Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পদোন্নতি বনাম মাথার অবনতি – নাকি শুভঙ্করের ফাকি?

aniruddha
লেখক

হুমায়ুন আজাদের বিখ্যাত পদোন্নতি বনাম মাথার অবনতি বিতর্কের মধ্যেই আমরা এখনো ঘুরপাক খাচ্ছি। কিন্তু আমরা হয়তো এখনো জানি নাহ কোনটা আমাদের জন্য জরুরি? কয়েকটি বিষয় একটু নজরে যদি আনি……

১। হাজার হাজার এ প্লাস ধারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করছে, রেজাল্টের সাথে ভাইবা পারফর্মেন্স যাচ্ছে নাহ। তাহলে সমস্যা কোথায়? সিস্টেম রিশেপিং দরকার? আচ্ছা ধরে নিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেলো, সমস্যা দেখা গেলো আরো বাড়লো, সেই এ প্লাস ধারি ছাত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল করতে পারছে নাহ। কেনো? এই যে পদোন্নতি ঠিকই হচ্ছে কিন্তু মাথার অবনতি হয়ে যাচ্ছে।

chardike-ad

২। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন চলছে শো অফ! কাজের কাজ কি হচ্ছে? একাডেমিক কারিকুলাম আপগ্রেড হচ্ছে নাহ, সিলেবাস আপগ্রেড হচ্ছে নাহ। কেনো? বিদেশ এর অনেক ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ডিগ্রিধারি শিক্ষক ও পারছেন নাহ? সমস্যা হলো একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং এ যারা থাকেন সবাই সেখানে সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স এ ভোগেন, তাই ফলাফল হচ্ছে একটি হাইব্রিড সিলেবাস ও একাডেমিক সিস্টেম। আগেই কেনো ধরে নেই যে, একজন এসিসটেন্ট/এসোসিয়েট প্রফেসর কোন সময় সম্মানিত প্রফেসরবৃন্দের চেয়ে ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন নাহ? সত্যিকার ভাবেই যদি একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক কমিশন “একাডেমিক এক্রেডিটেশন”
করেন তাহলেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সত্যিকার অবস্থা টা জানা যাবে। আশায় রইলাম সেই দিনের??

৩। “ব্রেইন ড্রেইন বনাম ব্রেইন গেইন” নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে দেশের বাইরে বাংলাদেশি ট্যালেন্সি ঠিকই প্রকাশিত হচ্ছে কিন্তু আমরা কেনো দেশে সেটা কে বিকশিত করতে পারছি নাহ? অনেকেই ঢালাও দোষ দিচ্ছেন দেশপ্রেম নাই, কিংবা কেউ বলছেন যে দেশে ডিপ্রাইভ হচ্ছে তাই আর দেশে আসতে চায় নাহ!! তাহলে কি আমাদের এই বিষয় টা একবার ভাবা উচিত নাহ? হোক নাহ আর একবার ব্রেইন গেইন
ক্যাম্পেইন, যেমন চীন করছে।

৪। সবচেয়ে বড় যে হা হুতাশ যেটা তা হলো বিশ্বের ৫০০ শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে বাংলাদেশী কোন বিশ্ববিদ্যালয় নাই!! মতান্তরে ১০০০ এর মধ্যেও নাই। কিন্তু প্রতিবছর ই কোন না কোন বাংলাদেশী প্রতিভা বিশ্বের সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়েই সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন। সাথে সাথে পাবলিকেশন নিয়ে কথা হচ্ছে। সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ এর মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য ভালো সাইন্টিফিক পাবলিকেশন কঠিন, কারন এখন সাইন্টিফিক পাব্লিশার গুলাও প্রিভিলেজড দেশ ও প্রতিষ্ঠান কে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু যারা বাংলাদেশে জব এফিলিয়েশন রেখে আসছেন তাঁরা তাদের পাব্লিকেশন এ ডাবল এফিলিয়েশন রাখলে কিন্তু বাংলাদেশি এফিলিয়েশন এ অনেক পাবলিকেশন সম্ভব। আর এখন মনে হয় সংখ্যার দিকে নজর না দিয়ে একটু কোয়ালিটি প্রতিষ্ঠান এর দিকে নজর দেয়া উচিত। কষ্টের বিষয় হচ্ছে যে এখনো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মেজর টেক্সট বুক/রেফারেন্স বুক ইন্ডিয়ান অথর দের আমাদের কত এমিনেন্ট প্রফেসর রয়েছেন কিন্তু কেনো এই বিষয়ে একটু নজর দিচ্ছেন নাহ?

৫। সর্বশেষ যেটা চিন্তার বিষয় তা হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সম্মানিত শিক্ষকগন এখন পার্ট টাইম শিক্ষক আর ফুল টাইম রাজনীতিবিদ। শিক্ষকবৃন্দ রাজনৈতিক সচেতন থাকবেন কিন্তু তাই বলে শিক্ষকতা বাদ দিয়ে নয়? শিক্ষকগন কেনো রাজনৈতিক ঝগড়া করবেন এবং সেটা নিয়ে মিডিয়া তে মুখরোচক গল্প তৈরি হবে? শিক্ষকদের রাজনৈতিক পছন্দ অপছন্দ থাকতেই পারে কিন্তু তাই বলে শিক্ষকতা কে ভুলে নয়? একজন শিক্ষক হবেন ছাত্রের জন্য আদর্শ, তিনি বাণী প্রদান করবেন, তিনি কোন দিন ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সির জন্য লড়াই করবেন নাহ। তাহলেই তো রাষ্ট্রযন্ত্র শিক্ষকদের কে গুরুর আসনে স্থান দিবেন।

সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ আসুন আমরা পদোন্নতির জন্য মাথার অবনতি না করি! বাংলাদেশ চাইলেই ঘুরে দাড়াতে পারে, তাঁর প্রমান অনেকবার আমরা দিয়েছি। আর শুভঙ্করের ফাঁকি নয়, এবার সত্যিকার ভাবেই ঘুরে দাঁড়াবে প্রিয় স্বদেশ।

অনিরুদ্ধ সরকার, শিক্ষক, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ (পি এইচ ডি গবেষক, কিয়ংপুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, দক্ষিন কোরিয়া)