Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

রোহিঙ্গা এক কিশোরী বধূর বিরহগাথা

rohinga-asafa
রোহিঙ্গা কিশোরী আসাফা

বয়স তার কতই হবে? চৌদ্দ কি পনেরো। এ বয়সেই তাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে নিদারুণ বিরহব্যথায়। হ্যাঁ, তার বয়সটা অতি অল্প বটে, কিন্তু ওই অনগ্রসর সমাজে এই বয়সে বিয়ের বিষয়টিকে কেউ সেভাবে অবাঞ্ছিত বলে মনে করে না। ১৮ বছর বয়সী এক তরুণের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সোনার বরণ মেয়েটির। চোখজুড়ে তখন নতুন ভোরের স্বপ্ন। কিন্তু পাঁচ মাসেই তা হয়ে গেল গোধূলির গান। হানাদার সেনাদের রোহিঙ্গানিধন অভিযানে গুঁড়িয়ে গেল তার ছোট্ট সোনার সংসার।

বিয়ের পর রোহিঙ্গা কিশোরী আসাফার জীবনটাই হয়ে যায় অন্য রকম। স্বামীর সঙ্গে ভালোই কাটছিল দিনগুলো। সকালে একসঙ্গে বসে নাশতা খাওয়ার স্মৃতি, গল্প করার মধুর লগ্ন এখন তাঁর সারা বেলার সঙ্গী। সে কেবল এসব স্মৃতি হাতড়ে বেড়ায় আর কেঁদে বুক ভাসায়।

chardike-ad

ঈদের পাঁচ দিন আগে সকালে স্থানীয় একটি দোকানে গিয়েছিলেন আসাফার স্বামী ফারুক। কিছু কেনাকাটা ছিল। আসাফা ছিল তাঁর পথ চেয়ে। ফারুক ফিরে এলেন ঠিকই, তবে লাশ হয়ে। মিয়ানমারেরর সেনারা গুলি করে কেবল আসাফার স্বামীকেই মারেনি, চুরমার করে দিয়েছে তার সব স্বপ্নসাধ।

গত বুধবার উখিয়ার থ্যাংখালী আশ্রয়কেন্দ্রে আসাফা তার জীবনের এই করুণ কাহিনি এভাবেই বর্ণনা করে। তার বাড়ি মংডুর জীবনখালি এলাকায়। ফারুকের বাড়িও সেখানে।

আসাফার মা হানিফার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জামাই মারা যাওয়ার পর মেয়ে তার সব সময় চুপচাপ থাকে। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে না। একা থাকলে কেবলই কাঁদে। স্বামীকে সে এতটাই ভালোবাসত যে স্বামীর লাশ পর্যন্ত তাকে দেখতে দেওয়া হয়নি। স্বামীর মৃত্যুসংবাদ শোনার পর কয়েক দফা জ্ঞান হারায় আসাফা।

মা হানিফার দেওয়া তথ্যমতে, আসাফারা পাঁচ ভাইবোন। সে সবার বড়। বাবা ইউসুফ স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। অল্প কিছু জমিজমা যা ছিল, ওতে চাষবাস হতো। এভাবেই চলত তাঁদের সংসার। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ধার করেন আসাফার বাবা। সব মিলিয়ে আসাফার বিয়ে দিতে চার লাখ টাকা খরচ হয়।

আসাফার কথা, বিয়ের এই পাঁচটি মাসে তার স্বামী ক্ষণিকের জন্যও তাকে কটু কথা বলেননি। হাসিখুশি এমন একটি ভালো মানুষকে ছাড়া সে বাঁচবে কী করে?

স্বামীর মৃত্যুর পর বাবা তাদের নিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করে। চৌদ্দ দিনে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে বাংলাদেশে আসে আসাফার পরিবার। এরপর রাস্তায় কেটে যায় বেশ কয়েক দিন। উখিয়ার থ্যাংখালী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয় তাদের।

আসাফাদের এখনকার থাকার ঘরটি পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি। দুটি পরিবার এক ঘরে ভাগাভাগি করে থাকে। আসাফা বলছিল, ‘স্বামীর সংসারে অনেক সুখে ছিলাম। রাখাইনের সেনারা কেড়ে নিল আমার স্বামীকে। এরপর আমার জীবনে আর কোনো আনন্দ নেই। আমার কিছুই ভালো লাগে না। কত যে কষ্ট করে বাংলাদেশে এসেছি, আর বাংলাদেশে এসেও অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।’

আসাফার ছোট্ট বোন নাসাফা। তার বয়স ছয় বছর। নাসাফাকে আসাফা খুব আদর করে। এখন দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে তার সঙ্গে গল্প করে। তার মা হানিফা বলছিলেন, ‘আমরা কেউ ভালো নেই। আমাদের জীবন শেষ করে দিয়েছে সেনারা।’ প্রথম আলো