Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের বিশাল বিজয়

তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়েব এরদোগান বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। এরদোগান পেয়েছেন ৫৩.২৩ শতাংশ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওআইসির সাবেক মহাসচিব একমেলেদ্দিন ইহসানোগলু পেয়েছেন ৩৭.৭২ শতাংশ ভোট। অপর প্রার্থী কুর্দি বংশোদ্ভূত সালাহউদ্দিন দেমিরতাস পেয়েছেন ৯.১৫ শতাংশ ভোট।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের ৫০ শতাংশ পেলেই তার বিজয় নিশ্চিত হয়ে যাবে। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৫ কোটি ৫৭ লাখ এক হাজার ৭১৯ জন। ভোট দিয়েছেন তিন কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ১১৮ জন। ভোট প্রদানের হার ৭৬.০৬ শতাংশ। তুরস্কের ইতিহাসে এবারই প্রথম জনগণের সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। ২০০৭ সালে দেশের সংবিধান সংশোধনীর সাথে সামঞ্জস্য রেখে রোববার এ ঐতিহাসিক নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।

chardike-ad

erdogan 05এরদোগান রোববার আঙ্কারার উদ্দেশে ইস্তাম্বুল ত্যাগ করার আগে নগরীতে ক্ষমতাসীন একেপির নির্বাচন সমন্বয় কেন্দ্রে নেতাকর্মীদের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন এবং পরে নির্বাচনী বিজয়ের জন্য পঞ্চদশ শতকে নির্মিত ঐতিহাসিক ইয়ুপ সুলতান মসজিদে শোকরানা নামাজ আদায় করেন। এরপর তিনি আঙ্কারার উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে তিনি একেপি সদর দফতরের ব্যালকনি থেকে দলের নেতাকর্মী ও জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

এ নির্বাচনের মাধ্যমে এরদোগান তার ১০ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনের মেয়াদ আরো বাড়াতে চান। নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রক্ষণশীল শিক্ষাবিদ ও কূটনীতিক একমেলদিন ইহসানোগলু। তিনি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব ছিলেন।

দু’টি প্রধান বিরোধী দল বামঘেঁষা সেকুলার দল রিপাবলিক্যান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) ও ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি (এমএইচপি) এবং তিনটি ছোট দল তাকে সমর্থন দেয়। তবে তুরস্কের জনগণের কাছে তিনি অনেকটা অপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তুরস্কের সংখ্যালঘু কুর্দি ব্যক্তিত্ব সালাহউদ্দিন দেমিরতাস হলেন এ নির্বাচনে তৃতীয় প্রার্থী। পিপলস ডেমোক্র্যাসি পার্টি তাকে সমর্থন করে।

 স্থানীয় নির্বাচনে একে পার্টির জয়

স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাত্র তিন মাস পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ওই নির্বাচনে এরদোগানের একে পার্টি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ, সরকারবিরোধী ঘন ঘন বিক্ষোভ এবং সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এতে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা মোটেই কমেনি।

তুরস্কের রাজনীতিতে প্রেসিডেন্টের পদটি প্রধানত অনুষ্ঠানসর্বস্ব। তবে এরদোগান জয়ী হলে তাতে পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণাকালে এরদোগান অবকাঠামো প্রকল্প, পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনৈতিক সংস্কার ও প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির নতুন সংবিধান নিয়ে কথা বলেছেন, যাতে প্রেসিডেন্ট আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন। এর বিপরীতে ইহসানোগলু ‘ঐক্য’ ও ‘নিরপেক্ষতার’ ওপর জোর দিয়েছেন। যাতে তার অধিকতর ঐতিহ্যবাহী ও অসক্রিয় প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।

দীর্ঘকাল ধরে তুরস্কের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অস্থিরতা চলার পর ২০০১ সালে এরদোগানের প্রতিষ্ঠিত একে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।

এরদোগান ১৯৫৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইস্তাম্বুলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করেন। ১৯৭৩ সালে ইস্তাম্বুল ইমাম খতিব মাদরাসা থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৮১ তুরস্কের বিখ্যাত মারমারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও ব্যবসার উপর ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরদোগান স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতি শুরু করেন, ১৯৭৬ সালে ইস্তাম্বুল ইয়ুথ ফোরামের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং এ পদে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলেন। ১৯৮০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এই ফোরামকেও নিষিদ্ধ করা হয়।

১৯৮৩ সালে রাফা পার্টিতে যোগ দেন, ১৯৮৪ সালে রাফা পার্টি বেইলু জেলার সভাপতি নির্বাচিত হন, ১৯৮৫ সালে রাফা পার্টির ইস্তাম্বুলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি নতুন সাংগঠনিক কাঠামো, রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণের প্রতি জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

১৯৮৯ সালে বেইলু জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ স্থানীয় নির্বাচনে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর জন্য একটি কবিতা পাঠ করলে তাকে জেলে পাঠানো হয়।

২০০১ সালের ১৪ আগস্ট রাজনৈতিক বন্ধুদের নিয়ে ‘জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ পার্টি (একেপি) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই পার্টির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ২০০২ সালের ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ২০০৩ সালের ৯ মার্চ আইনি বাধা অপসারণের পর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান।

২০০৩ সালের ১৫ মার্চ রজব তাইয়েব এরদোগান প্রধানমন্ত্রী হন। দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর গতকাল ১০ আগস্ট ২০১৪ জনগণের সরাসরি ভোটে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি বিবাহিত ও চার সন্তানের পিতা। এরদোগান ফুটবল খেলা খুব পছন্দ করেন। তিনি ১৯৬৯-১৯৮২ সাল পর্যন্ত স্থানীয় ফুটবল কাব কাসিম পাশার হয়ে খেলতেন।– ওয়েবসাইট।