Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে নারীর কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দিচ্ছে দ. কোরিয়া

সিউল, ৭ফেব্রুয়ারি, ২০১৪:

বয়স্ক জনগোষ্ঠী বাড়ায় দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কিছুদিনের মধ্যেই কমে আসবে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)।

chardike-ad

অবশ্য কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে পারলে অর্থনীতিতে ১ শতাংশ বাড়তি প্রবৃদ্ধি যোগ হওয়ার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি। দেশটির প্রধান নারী প্রেসিডেন্ট পার্ক কুন হে এ বিষয়গুলো বিবেচনা করছেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে নিজের মেয়াদ শেষের আগেই নারী কর্মসংস্থান ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ‘নেম অ্যান্ড শেম’ নামের এক বিশেষ পদক্ষেপও নিতে যাচ্ছেন তিনি। খবর ব্লুমবার্গের।

imagesসম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার ছয়টি মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নেম অ্যান্ড শেম’ পদক্ষেপের আওতায় কমপক্ষে ৫০০ কর্মী আছে এবং যাদের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশ টানা তিন বছর সংশ্লিষ্ট খাতের গড়ের ৭০ শতাংশের নিচে, তাদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। এছাড়া যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে ব্যর্থ, তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেবে সরকার।

মন্ত্রীদের এ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘নারী জীবনের প্রতিটি ধাপে সহায়ক নীতিমালা নেয়া হবে। আমরা এমন একটা দেশ গড়তে চাই, যেখানে সন্তানকে বড় করার জন্য নারীকে কাজ ছাড়তে হবে না।’

গত মাসে সিউলে এক সাক্ষাত্কারে বয়স্ক জনগোষ্ঠী দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য হুমকি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নারী কর্মসংস্থানের হার ৬১ দশমিক ৯ শতাংশে নিয়ে আসা হবে। বর্তমানে যা ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া নারীদের জন্য ১৬ লাখ ৫০ হাজার অতিরিক্ত কর্মস্থান তৈরির লক্ষ্য নেয়া হয়েছে।

কর্মসংস্থানে পুরুষদের আধিপত্য বিষয়ে দেশটির লিঙ্গ সমতা বিষয়ক মন্ত্রী চো ইয়ুন সুন বলেন, উচ্চ শিক্ষিত নারীরা, যারা বেশ ভালো বেতনে চাকরি করছেন, তারা যখন ৩০ বছরে পা রাখেন, তাদের নিয়োগের হার ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে। কাজেই নারীরা যাতে কাজের পাশাপাশি তাদের শিশুদের যত্ন নিতে পারে সেদিকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এছাড়া দেখা যায়, পারিবারিক ব্যবসায়িক কোম্পানিগুলো পুরুষের নেতৃত্বে থাকে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন কোম্পানিতে ৩৭ শতাংশ নারী কর্মী থাকলেও ব্যবস্থাপকের মতো পদগুলোয় আছেন মাত্র ১৭ শতাংশ নারী। পরিচালক পদে এ সংখ্যা হাতেগোনা। ম্যাক কিনসে অ্যান্ড কোংয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১১ সালে পরিচালনা পর্ষদে মাত্র ১ শতাংশ নারী রয়েছেন।

এদিকে কোরিয়া সরকার নারীদের জন্য কর্মঘণ্টা কমানো, শিশু পরিচর্যা কর্মসূচি বাড়ানোর পাশাপাশি যারা পুনরায় কর্মজীবনে প্রবেশ করতে চান, তাদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া ২০১৭ সালের মধ্যে এক লাখ দক্ষতাসম্পন্ন নারীর ডাটাবেজ তৈরির পরিকল্পনা করছে সরকার। সরকারি-বেসরকারি সব খাতে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে নারী-পুরুষে সমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে তারা।

এ প্রসঙ্গে চো আরো বলেন, যেসব কোম্পানিতে ৫০০ কর্মী অথবা ৩০০ নারী কর্মী আছেন, তাদের কর্মক্ষেত্রে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র রাখার নির্দেশ আছে। তবে মাত্র ৪০ শতাংশ কোম্পানি এ নির্দেশ মানে। ২০১৭ সালের মধ্যে এ হার ৭০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। পুরুষের আধিপত্যের যে সংস্কৃতি এত দিন চলে আসছে, তা মুহূর্তেই বন্ধ করা যাবে না বলে মনে করেন কোরিয়ার ওয়ার্কিংমাম ইনস্টিটিউটের প্রধান লি সু ইয়ুন। বিশেষ করে বড় কোম্পানিগুলোয় তা বাস্তবায়ন করা আরো কঠিন।

যদিও নীতিনির্ধারকরা দেখছেন কর্মক্ষেত্রে সমতা বাড়ানো না গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি থামানো যাবে না। ব্যাংক অব কোরিয়া সাম্প্রতিক এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, জিডিপি ৩ দশমিক ৮ এবং ২০১৫ নাগাদ ৪ শতাংশ হবে। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমে আসায় এ শ্লথগতি দেখা যাবে। ওইসিডির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা দেশটিতে কমতে থাকবে।