বৃহস্পতিবার । ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক বিজনেস ৮ জুলাই ২০২৫, ৪:৫২ অপরাহ্ন
শেয়ার

ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ঝড়: বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা


ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ঝড়: বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কাযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিশ্ব বাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছেন। নতুন করে ঘোষিত “রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ প্যাকেজ”–এর আওতায় ১৪টি দেশের ওপর ‍২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস ও ইন্দোনেশিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিকারক দেশ।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ— যা দেশের তৈরি পোশাক (RMG), চামড়া, প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানিতে বড় আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

তবে এই পরিস্থিতিতে আরও কঠোর ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান,

“ট্রাম্প একাধিক দেশের সঙ্গে ‘সেরা চুক্তি’ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শুল্ক আরোপে অনড়।”

তিনি আরও বলেন, নতুন চুক্তির সুযোগ এখনও উন্মুক্ত রয়েছে, তবে যদি প্রতিরোধমূলক বা বিকল্প পথ ব্যবহার করা হয়, তাহলে আরও বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে।

কোন কোন দেশ এতে প্রভাবিত হচ্ছে-

চুক্তি না হলে ১ আগস্ট থেকে এসব হার কার্যকর হবে।

বিশ্ববাজারে ইতিমধ্যে এর প্রভাব পরতে শুরু করেছে। এস অ্যান্ড পি ৫০০ (S&P 500) সূচকের ০ দশমিক ৮ শতাংশ পতন হয়েছে — যা গত তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। টয়োটা ও হোন্ডা মোটর–এর মার্কিন শেয়ার ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

বিশ্লেষক ব্রায়ান জ্যাকবসেন (Annex Wealth Management) বলেন,“ট্যারিফের আলোচনা বাজার থেকে আস্থা কেড়ে নিয়েছে।”

বাংলাদেশের জন্য এই শুল্ক নীতির সম্ভাব্য প্রভাব হতে পারে

১. রপ্তানি খাত ঝুঁকির মুখে:

বাংলাদেশের RMG খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমেরিকা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার, যেখানে পোশাক ও হালকা প্রকৌশলপণ্য পাঠানো হয় বিশাল হারে।

২. প্রতিযোগিতা হারানোর আশঙ্কা:

ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ শুল্কে চুক্তি করলেও বাংলাদেশকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতে পারে—যা মূলধারার বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেবে।

৩. কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে ধস:

রপ্তানি কমলে কারখানা বন্ধ, বেকারত্ব বৃদ্ধি, আর্থিক ক্ষতি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ধস দেখা দিতে পারে।

বিজেএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, “যদি আমাদের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক পড়ে, আমরা মার্কেট হারাতে শুরু করব। এটা রপ্তানির জন্য দুর্যোগ।“সরকারকে দ্রুত আলোচনায় যেতে হবে।”

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-এর (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন,“বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দক্ষ কূটনৈতিক প্রস্তুতি প্রয়োজন।”

চুক্তির অগ্রগতি কোথায়?

মাত্র দুটি দেশ (যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনাম) ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ শুল্ক + স্টিল-অ্যালুমিনিয়ামে শুল্কমুক্ত এবং ভিয়েতনাম ২০% শুল্ক সুবিধা পাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভিয়েতনামের পুরো চুক্তি প্রকাশ হয়নি।

এদিকে, ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর জরুরি বৈঠকে বসেছে দক্ষিণ কোরিয়া। বুধবারের মধ্যে চুক্তি করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU)।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন,  ১ আগস্টের আগে চুক্তি না হলে বাংলাদেশের ৩৫% শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্প প্রশাসন আরও দেশকে নোটিশ দিতে চলেছে। এ ধরনের সময়সাপেক্ষ ও জটিল আলোচনা দ্রুত সম্পন্ন করা কঠিন।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন চরম চ্যালেঞ্জের মুখে। এখনই সময় দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সক্রিয় হওয়া, বহুমুখী বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা গ্রহণ, ভ্যালু-এডেড পণ্যে বিনিয়োগ, এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা ত্বরান্বিত করার।

বিশ্ব এখন ট্যারিফ যুদ্ধের নতুন অধ্যায়ের দিকে এগোচ্ছে। সময় থাকতেই প্রস্তুতি না নিলে এর অভিঘাত বহু বছর টিকতে পারে।