Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইবোলাঃ রোগমুক্তিতেও দায়মুক্তি নেই!

চার মাস হয়ে গেল পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই। কলেজে যেতেও বারণ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দূরে সরিয়ে দিয়েছেন প্রিয় প্রেমিক। ঘরবাড়ি, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সব ছেড়ে এখন এক প্রকার নির্বাসিত জীবনই যাপন করছেন কাডিয়াটু ফান্টা, গিনির এক মেডিক্যাল ছাত্রী।

গত মার্চে ইবোলায় আক্রান্ত হন ২৬ বছরের এই তরুণী। কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পরে ঠিকও হয়ে যান। এপ্রিলে সম্পূর্ণ সুস্থতার সনদ নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেও ফান্টাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাননি তাঁর পরিবারের লোকজন। অগত্যা অন্য এক শহরে একা থাকতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু চার মাস পরেও চিত্রটা পাল্টায়নি। আজও তাঁকে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ভয় পায় তাঁর পরিবার।

chardike-ad

ebola_virus_photoরাজধানী কোনাকিরির একটি ক্লিনিকে ইনটার্ন হিসেবে কাজ করতেন ফান্টা। সেই সময় গিনিতে ইবোলার সংক্রমণ কেবল ছড়াতে শুরু করেছে। সদ্য আক্রান্ত এক রোগী আসেন তাঁর কাছে। তখনও এই রোগ নিয়ে সতর্কতা জারি হয়নি। ফলে আর পাঁচটা সাধারণ রোগীর মতোই ফান্টা ওই রোগীরও চিকিৎসা করেন। ব্যস। সেখান থেকে তাঁর শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে ইবোলার সংক্রমণ। “প্রথমে জ্বর, খিঁচুনি। তার পরে রক্ত বমি। আমি ভাবতে পারিনি যে বেঁচে ফিরতে পারব। কারণ সেই সময় এই রোগ হলে আমাদের দেশে কেউই বাঁচছিল না। কিন্তু আমার সৌভাগ্য আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। আর সেটাই কাল হল। এখন আর আমায় কেউ চায় না,” বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন ফান্টা।

যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়েন, সেই গামাল আবদেল নাসের বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ক্লাস করা হচ্ছে না ফান্টার। হাসপাতালের দেওয়া সুস্থতার কাগজ দেখানোর পরও তাঁর নাম নতুন করে ঢোকানো হয়নি শিক্ষার্থীদের তালিকায়। তাঁর আক্ষেপ, “অন্য বন্ধুরা পরীক্ষা দিয়ে নতুন ক্লাসে উঠে গেল। আমাকে তো ওরা পরীক্ষাতেই বসতে দিল না। পুরনো ক্লাসেও যেতে পারছি না।”

শুধু পরিবার আর পড়াশুনাই নয়, ফান্টাকে ছেড়ে গিয়েছে প্রেমও। যাঁকে ফান্টা ভালবাসতেন, সেই প্রেমিকও আর তাঁকে চান না। আগে রোজই এক বার করে দেখা হত। “এখন তো ও আমার ফোনই ধরে না, এতগুলো মাস কেটে যাওয়ার পরেও।” আবেগে বাঁধ দিয়ে নিজেকে স্বান্তনা দিতেই যেন বললেন, “আসলে সবাই ভয় পায়, আমার থেকে তাদের যদি ওই রোগ হয়ে যায়”। এখন তো অর্থেরও বড় অভাব। বাবা-মা ঘরে ব্রাত্য করলেও এত দিন ধরে থাকা-খাওয়ার অর্থটুকু পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু তাতেও টান পড়ছে। ফলে আগামী দিনে কী খাবেন, কোথায় থাকবেন, জানেন না ফান্টা।

তবে এত কিছুর মধ্যেও হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি এই তরুণী। নিজের বাকি জীবনটা অন্যের চিকিৎসাতেই কাটানোর ব্রত তাঁর, “আমি রোগীদের সেবা করতে চাই। এই যে এখনও আমি বেঁচে আছি, কথা বলছি সেটা তো চিকিৎসকদের সেবার জন্যই!” [অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস]