিল অনুযায়ী শেফ, ধাতব শিল্প, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এবং আইটি টেকনিশিয়ানরা চাকরি খোঁজার জন্য ছয় মাসের জন্য জার্মানি প্রবেশের সুযোগ পাবেন। এছাড়া দক্ষ শ্রমিকরা সেদেশে কাজের ফাঁকে আবাসন অনুমতি এবং কাজ খোঁজার জন্য আবাসন অনুমতি উভয়ই পাবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে নিজের আবাসন খরচ এবং ভাষার দক্ষতা দুটাই থাকা বাধ্যতামূলক। জার্মানির ইন্সটিটিউট ফর এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেদেশে এই মুহূর্তে ১২ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।

জার্মানির ইন্টেরিওর মন্ত্রী অরস্ট সিহোফার এক সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জার্মানির অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তারা তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে কর্মী নিয়োগে আগ্রহী।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) গবেষক ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, ‘জার্মানির দেওয়া এই সুযোগ কাজে লাগানো কঠিন। মিরপুরে জার্মান বাংলাদেশ ট্রেনিং সেন্টার আছে। সরকারকে জরুরিভাবে সেটাতে হাত দিতে হবে জার্মানির সহযোগিতার মাধ্যমে। কারণ এই মুহূর্তে আমরা টেকনিক্যাল শ্রমিক সরবরাহ করতে পারবো না। আমরা বহুদিন ধরে বলছি, আমাদের চিন্তাধারা এখন শ্রমিক শ্রেণির সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি। যেধরনের দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা আমাদের প্রয়োজন ছিল তা আমরা করতে পারি নাই। জার্মান বাংলাদেশ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় হয়েছে। এক্ষেত্রে জার্মানিকে আমরা বলতে পারি যে – আপনারা এখানে বিনিয়োগ করেন। আপনারাই এখানে দক্ষ শ্রমিক তৈরি করেন। যেমনটা জাপানের সহায়তায় বাংলাদেশে বর্তমানে হচ্ছে। আমাদের এখানে জার্মানির একটা কারিকুলাম তৈরি করা আছে। এটাকে শুধু আপডেট করতে হবে। এরকম করলে আমরা শিগগরই বাজারটা ধরতে পারবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাইলট প্রকল্প হিসেবে আমাদের যে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলো (টিটিসি) আছে, সেগুলোর সঙ্গে প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের মতো কিছু একটা করা যায় কিনা। আমরা জার্মানির রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে বলতে পারি, যেমনটা জাপান এসে এখানে লোক তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এই মডেলটা আমরা অনুসরণ করতে পারি কিনা তা দেখতে হবে।’

অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মীরা যেই কাজে যাবে সে কাজের দক্ষতা থাকতে হবে। একইভাবে সেসব দেশের ভাষা শিক্ষার ব্যাপারেও জোর দিতে হবে। কারণ এখানে অন্য কোনও ভাষা কাজে আসে না। তাই এই দু’টি জায়গা গুরুত্বপূর্ণ। জার্মানির মতো দেশে কেয়ার গিভার পাঠানোর মতো সুযোগ আছে ভবিষ্যতে। এক্ষেত্রে স্কিল আপগ্রেড করা যায় কীভাবে সে জায়গাটা নিশ্চিত করা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে জার্মান বাংলাদেশ টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার আছে, সেটা বেশ পুরনো। এখানে ভাষা শিক্ষার জন্য প্রস্তুত না যতদূর আমি জানি। আর যেই ট্রেনিংগুলো দেওয়া হয় তা গতানুগতিক ধারার। তাই এই বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি, কারণ জার্মানিতে যেই সেক্টরগুলাতে লোক নেবে সেখানে যে ধরনের স্কিল দরকার হবে সেগুলোর বিপরীতে আমাদের যেই প্রশিক্ষণগুলো দরকার সেগুলো আপগ্রেড করতে হবে। তাদের যে কারিকুলাম আছে, যন্ত্রপাতি আছে সেগুলো বেশ পুরানো। এগুলো আপগ্রেডের দিকে নজর দিতে হবে।’

সৌজন্যে- বাংলা ট্রিবিউন