Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

৩ মাসে ২৫ হাজার বাংলাদেশী পাচার : উদ্বিগ্ন জাতিসঙ্ঘ

UN

বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে থাইল্যান্ডে মানবপাচার অব্যাহত রয়েছে। থাইল্যান্ডের পুলিশ দেশটির সংখলা প্রদেশের গভীর জঙ্গল থেকে শুক্রবার আরো ১১৭ জন অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে, যাদের মধ্যে ৯১ জনই বাংলাদেশী। বাকিরা রোহিঙ্গা মুসলিম। পাচারকারীরা এসব লোককে জঙ্গলে রেখে পালিয়ে যায়।

chardike-ad

এদিকে জাতিসঙ্ঘ বলেছে, বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মানবপাচার। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে ২৫ হাজার লোককে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাচার করা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রকাশিত নিয়মিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের এ ঘটনায় জাতিসঙ্ঘ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
৯১ বাংলাদেশীসহ ১১৭ জন উদ্ধার

থাইল্যান্ডের জঙ্গলে আরো যে ১১৭ জনকে দেশটির পুলিশ উদ্ধার করেছে তাদের মধ্যে ৯১ জনই বাংলাদেশী। বাকি ২৬ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান। শুক্রবার দেশটির সংখলা প্রদেশের রাত্তাফাম জেলার মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী জঙ্গল থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। সন্দেহভাজন মানবপাচারকারী একটি চক্রের সদস্যরা তাদের থাইল্যান্ডে নিয়ে যায়। থাই কর্তৃপ শনিবার এসব লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের জাতীয়তা নিশ্চিত হয়েছে।

সংখলা প্রদেশের উপগভর্নর একারাত সিসেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘১১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জন রোহিঙ্গা। বাকিরা বাংলাদেশের নাগরিক।’ বাংলাদেশের ১৩ বছর বয়স্ক কিশোর বুসরি সালাম বলেছে, তার ভাই মালয়েশিয়া থাকেন। তার কাছে যাওয়ার জন্য দালালের মাধ্যমে সে অন্যদের সঙ্গে নৌকায় করে থাইল্যান্ডে পৌঁছে। তারা দুই সপ্তাহ ধরে দেশটির জঙ্গলে রয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, ১১৭ অভিবাসীকে জঙ্গলে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। পুলিশের লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোমকিয়াত ওস্তাফুন জানান, একটি পাহাড়ের ওপর থেকে ওই অভিবাসীদের উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও অভিযানে গহিন জঙ্গলে মানবপাচারকারী চক্রের আরো চারটি ক্যাম্পের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। আরো শিবির থাকতে পারে সন্দেহে ওই এলাকার জঙ্গলগুলোতে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এর আগে সংখলা প্রদেশে পাচারকারীদের একটি শিবিরে গণকবরের সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ওই গণকবর থেকে ৩০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে তাদের থাইল্যান্ডে পাচার করা হয়েছিল বলে আগেই এক বিবৃতিতে জানানো হয়।

এ দিকে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে থাইল্যান্ডের পেদাং বেসার শহরের মেয়র বানজং পংফলকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। থাইল্যান্ডের পুলিশপ্রধান সোমইয়াত পুমপান শুক্রবার গণমাধ্যমকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চ্যান-ওচা আঞ্চলিক মানবপাচার সঙ্কট সমাধানে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারের সঙ্গে একটি ত্রিপীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। এ দিকে বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে যে, মালয়েশিয়ার সীমান্তের জঙ্গলে মানবপাচারকারীদের আরো বেশি শিবির বা ক্যাম্প থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
মানবপাচার নিয়ে জাতিসঙ্ঘের উদ্বেগ

নিউ ইয়র্ক থেকে এনআরবি নিউজ জানায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে পাচারকারীদের নৌকায় করে পাড়ি দিয়েছে আনুমানিক ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী। এদের পৌঁছে দেয়ার কথা মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। ২০১৪ সালে একই সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর থেকে প্রকাশিত নিয়মিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল ‘ইরেগুলার মেরিটাইম মুভমেন্টস’ জানুয়ারি-মার্চ ২০১৫ প্রকাশ করে সংস্থাটি।

এতে বলা হয়, দণি-পূর্ব এশিয়ায় অনিয়মিত সমুদ্রপথ যাতায়াতের প্রধান রুটটি অব্যাহতভাবে শুরু হচ্ছে বঙ্গোপসাগর থেকে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর আশায় ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে যাত্রা করছেন হাজারো মানুষ। এ বছরের প্রথম তিন মাসে বঙ্গোপসাগর থেকে অনিয়মিত সমুদ্রপথে যাত্রা করেছে আনুমানিক ২৫ হাজার মানুষ। আগের দুই বছরের তুলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ। অবৈধপথে যাত্রা করে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পৌঁছতে সম হওয়া ব্যক্তিদের সাাৎকার নিয়ে ইউএনএইচসিআর জানতে পেরেছে যে, ঝুঁকিপূর্ণ এসব যাত্রায় কমপে ৩০০ ব্যক্তি মারা গেছেন। ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে মারা গেছেন মোট ৬২০ জন। ুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে এদের অনেকের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে মারা গেছেন নৌকার ক্রুদের হাতে মারধরের শিকার হয়ে। পুরো নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

স্টিফেন উল্লেখ করেন, এ সপ্তাহে থাইল্যান্ডের ইউএনএইচসিআর কার্যালয় কর্তৃপ এবং গণমাধ্যম প্রতিবেদন থেকে মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের সংখলা প্রদেশে পাচারকারীদের ক্যাম্পে গণকবর খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছে। এতে ৩০ জনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। বলা হয়, এরা এসেছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে। অসুস্থতা বা নির্যাতনে তারা মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। থাই পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। একইসঙ্গে সংস্থাটি আশা প্রকাশ করেছে যে, দোষীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

সংস্থাটি আরো উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত সমুদ্রপথের পাচার নেটওয়ার্ক পাচারকারীদের জন্য ক্রমেই লোভনীয় হয়ে উঠছে। একইসঙ্গে সেগুলো পাচারের শিকার হওয়া মানুষদের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিপজ্জনক হওয়া সত্ত্বেও এসব রুট ব্যবহার করা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

পাচারকারীদের ক্যাম্পের পরিস্থিতিও বিভীষিকাময়। আটক ব্যক্তিদের পরিজন মুক্তিপণ পরিশোধ করার আগ পর্যন্ত তাদের নির্যাতন করা হয়। অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইউএনএইচসিআরকে দেয়া সাাৎকারে অর্ধেকের বেশি ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাদের ক্যাম্পে কেউ না কেউ আটক অবস্থায় মারা গেছেন। এসব ক্যাম্পে মারধর খুবই সাধারণ বিষয়। ধর্ষণও হয়ে থাকে। যারা পালানোর চেষ্টা করেন, তাদের ঝুঁকি থাকে গুলি খাওয়ার।