বৃহস্পতিবার । ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯:১৮ অপরাহ্ন
শেয়ার

প্রবাস জীবনের ইতি টেনেও পরিবারের কাছে ফেরা হলো না কবিরের


kobir

সংগৃহীত ছবি

দীর্ঘ সাত বছরের প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলের কাছে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কবির হোসেন। আর মাত্র ১৫ দিন পরই দেশে ফেরার কথা ছিল তার। সব আয়োজনও প্রায় শেষ। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তির খেলায় প্রিয়জনদের বুকে আর ফেরা হলো না তার। মালয়েশিয়ায় দুর্বৃত্তদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি; নিভে গেছে তার দেশে ফেরার সব স্বপ্ন।

নিহত কবির হোসেন (৪৫) নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কয়রাগ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের সচ্ছলতার আশায় সাত বছর আগে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মালয়েশিয়ার চামান্ডা উতিরাম এলাকায় ‘কে সেল’ নামের একটি কারখানায় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করতেন কবির। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে কারখানার দ্বিতীয় গেটে দায়িত্ব পালনকালে দুর্বৃত্তদের হামলায় তিনি নিহত হন। রাত প্রায় ৩টার দিকে তার মৃত্যুর খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।

কবিরের স্ত্রী আমেনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “দেশে ফিরে স্বামী-সন্তান নিয়ে শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখতেন কবির। ঘটনার রাতে রাত ৯টার দিকে ফোন করেছিলেন। আমার বুকে ব্যথা থাকায় বেশি কথা বলতে পারিনি। তিনি বলেছিলেন পরে আবার ফোন দেবেন। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। শেষবার মন খুলে কথা বলতে না পারার কষ্ট আমাকে সারাক্ষণ পোড়াচ্ছে। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।”

বাবার ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছিল কবিরের একমাত্র ছেলে সোহান হোসেন। বাবার মৃত্যুর খবরে তার স্বপ্ন এখন ভেঙে চুরমার।

সোহান বলেন, “বাবা বলেছিলেন সামনের মাসেই দেশে আসবেন। আমরা অনেক পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। সামনের গেটের দায়িত্বে থাকা কেউ মারা যায়নি, অথচ দ্বিতীয় গেটে থাকা আমার বাবাকে হত্যা করা হলো। আমি এই ঘটনার বিচার চাই এবং সরকারের কাছে অনুরোধ, বাবার মরদেহ দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হোক।”

জানা গেছে, দুই বছর আগে একবার ছুটিতে দেশে এসেছিলেন কবির হোসেন। ছুটি শেষে জীবিকার তাগিদে আবার মালয়েশিয়ায় ফিরে যান। আগামী মাসেই তার স্থায়ীভাবে দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এবারের ফেরা হলো কফিনবন্দী দেহ হয়ে।

কবির হোসেনের মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড় জমেছে। পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। মরদেহ দেশে আনা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন পরিবারের পাশে থাকবে।