Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মাঝির ছেলে থেকে রাষ্ট্রপতি

azad
এ পি জে আবদুল কালাম

মানুষের জীবনে উত্থান-পতন আসে। ধনীর ছেলে ফকির হয়, আর ফকিরের ছেলে রাজা। পৃথিবীর ইতিহাসে ঘাটলে এ রকম হাজারো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। এমনই এক ঘটনার জলন্ত সাক্ষী ডা. এ পি জে আবদুল কালাম। মাঝির কুড়েঘর থেকে হয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। বিশ্বের শীর্ষ পদার্থবিজ্ঞানীর পাশে তার নাম উঠেছে অবিসংবাদিত বিজ্ঞানী হিসেবে।

ডা. এ পি জে আবদুল কালাম হয়ে ওঠার গল্প
তামিলনাড়ু রাজ্যের উপকূল সংলগ্ন রামেশ্বারামে ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবরে দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। বাবা জয়নুল আবেদিন একজন নৌকা চালক (মালিক)। মা আশিয়াম্মা গৃহিনী। অভাব তার পড়াশোনার পথে অনেকবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পড়াশোনার ব্যয় মেটাতে তিনি অনেক ছোট কাজও করেছেন। পত্রিকার হকারিও করেছেন বেশ কিছুদিন।

chardike-ad
azad
প্রজাতন্ত্র দিবসে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে তিনি

গণিতশাস্ত্রে আগ্রহী কর্মঠ কালাম বিদ্যালয়ে একজন মধ্যম মানের ছাত্র ছিলেন। রামনাথপুরম সোয়ার্জ ম্যাট্রিকুলেশন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা সমাপন করে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিরুচিরাপল্লীতে অবস্থিত সেন্ট জোসেফ`স কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বিমান প্রকৌশলবিদ্যায় উচ্চডিগ্রি লাভ করেন। এই প্রতিষ্ঠানে পড়ার সময় তার পঠনপাঠনের অগ্রগতিতে অখুশি ডিন তিনদিনের মধ্যে প্রকল্প শেষ না করলে বৃত্তি বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখালে কালাম নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে তার প্রকল্প সম্পন্ন করেন। আটটি পদের জন্য পরীক্ষায় নবম স্থান লাভ করায় ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যুদ্ধবিমানের চালক হিসেবে তার স্বপ্ন খুব অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়।

পেশা
এমআইটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর কালাম ভারতের অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাবলিশমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ডিআরডিও) প্রধান বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। এখানেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তখন ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনে (আইএসআরও) স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন।

azad
দিল্লিতে যুদ্ধজাহাজের নকশা দেখছেন তিনি

১৯৭০ এর দশকে প্রজেক্ট ডেভিল এবং প্রজেক্ট ভ্যালিয়ান্ট নামে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নেন তিনি। এই প্রকল্পের অধীনেই ভারত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হয়। ভারতের তৈরি রোহিনি-১ নামের মিসাইলটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ করার পর বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি এনে দেয়। ২০০২ সালে ক্ষমতাসীন বিজেপির সমর্থনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশনে তার অবদান অনেক। ভারতের রকেট ও মিসাইল প্রযুক্তিতে তার অবদান সর্বাগ্রে। ‘অগ্নি’, ‘পৃথ্বি’ এর মতো পরমাণবিক অস্ত্রবাহী মিসাইল প্রযুক্তি পূর্ণতা পেয়েছে তার হাত ধরেই। এজন্য তাকে ‘মিসাইলম্যান অব ইন্ডিয়া’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

azad
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের সঙ্গে দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি

রাষ্ট্রপতি ও বিজ্ঞানী কালামের বাইরে একজন অত্যন্ত সংবেদনশীল লেখকও তিনি। তিনি বেশ কিছু প্রণোদনামূলক ও প্রভাবশালী বই লিখেছেন। এর মধ্যে ‘India 2020’ সর্বাধিক পঠিত ও প্রশংসিত। এই বইয়ে ২০২০ সালের মধ্যে সুপারপাওয়ার হতে হলে ভারতকে কী ধরনের পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে সে ব্যাপারে একটি রূপরেখা দিয়েছেন তিনি। তার অন্যান্য বহুল পঠিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘Ignited Minds’, ‘Mission India’, ‘Inspiring Thoughts’, ‘The Luminous Sparks’ ও ‘Wings of Fire’।

২০১১ সালে তিনি তরুণদের নিয়ে ‘What Can I Give Movement’ শীর্ষক দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে লেকচার দিয়ে বেড়িয়েছেন। তিনি চিরকুমার ছিলেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা
কালাম ভারতের প্রায় সবকটি বেসামরিক সম্মাননা পেয়েছেন। ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ’ এবং ‘ভারতরত্ন’ সম্মাননা পেয়েছেন। জাতীয় ঐক্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৯৭ সালে তাকে ইন্দিরা গান্ধী সম্মাননা দেয়া হয়। পরের বছর ভারত সরকার কালামকে বীর সভাকর সম্মাননা দেয়। ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইটি তাকে রাজা দ্বিতীয় চার্লস মেডেল দেয়।

azad
ইন্দিরা গান্ধী অ্যাওয়ার্ড তুলে দিচ্ছেন কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ২০০৯ সালে তাকে ইন্টারন্যাশনাল ভন কারমান উইংস সম্মাননা দেয়। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের এএসএমই ফাউন্ডেশন কালামকে হুভার মেডেল দিয়ে সম্মানিত করে। এছাড়া কালাম ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট পেয়েছেন। তার ৭৯তম জন্মদিনকে জাতিসংঘ বিশ্ব শিক্ষার্থী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে তিনি এমটিভি ইয়ুথ আইকন অব দ্য ইয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।

তথ্যসূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস, এনডিটিভি, উইকিপিডিয়া। সৌজন্যে : রাইজিংবিডি