যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে বের হয়, তারা কী করবে আমরা জানি

 

chardike-ad

১০০ গাড়ি নিয়ে যারা নির্বাচনী প্রচারণা করতে বের হয়, তারা কী করবে তা জানেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ মঙ্গলবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি আয়োজিত রাজধানী রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম গতকাল সোমবার নিজ জেলা পঞ্চগড়ে শতাধিক গাড়ির (কার-মাইক্রোবাস) বহর নিয়ে পাঁচটি উপজেলা সফর করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রচার হয়।

বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনাদের ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আপনাদের ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতের বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ । যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পেইন করতে যায় তারা কী করবে সেটা আমরা ভালো বুঝি। বিএনপি জনগণের সঙ্গে আছে অতীতে ছিল থাকবে এবং বিএনপি অবশ্যই তারা জয়যুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ’।

মুক্তিযুদ্ধকে অনেকেই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২৫ মার্চের এই কালো দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। হত্যা করেছে লাখো নিরীহ মানুষকে। কিন্তু পাকিস্তান এখনও ক্ষমা চায়নি। এই কথাগুলো কেন বলছি কারণ এখন পরিবেশ তৈরি হয়েছে—কিছু কিছু মানুষ, কিছু কিছু দল, কিছু কিছু গোষ্ঠী একটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে ৭১ কোনো ঘটনাই ছিল না। তারা বরং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে। তাদের নাম বলতে চাই না। এখন তারা আবার গলা ফুলিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে। ইতিহাস তো ইতিহাসই। ইতিহাস কেউ বিকৃত করতে পারবে না।

তিনি বলেন, ‘এই রাতেই আমাদের সেই বীর নেতা যাকে বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অখ্যাত মেজর, সেইদিন তিনি সেই কালুরঘাট চট্টগ্রাম থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তিনি যুদ্ধ শুরু করেছেন। আর তাদের নেতা যাকে আমরা অসংবাদিত বীর নেতা হিসেবে নিয়েছিলাম, যার নির্দেশে তখন বাংলাদেশ চলত, তৎকালীন পাকিস্তান চলত, তিনি রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি চলে গিয়েছিলেন’।

ফখরুল বলেন, প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা বেগম খালেদা জিয়া। আজকালকার তরুণরা অনেক কিছুই জানে না। তারা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে পর্যন্ত কথা বলে, ধিক্কার তাদের!

‘তারা নিজের ইতিহাস জানে না তারা জনগণের জাতির কোনো কল্যাণও করতে পারবে না, ইতিহাস জানতে হবে’, যোগ করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জনগণকে অরক্ষিত রেখে আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন—এমনটি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের পরিস্থিতির সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে। যখন জনগণ তাদের পেছনে রুদ্রভাবে ছুটে গেছে, শেখ হাসিনাও তার দলের নেতাকর্মীদের ফেলে রেখে চুপচাপ হেলিকপ্টারে করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যে শাসন চালিয়েছিল তা ছিল দুঃশাসনের কাল। তখন ৩০ হাজার সৈনিক, যুবক ও ছাত্র-ছাত্রী হত্যার শিকার হয়। ফখরুল বলেন, ‘তাদের শাসন ছিল একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, এবং সেই সময় গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল’।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি, বরং সবসময় গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। তাই, আমরা আর কখনোই তাদের গণতান্ত্রিক সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি না।

নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেছি যে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ, নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদেরকে গণতন্ত্রের পথে এগোতে হবে—এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার একমাত্র পথ। এই গণতন্ত্র ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা জনগণের কল্যাণ করতে সক্ষম নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আজকে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়, অন্য কাউকে সাহায্য করা যায় এবং দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু নতুন কুতুব আবির্ভূত হয়েছে, যারা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়, তা আমি জানি না। তাদের ভাষা, তাদের বাক্য, তাদের কথা, তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণ বাংলাদেশকে একটা রাজ্যের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তারা গণতন্ত্রের দিকে নিতে চায় না’।