পদ্মা বহুমুখী সেতুর পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীতে সেতু ভবনের মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন) মো. রেজাউল হায়দার এবং কেইসির পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিন ইয়ং সুক নিজ নিজ পক্ষে সই করেন।
সমঝোতা স্মারক সই শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের জানান, স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কেইসির একটি কারিগরি দল পদ্মা বহুমুখী সেতু এলাকা পরিদর্শন করে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি, প্রয়োজনীয় জনবল ইত্যাদি সংবলিত একটি কারিগরি প্রস্তাব দাখিল করবে। কারিগরি প্রস্তাব যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন এবং সেতু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ–সংক্রান্ত ম্যানুয়েল অনুযায়ী কেইসি আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করবে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও কেইসির মধ্যে নেগোসিয়েশন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদনের পর উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
ওবায়দুল কাদের জানান, কেইসি পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) পদ্ধতি চালু করবে। ইটিসি লেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো যানবাহনকে টোল বুথে থামতে হবে না। কেইসি পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে পারফরম্যান্স বেইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করবে। এ পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও এ–সংক্রান্ত বাজেট প্রণয়নে সহায়ক হবে।
সেতুমন্ত্রী জানান, কেইসি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ট্রাফিক ইনফরমেশন অ্যাপ্লিকেশন চালু করবে। এ পদ্ধতিতে প্রতি মুহূর্তে সড়ক, সেতু বা এর আওতাধীন অন্য যেকোনো অবস্থানের বিদ্যমান যানবাহন–সংক্রান্ত তথ্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল, বেতার বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে জানা যাবে। কেইসি, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষসহ টোল আদায় করে এ ধরনের সংস্থাগুলোর জনবলকে প্রশিক্ষিত করবে।
ওবায়দুল কাদের জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর সব কটি পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি শতকরা ৮৩ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি শতকরা ৭৩ দশমিক ৩৭ ভাগ। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি শতকরা ৬২ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি শতকরা ৪৮ দশমিক ৪০ ভাগ। সংযোগ সড়কের অগ্রগতি শতকরা ১০০ ভাগ। তিনি বলেন, প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৭৩ দশমিক ৫০ ভাগ। মোট পিয়ার ৪২টি। এর মধ্যে ৩১টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে, বাকি ১১টির কাজ চলমান আছে এবং এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।
সেতুমন্ত্রী জানান, সেতুর মোট ৪২টি স্প্যানের মধ্যে মাওয়া সাইটে এ পর্যন্ত স্প্যান এসেছে ২৮টি। এর মধ্যে ১৪টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এখন ২ দশমিক ১ কিলোমিটার দৃশ্যমান। এ ছাড়া অবশিষ্ট স্প্যানগুলোর কাজ চীনে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, মাওয়া ও জাজিরায় পাইলিং এবং পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে পিয়ার ক্যাপ এর কাজ শেষ পর্যায়ে এবং গার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে। মোট ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন কাজের মধ্যে ৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ হয়েছে। রেলওয়ে স্ল্যাবের জন্য মোট ২ হাজার ৯৫৯টি প্রি-কাস্ট স্ল্যাব এর প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮১৯টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি স্ল্যাব তৈরির কাজ এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। রোডওয়ে স্ল্যাবের জন্য মোট ২ হাজার ৯১৭টি প্রি-কাস্ট রোডওয়ে ডেকস্ল্যাবের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৭০টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি স্ল্যাব তৈরির কাজ চলমান আছে।
এ সময় সেতু বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস, ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সৌজন্যে- প্রথম আলো