Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বেতন ভাতায় বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ প্রধান নির্বাহী

salaryইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলী রেজা ইফতেখার বেতন-ভাতা বাবদ গত বছর পেয়েছেন ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার বেশি। সে হিসাবে প্রধান নির্বাহীর বেতন-ভাতা বাবদ ব্যাংকটি ব্যয় করেছে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে দেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ বেতন-ভাতাপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী।

দেশী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতন-ভাতা পান দ্য সিটি ব্যাংকের সোহেল আরকে হুসাইন। সর্বোচ্চ বেতন-ভাতাপ্রাপ্ত শীর্ষ ১০ প্রধান নির্বাহীর মধ্যে এর পরের স্থানগুলোয় আছেন যথাক্রমে ব্যাংক এশিয়ার সাবেক প্রধান নির্বাহী মেহমুদ হোসেন, মিউচুয়াল ট্রাস্টের আনিস এ খান, ব্র্যাকের সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, আইএফআইসির এম শাহ আলম সারওয়ার, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের ফরমান আর চৌধুরী, ওয়ান ব্যাংকের ফখরুল আলম, এবি ব্যাংকের শামীম আহমেদ চৌধুরি ও উত্তরা ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী শেখ আবদুল আজিজ।

chardike-ad

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের বেতন দিয়ে থাকে মালিকপক্ষ। তবে তার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকেই প্রধান নির্বাহীদের বেতনের বিষয়টি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দ্য সিটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী সোহেল আরকে হুসাইন গত বছর বেতন-ভাতা বাবদ ব্যাংক থেকে পেয়েছেন ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি। অর্থাত্ প্রধান নির্বাহী হিসেবে প্রতি মাসে তিনি পেয়েছেন প্রায় ১৪ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা।

প্রধান নির্বাহীর বেতন-ভাতা বাবদ তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়ার। ব্যাংকটির সাবেক প্রধান নির্বাহী মেহমুদ হোসেন ২০১৫ সালে বেতন-ভাতা বাবদ পান ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার কিছু বেশি। এ হিসাবে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যাংক এশিয়া থেকে তিনি পেয়েছেন প্রতি মাসে গড়ে ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি ও সিইও আনিস এ খান বেতন-ভাতা বাবদ গত বছর পেয়েছেন প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রতি মাসে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন গড়ে ১৩ লাখ টাকা।

বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক প্রধান নির্বাহীর বেতন-ভাতা বাবদ গত বছর ব্যয় করেছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থাত্ এ বাবদ প্রতি মাসে ব্যাংকটি ব্যয় করছে গড়ে প্রায় ১১ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের সিংহভাগ সময় ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এম শাহ আলম সারওয়ার। বেতন-ভাতা বাবদ ২০১৫ সালে তিনি পেয়েছেন ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশি। এ হিসাবে আইএফআইসি ব্যাংক প্রধান নির্বাহীর বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে ব্যয় করেছে ১১ লাখ টাকার বেশি।

২০১৩ সাল থেকে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করছেন ফরমান আর চৌধুরী। বেতন-ভাতা বাবদ গত বছর ব্যাংকটি থেকে তিনি পেয়েছেন ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রতি মাসে তিনি পেয়েছেন গড়ে প্রায় ১১ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা।

বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে রয়েছেন ফখরুল আলম। ২০১৫ সালে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যাংকটি থেকে তিনি পেয়েছেন ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা। অর্থাত্ বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে তিনি পেয়েছেন ১০ লাখ টাকার বেশি।

উত্তরা ব্যাংকের সাবেক এমডি ও প্রধান নির্বাহী শেখ আবদুল আজিজ গত বছর বেতন-ভাতা বাবদ ব্যাংকটি থেকে নিয়েছেন ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা। অর্থাত্ প্রধান নির্বাহীর বেতন-ভাতা বাবদ উত্তরা ব্যাংক ২০১৫ সালে ব্যয় করেছে প্রতি মাসে গড়ে ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা উচিত। দেশে বিনিয়োগে মন্দা থাকায় ব্যাংকের মুনাফা কমছে। প্রধান নির্বাহীদের বড় অঙ্কের বেতন দিতে হলে ব্যাংকের ব্যয়ও বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে সামগ্রিক পরিচালন ব্যয়ে। এসব বিবেচনায় প্রধান নির্বাহীদের বেতন নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে।

এর বাইরেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশী ব্যাংক প্রধান নির্বাহীর বেতন-ভাতা বাবদ বার্ষিক ১ কোটি টাকার ওপর ব্যয় করেছে। এর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রধান নির্বাহীর বেতন-ভাতা বাবদ গত বছর ব্যয় করেছে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা, এক্সিম ও প্রিমিয়ার ব্যাংক ১ কোটি ২২ লাখ টাকা করে, এনআরবি কমার্শিয়াল ১ কোটি ১৭ লাখ ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

এছাড়া ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ১ কোটি ৮ লাখ, ঢাকা ব্যাংক ১ কোটি ৪ লাখ, সাউথ বাংলা ব্যাংক ১ কোটি ৮ লাখ ও প্রাইম ব্যাংক ১ কোটি ৩ লাখ টাকা প্রধান নির্বাহীর বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমডির সঙ্গে ডিএমডি বা এর নিচের পদের কর্মকর্তাদের বেতনের পার্থক্য অনেক। এক দুই ধাপ নিচের কর্মকতার সঙ্গে প্রধান নির্বাহীর লাখ লাখ টাকা বেতনের পার্থক্য হওয়া যৌক্তিক নয়। ফলে যুক্তিসঙ্গত একটা বেতন কাঠামো হওয়া উচিত। বণিকবার্তা।