বৃহস্পতিবার । ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক বিজনেস ৯ জুলাই ২০২৫, ৪:০৩ অপরাহ্ন
শেয়ার

কপারের দামে ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক ঘোষণা, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা


কপারের দামে ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক ঘোষণা, বিশ্ববাজারে অস্থিরতাহঠাৎ ১০ শতাংশ অস্বাভাবিক উত্থানে প্রতি পাউন্ডে ৫ দশমিক ৬ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে কপারের দাম – যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কপার আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই দেশটির বাজারে কপারের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষকরা তার বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন ধাপ হিসেবে দেখছেন।

খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

এদিকে মঙ্গলবার এক ক্যাবিনেট বৈঠকে ট্রাম্প বলেন,“আজ আমরা কপার করছি।”

তার মন্তব্যের পরপরই কপার ফিউচারের দাম ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ দশমিক ৬৮২ মার্কিন ডলারে পৌঁছায়, যা মার্কিন বাজারে সর্বোচ্চ।

ট্রাম্প আরও বলেন,“আমরা ওষুধ আমদানির ওপরও ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বর্ডার ট্যাক্স বসাবো, তবে সেটা এক বছর বা দেড় বছরের মধ্যে।”

তিনি আরও ঘোষণা দেন যে আগামী বুধবার সকালে ৭টি নতুন দেশের জন্য শুল্কের বিস্তারিত এবং দুপুরে আরও কিছু দেশের জন্য শুল্ক পরিকল্পনা প্রকাশ করবেন।

তবে তৎক্ষণাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে দেখা গেছে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া। লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে (LME) কপার মূল্য প্রথমে ২ দশমিক ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে পরে ৯ হাজার ৬৫৩ ডলার মূল্যে প্রতি টন লেনদেন হয়। মার্কিন বাজারে কপার ব্যবহারে চাহিদা কমে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় বিশ্ববাজারে দাম কমতে শুরু করে ধাতুটির।

যুক্তরাষ্ট্রের কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিক সিএনবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন: “এই মাসের শেষ বা আগস্টের শুরুতেই কপার শুল্ক কার্যকর হতে পারে।”

কপার এমন একটি ধাতু যা ব্যবহৃত হয় গাড়ি উৎপাদনে, ইলেকট্রনিক্স পণ্যে, ডেটা সেন্টার নির্মাণে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তিতে (যেমন সোলার প্যানেল)। অর্থাৎ এই শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে।

বিশ্লেষক জুলিয়াস বিয়ারের নেক্সট জেনারেশন টিমের প্রধান কার্সটেন মেঙ্কে, (Julius Baer) বলেন,“এই শুল্ক আমেরিকার অভ্যন্তরীণভাবে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি করবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এটি ডিফ্লেশনারি (মূল্য হ্রাস) প্রভাব ফেলবে।”

জেফেরিজের প্রফেশনাল স্টক অ্যানালিস্ট ক্রিস্টোফার লাফেমিনা (Jefferies) বলেন,“যুক্তরাষ্ট্রে কপার উত্তোলন, শোধনাগার বা প্রসেসিং-এর যথেষ্ট সক্ষমতা নেই। তাই আমদানি নির্ভরতা বাড়বে, আর শুল্ক মূল্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দাম আরও চড়া হবে।”

ওষুধ ও চিপ আমদানিতেও শুল্কের হুমকি দিয়ে ট্রাম্প বলেন,“যারা আগামী এক বছর বা দেড় বছরে দেশে ওষুধ উৎপাদন শুরু না করবে, তাদের আমদানি করা ওষুধে ২০০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।”

এছাড়া, তিনি মাইক্রোচিপ আমদানিতেও নতুন শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ট্রাম্পের ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন শিল্পখাতের জন্য এটি ব্যয়বহুল হতে পারে। বিশ্ববাজারে কপারসহ অন্যান্য পণ্যের দামে অস্থিরতা বাড়তে পারে।

 

ওষুধ ও চিপ আমদানির ক্ষেত্রেও যদি শুল্ক আরোপ হয়, তা সামগ্রিকভাবে মার্কিন ভোক্তাদের উপর চাপ বাড়াবে এবং গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন হুমকির মুখে পড়বে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের ঘোষণাগুলো শুধু রাজনৈতিক স্টান্ট নয়—বরং তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।