মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কুয়েতে মধ্যপ্রাচ্যের ছ’টি দেশের সঙ্গে এশিয়ার জনশক্তি রপ্তানিকারক ১২টি দেশের দু’দিনব্যাপী একটি সম্মেলন শুরু হয়েছে বুধবার ।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেদের এক বৈঠকে গৃহকর্মীদের কিছু অধিকার ও সুযোগ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে একটি খসড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কুয়েত সিটিতে বিদেশি শ্রমিক সংক্রান্ত এক বৈঠকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের ভিসা সমস্যা, কর্ম পরিবেশ আর প্রশিক্ষণের মতো বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও, গৃহকর্মীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির কিছু বিষয়ও আলোচনায় উঠে এসেছে।
বুধবার প্রথমদিনের বৈঠকে যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়নি। তবে ওই প্রস্তাবে গৃহকর্মীদের জন্য কাজের সময় আধঘণ্টা নির্ধারণ, সপ্তাহে একদিন ছুটি আর গৃহ বদলের অধিকার দেওয়া হবে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক পাঠানো হয়ে থাকে, যাদের বড় একটি অংশই নারী, যারা গৃহকর্মী হিসাবে সেখানে যান।
এই শ্রমিকদের অনেকেই অভিযোগ করেন যে, তাদের যৌন হয়রানি, মারধর আর জোর করে আটকে রাখার মতো নির্যাতন করা হয়ে থাকে।
আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী বলছেন, এ ধরণের অভিযোগ পেলেও রক্ষণশীলতার কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদন্ত করা সম্ভব হয়না। তাই স্থানীয় আরবি ভাষী এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে তারা পুলিশের সাহায্য নিয়েছেন।
তিনি জানান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় এসব দেশের উপর আন্তর্জাতিক একপ্রকার চাপ তৈরি হয়েছে। তাই এসব দেশ এখন অভিন্ন নীতিমালায় এসব শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার উপর জোর দিচ্ছে। তাই আগের তুলনায় এ ধরণের অভিযোগের সংখ্যা কমে এসেছে।
প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন, এমন একটি সংগঠন ‘রামরু’র পরিচালক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলছেন, আইনটি তখনই শ্রমিকদের কাজে আসবে যখন দেশগুলো এটি বাস্তবে প্রয়োগ করবে।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যখন শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ আইন কার্যকর করবে, তখনই শুধুমাত্র শ্রমিকরা এর সুফল পেতে পারে। তাহলেই এই উদ্যোগ শ্রমিকদের জন্য অনেকটাই সহায়ক হয়ে উঠবে।
এজন্য বাংলাদেশের মতো শ্রম রপ্তানিকারক দেশগুলোকে এসব দেশে আশ্রয়কেন্দ্র আর হটলাইন স্থাপনের পরামর্শ দিলেন ড. সিদ্দিকী।
এই সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলছেন, বৈঠকে বিনা খরচে অভিবাসন আর ভিসা ব্যবসা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হবে।