মোঃ মহিবুল্লাহ, সিউল, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪:
কোরিয়ান নাগরিকদের মাঝে ভিনদেশী নারী/পুরুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানাবিধ নাগরিক সমস্যা। ফলে দেশটির নীতিনির্ধারকদেরকে নাগরিকত্বের নীতিমালা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে নতুন করে। কোরিয়া সরকার ইতোমধ্যেই বিদেশী স্বামী/স্ত্রীদের ভিসা প্রদানে নতুন নিয়ম প্রণয়ন করেছে। চলতি বছরের পয়লা এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন ভিসা আইনে গুরুত্ব পাবে সংশ্লিষ্ট কোরিয়ান নাগরিকের আর্থিক অবস্থা ও তাঁর বিদেশী সঙ্গী/সঙ্গিনীর কোরিয়ান ভাষায় দক্ষতা।
সহজ কথায়, কোন বিদেশী নারী/পুরুষ তাঁর কোরিয়ান স্বামী/স্ত্রীর সাথে কোরিয়ায় বসবাসের জন্য এফ-৬ ভিসার আবেদন করলে তাঁকে অবশ্যই কোরিয়ান ইন্সটিটিউট ফর কারিকুলাম এন্ড ইভালুয়েশানের কোরিয়ান ভাষায় দক্ষতার পরীক্ষা ন্যূনতম নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে যারা বিদেশে কোরিয়ান সরকারের অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কোরিয়ান ভাষার কোর্স সম্পন্ন করেছেন তাঁদেরকে নতুন করে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে না। এছাড়া যেসব অভিবাসী কোরিয়ায় অন্তত এক বছর থেকেছেন কিংবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরিয়ান ভাষা নিয়ে পড়াশুনা করেছেন তাঁরাও এই বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই পাবেন।
নতুন ভিসা আইনের আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ দিক কোরিয়ান সঙ্গী/সঙ্গিনীর রোজগার। ভিনদেশী জীবনসঙ্গীকে নিয়ে কোরিয়ায় থাকতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কোরিয়ানের বার্ষিক আয় হতে হবে নিদেনপক্ষে ১ কোটি ৪৮ লক্ষ উওন। বিদেশী সঙ্গী/সঙ্গিনী কিংবা কোরিয়ান নাগরিকের পারিবারিক উপার্জন মিলিয়েও উল্লেখিত ন্যূনতম আয় দেখাতে পারলে ভিসা মিলে যাবে।
আন্তর্জাতিক কিংবা মিশ্র সংস্কৃতির পরিবারগুলোর সমস্যাবলি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ভাষাগত যোগাযোগ ও আর্থিক অবস্থাই এসব পরিবারের টিকে থাকা না থাকার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই এই ইস্যু দুটোকে অগ্রাধিকার দিয়েই নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করলো আইন মন্ত্রণালয়।
কোরিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান বলছে ১৯৯০ সালে কোরিয়ানদের বিদেশী বিয়ের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৭১০। আর২০১২ সালে এ অংক দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ২২৪-এ। এদের মধ্যে কোরিয়ান পুরুষের সংখ্যাই বেশী যারা ভিয়েতনাম, চীন, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া ও উজবেকিসস্তানের নারীদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছেন।
তবে এ ধরনের পরিবারগুলোতে বিচ্ছেদের হারও বাড়ছে আশংকাজনক হারে। ২০০০ সালে কোরিয়ায় মিশ্র সংস্কৃতির পারিবারিক বিচ্ছেদের ঘটনা ছিল ১ হাজার ৭৪৪টি। ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৮৮৭। ২০১০ সালের এক সরকারী সমীক্ষায় ৭০.৪ শতাংশ আন্তর্জাতিক পরিবারে গৃহবিবাদের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। কোরিয়ায় ভিন্ন সংস্কৃতির গাঁটছড়াগুলোর গড় বয়স ৫.৩ বছর যেখানে কোরিয়ানদের সাধারণ বৈবাহিক সম্পর্ক টেকে গড়ে ১৫ বছর।
মিশ্র সংস্কৃতির দম্পতি ও তাঁদের পরিবার সবচেয়ে বেশী যে সমস্যায় ভোগে সেটি ভাষা সমস্যা। কর্তৃপক্ষের আশা ভিনদেশী সঙ্গী/সঙ্গিনীর কোরিয়ান ভাষায় ন্যূনতম দক্ষতা এসব পরিবারের স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। নতুন ভিসা আইন অভিবাসী সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে বাড়তে থাকা ক্রমবর্ধমান অপরাধ ও প্রতারণা নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।