Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শাহজালাল বিমানবন্দরে পদে পদে নাজেহাল যাত্রীরা

shajalalহজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কিংবা কাস্টমসে যান, বিমানবন্দরের ভেতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথাই বলেন আপনাকে অবমাননাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে বিদেশ ফেরত শ্রমিকদের এ অবস্থায় পড়তে হয় আরো বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে বিমানবন্দরে লাগেজ হারানো, দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারের অবমাননাকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ভ্র্রমণকারীরা।

অভিযোগকারীরা জানান, বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও বিমানবন্দরে নামার পর সেখান থেকে নিজেদের মূল্যবান জিনিসপত্রসহ বের হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্স এসব কাজের তত্ত্বাবধান করে থাকে। তবে আরো বিপত্তি দেখা দেয় যখন একই সময়ে দুটি কিংবা তিনটি ফ্লাইট অবতরণ করে। প্রয়োজনীয় জনবল, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে এ সমস্যা প্রকট হয়ে পড়ে।

chardike-ad

বিমান বাংলাদেশ দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দীর্ঘ দিন ধরে ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং’ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর এ কাজে প্রতিষ্ঠানটিকে অনুমোদন দিয়েছে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি বাংলাদেশ।

বিমানবন্দরে যাতায়াতকারী কয়েকজন যাত্রী জানান, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে অবর্ণনীয় কষ্ট ও বিশৃঙ্খলা ভোগ করতে হয়। বিমানবন্দরের ডেস্ক, ইমিগ্রেশন কিংবা কাস্টমসে যাত্রীদের চেক করতে দীর্ঘসূত্রিতা অবলম্বন করা হয়।

যাত্রীরা জানান, প্রবাসী শ্রমিকরা যারা বছরে ১৪ বিলিয়ন ডলার করে দেশে রেমিটেন্স পাঠান তারা দেশে এসে এমন অবমাননাকর পরিস্থিতিতে দেখতে চান না।

ইউরোপের এক দেশ থেকে আসা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিমান থেকে বের হতে আমাকে সময় নিতে হয়েছে আড়াই ঘণ্টা। এর অধিকাংশ সময়ই কেটেছে আমার লাগেজ আর মূল্যবান জিনিসের চেক আপের পেছনে। আমি এ জিনিসটা বুঝে উঠতে পারি না আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে জিনিসপত্র ঘাঁটাঘাটির এ কাজটিকে কর্তৃপক্ষ কেন আধুনিকায়ন করছে না।”

বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসার সদস্য, বিমান নিরাপত্তাকর্মীদের গভীর নজরদারি সত্ত্বেও মূল্যবান জিনিসপত্র নাই হয়ে যাচ্ছে। আর এসব ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ আনছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ৫ নভেম্বর ইত্তেহাদ এয়ালাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে আবুধাবি থেকে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন মোহম্মদ সাদিক আহমেদ। বিমানবন্দরে কাস্টমস লাউঞ্জে তার মানিব্যাগটি হারান।

সাদিক বলেন, “কাস্টম হাউজে ইন্সপেক্টর নাসিদুল হক লাগেজ চেক করা শেষ করে আমাকে বললেন-মানিব্যাগটা খুলুন। সঙ্গে করে কয়টি সোনা নিয়ে এসেছেন?”  কোনো সোনা নেই জানালে নাসিদুল বলেন, “সোনা পাওয়া গেলে কঠিন পরিবেশের মুখোমুখি হতে হবে।”

সত্য কথা জানানোর পরও কেন হুমকি দেয়া হচ্ছে এটা জানতে চাইলে ওই পুলিশ আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে যাত্রীর পকেট থেকে মানিব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে যান তিনি।

ম্যানিব্যাগটি চেক করে কোনো কিছু অবৈধ না পেয়ে এটিকে স্ক্যান করতে দেন নাসিদুল হক। আর হঠাৎ করেই ওই যাত্রীর দেহ তল্লাশি করা শুরু করেন। তল্লাশির পর মানিব্যাগ সংগ্রহ করতে গেলে দেখা যায় সেটা অন্য কেউ নিয়ে চলে গেছে।

আবুধাবি ফেরত ওই যাত্রী আরো জানান, কাস্টমস কর্মকর্তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার মানিব্যাগটি স্ক্যান করার সময় তার দেহেও তল্লাশি চালান।

যাত্রীরা বিষয়টি নিয়ে শিফট ইনচার্জ সহকারী কমিশনার ফরিদকে অবহিত করলে তিনি ভিডিও ফুটেজ ঘেঁটে দেখতে পান এক কাস্টম কর্মকর্তা যাত্রীর মানিব্যাগ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন।” এ ঘটনায় বিমানবন্দর পুলিশ স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার ফরিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এটা অগ্রহণযোগ্য। কোনো কাস্টম কর্মকর্তা যাত্রীর মানিব্যাগ স্ক্যানের জন্য ছুঁড়ে ফেলতে পারে না।”

এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসার রাশিদুল ইসলাম বলেন, “যাত্রী দুর্ভোগ শূন্যতে নামিয়ে আসতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কম সময়ের ব্যবধানে যখন পাঁচ থেকে ছয়টি বিমান অবতরন করে তখনই এ বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতিও একটা ঘাঁটতি।”

গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, “একজন যাত্রীর লাগেজ ও মূল্যবান জিনিসসহ গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় লাগে। এর ফলে যানবাহনের ভিড় লেগে যায় এবং বিমানবন্দরে জটলা পরিস্থিতির তৈরি হয়।”

প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ালে এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি বাড়াতে পারলে এ কাজটি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে করে ফেলা সম্ভব। এছাড়া বিমান বন্দরের প্রতিটি বিভাগে তত্ত্বাবধান আরো বাড়ানো দরকার যাতে করে কেউ হয়রানির শিকার না হয় এবং মূল্যবান জিনিস খোয়া যেতে না হয়।

বিমান বন্দর সূত্র জানায়, গত ৭-৮ বছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কোনো নিয়োগ দেয়া হয়নি। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের অধিকাংশ চাকরিজীবীই নৈমিত্তিক হিসেবে কাজ করছেন।

বিমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে প্রাইভেট অপারেটর নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। অনেকদিন থেকে প্রস্তাবনাটি বিমান মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে।

বিমান বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা এএম মোসাদ্দিক এ বিষয়ে বলেন, “এটা একটা বড় প্রজেক্ট। এর জন্য বিমান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। আর এটা সম্ভব হলে বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা যাবে।”

তিনি বলেন, “আমরা এ বিষয়ে একটি ফাইল অনেক আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। শুধু অনুমোদন প্রয়োজন।” সূত্র: ইউএনবি।