Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশ জুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট: কারণ কি?

biddut_bivrat

ঢাকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করেছে যে বাংলাদেশের সময় সকাল সাড়ে ১১টায় (অর্থাৎ ভারতের সময় সকাল ১১টায়) জাতীয় গ্রিডে ত্রুটি দেখা দেবার ফলেই এই বিপর্যয় ঘটে।

chardike-ad

বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে একাধিক রিপোর্টে বলা হয়, ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে সংযোগস্থলে ওই ত্রুটি থেকেই বিভ্রাটের শুরু। এর আগে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডের প্রধান কর্মকর্তা চৌধুরী আলমগীর হোসেনকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো রিপোর্ট করে, ভারতের একটি সাবস্টেশনের সমস্যার কারণে তার সাথে সংযুক্ত বাংলাদেশের গ্রিডে এই বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে।

কোলকাতায় বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী এ ব্যাপারে ভারতের বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের কাছে খোঁজ নিয়েছেন।

তিনি জানাচ্ছেন, ভারতের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন – শনিবার ভারতীয় সময় ১১টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১১টায়) বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুত সরবরাহের যে ভেড়ামারা-বহরমপুর লাইন রয়েছে – তার একটি লাইন মিনিটখানেকের জন্য ‘ট্রিপ’ করেছিল বা বসে গিয়েছিল।

তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা এটাও নিশ্চিত করেছেন যে লাইন ‘ট্রিপ’ করার সাথে সাথেই দ্বিতীয় আরেকটি লাইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে কোন বিঘ্ন ঘটেনি। ভারতীয় অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত আছে।

কিন্তু ভারতীয় অংশে লাইন ‘ট্রিপ’ করার কারণেই বাংলাদেশ অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে কিনা – তা এখনো স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এখনো নির্দিষ্টভাবে কিছু বলছেন না।

২০০৭ সালে শেষবার বাংলাদেশে যে বড় আকারের বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছিল তখন সরকারের বিদ্যুৎ সচিব ছিলেন ড. ফওজুল করিম খান। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ভেড়ামারা-বহরমপুর লাইনটি দিয়ে বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ আসে তা হঠাৎ ‘ট্রিপ করলে’ বা বন্ধ হয়ে গেলে তার প্রতিক্রিয়ায় যান্ত্রিক নিরাপত্তার কারণেই অনেক সময় আপনা আপনি পুরো গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং আজকেও সেটাই হয়ে থাকতে পারে।

‘তা না হলে হয়তো অন্য কোন পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেছে বা ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার ফেল করেছে – এ ছাড়া আর কোন ব্যাখ্যা নেই” – বলেন ড. খান।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল-বেরুনি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, কোন গাফিলতির কারণে এই বিপর্যয় ঘটেনি, কারিগরী ত্রুটিই এর জন্য দায়ী।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, জাতীয় গ্রিডে কারিগরী সমস্যার কারণে পুরো দেশ জুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। সমস্যাটি ঠিক কি তা মি. হামিদ সুনির্দিষ্টভাবে না জানালেও বলেছেন, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদের রিপোর্ট পেলেই আসলে কি ঘটেছে তা জানা যাবে।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয় নি: ভারতীয় কর্মকর্তা
কোলকাতা থেকে অমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যে পাওয়ার গ্রীড কর্পোরেশন – তার চেয়ারম্যান আর এন নায়েক বিবিসিকে জানিয়েছেন যে তাঁদের লাইনে কোনও সমস্যা হয় নি।

তবে ভারতের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন পরিচালনা করে যে ইস্টার্ন রিজিওনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার, কলকাতায় তাদের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে যে ভারতীয় সময় বেলা এগারোটার দিকে বহরমপুর-ভেড়ামারার মধ্যেকার দুটি লাইনের মধ্যে একটি লাইন মিনিট খানেকের জন্য ট্রিপ করে যায়।

তবে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই দ্বিতীয় লাইনটি চালু হয়ে গেছে – সেই বন্দোবস্তই করা রয়েছে। ই আর এল ডি সি এই অঞ্চলের প্রতিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ওপরে ২৪ ঘন্টা নজর রাখে।

এই তথ্য সমর্থন করে পাওয়ার গ্রীড কর্পোরেশনের ডাইরেক্টর প্রজেক্টস, আই এস ঝা জানিয়েছেন, “পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারার ওই গ্রীডে দুটি লাইন রয়েছে। একটি ট্রিপ করলেও অন্য লাইনটি চালু থাকে। এবং দ্বিতীয় লাইনটিতেও সবসময়েই চার্জ দেওয়া থাকে । এক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। তাই বাংলাদেশে আজ এক মুহুর্তের জন্যও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে নি।”

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিপর্যয় ভারতীয় গ্রিডের কারণে হয় নি বলেই দাবী পাওয়ার গ্রীড কর্পোরেশনের ওই শীর্ষ কর্তাদের।

সুত্রঃ বিবিসি বাংলা