Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চার মাস ধরে নামাজ হয় না কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় মসজিদে

kashmir-masjid‘কোনো ছবি তুলবেন না। চলে যান। যদি তারা বুঝতে পারে যে, আপনি সাংবাদিক তাহলে তারা আপনাকে মারধর করবে।’ এই শব্দগুলো কাশ্মীরের জামা মসজিদের বাইরের দেয়ালের লেখা আছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মূল শহর শ্রীনগরে অবস্থিত উপত্যকার সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি।

উপরে উল্লিখিত ‘তারা’ বলতে কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় ৬০০ বছরের পুরনো এই মসজিদের চারপাশে মোতায়েন আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কথা বলা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট যখন বিতর্কিত এই উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা খর্ব করে রাজ্যটিকে দিখণ্ডিত করা হয় তখন থেকেই প্রসিদ্ধ এই মসজিদটি তালাবদ্ধ।

chardike-ad

অক্টোবরের শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে জম্মু-কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার আইন কার্যকর হয়। ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলটিতে ধর্মীয় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। একইসঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মসজিদে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, যেগুলোতে মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতো।

গত শুক্রবারও শ্রীনগরের জামা মসজিদের চারপাশে গোটা উপত্যকা থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হন। কিন্তু গত ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১৭ শুক্রবার সেখানে জুমার নামাজ পড়তে পারেনি সেখানকার মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা। মানুষের জমায়েত হলেও নিরাপত্তা বাহিনী তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

মসজিদটির পাশের একটি এলাকা হলো নওহাট্টা। সেখানকার বাসিন্দা ২৬ বছর বয়সূ খালিদ বশির বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের ধর্মীয় এই জমায়েতে কাশ্মীরের অংশগ্রহণকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। প্রতি মুহূর্তে পরিস্থিতি আরও খারপ হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই স্থানটির মানুষকে ধর্ম পালনেও বাঁধা দেয়া হচ্ছে।’

উপত্যকার ওই মুসলিম বাসিন্দা আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের ধর্ম পালনের অধিকার তো সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। কিন্তু কাশ্মীরের সংবিধানের এমন লঙ্ঘন বারবার হচ্ছে।’ সৈয়দ আহমেদ নকশাবন্দি নামের এক ব্যক্তি ১৯৬৩ সাল থেকে জামা মসজিদের ইমাম হিসেবে নিয়োজিত।

নকশাবন্দি নামের ওই ইমাম কাশ্মীর উপত্যকায় ‘ইমাম-ই-হাই’ নামে পরিচিত। তিনি বললেন, অবরুদ্ধ করার মাধ্যমে আমাদের এই অঞ্চলে জুলুম চালানো হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট থেকে জামা মসজিদ বন্ধ থাকায় সেখান থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের এক মসজিদে নামাজ আদায় করতে যেতে হয় ৮০ বছর বয়সী এই ইমামকে।

ইমাম আহমেদ নকশাবন্দি বলেন, ‘জামা মসজিদে নামাজ আদায়ের মধ্যে যে এক ধরনের তৃপ্তি আছে তা অন্য কোথাও পাওয়া অসম্বভ। সেখানে নামাজ আদায় করতে না পেরে আমার খারাপ লাগে।’ মসজিদে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি মানুষের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জামা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য সৈয়দ রহমান শামস বলেন, এবারই প্রথম নয় এর আগে অনেকবার আমাদের এখানে নামাজ আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালে টানা ১৬ শুক্রবার মসজিদে নামাজ আদায় বন্ধ রাখতে তালাবদ্ধ করে রেখেছিল সরকারি কর্তৃপক্ষ। সেই রেকর্ড এবার ভাঙলো।

দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় অবস্থিত বাইতুল মোকাররম মসজিদের ক্ষেত্রে একই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আশেক ইমতিয়াজ নামে ২১ বছরের এক তরুণ জানায়, আগস্টে কারফিউ জারির পর আমাদেরকে তো বাড়ির বাইরে যেতে দেয়া হয়নি তাহলে কীভাবে আমরা মসিজদে যাবো।’

গত মাসে ভারত সরকার কাশ্মীরের দরগাদ হযরতবালেও অনাকঙ্খিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উপত্যকার অন্যতম একটি মুসলিম প্রার্থনালয় এটি। শ্রীনগরের নামকরা ডাল লেকে দরগাহটি অবস্থিত। সেখানকার মুসলিম ধর্মাবলম্বীর বিশ্বাস করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) চুল রাখা আছে সেখানে।

গত আগস্টের পর থেকে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাসহ পাঁচ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করে রেখেছে ভারত সরকার। গ্রেফতার এসব মানুষের মধ্যে অনেক ইমাম ও আল্লামাও রয়েছেন। কাশ্মীরভিত্তিক মানবাধিকারকর্মী খুররম পারভিজ আলজাজিরাকে বলেন, এটা নতুন নয়। গত আগস্ট থেকে কাশ্মীরের মানুষ এটা দেখে আসছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির ধর্মীয় আচার পালন তার মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কিন্ত ১৯৯০ কিংবা তারও আগে থেকে প্রতিনিয়ত কাশ্মীরের মানুষের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জাতিসংঘসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এর নিন্দা জানালেও তা কোনো পার্থক্য তৈরি করতে পারেনি।