Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

তারকাদের ঘর ভাঙার মিছিল চলছেই

tarokaসম্পর্ক ভাঙা-গড়ার খেলায় নিত্যই ডুবে থাকে শোবিজ। আজ এ তারকার বিয়ে তো কাল ওই তারকার ছাড়াছাড়ি! এসব নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ি তো চলেই। এসব দেখে বিরক্ত দর্শক-ভক্তরাও। তাই কোনো তারকার বিয়ে হলে তারা প্রার্থনা করেন, বিচ্ছেদটা যেন অন্তত শান্তিতে হয়! চলতি বছর শোবিজের অনেক জনপ্রিয় তারকার সুখের সংসার ভেঙেছে। বলা চলে এ বছরটা তারকাদের ঘর ভাঙনের বছর হিসেবেই বেশি উল্লেখযোগ্য হবে শোবিজের সালতামামিতে।

ভেঙেছে নোভার ঘর: ঘর ভাঙনের সেই মিছিলে সর্বশেষ নাম নোভা আহমেদ। ছোট পর্দার এই অভিনেত্রী ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা রায়হান খানকে। ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বিয়ে করেছিলেন তারা। ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই তাদের ঘরে জন্ম নেয় রাফাজ রায়হান। ছয় বছর সংসার করার পর গত ২৬ আগস্ট ঢাকা জজকোর্ট কাজী অফিসে তারা পরস্পরকে ডিভোর্স দেন। তা প্রকাশ হয় গত ৮ অক্টোবর।

chardike-ad

জানা গেছে, এ ডিভোর্সে তাদের পারিবারিক সম্মতি ছিল। তবে কী কারণে তাদের সংসারে ভাঙন এল সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।

দশ বছরের প্রেমও সংসার বাঁচায়নি মিলার: স্বামীকে একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের দায় দিয়ে বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন পপ সংগীতশিল্পী মিলা। ১০ বছর প্রেম করার পর চলতি বছরের গত ১২ মে পারিবারিকভাবে পারভেজ সানজারিকে বিয়ে করেছিলেন মিলা। পারভেজ বর্তমানে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে বৈমানিক হিসেবে কর্মরত। এর আগে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফাইটার পাইলট হিসেবে কাজ করেছেন।

এ তারকার ডিভোর্স নিয়ে অনেক দিন ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। তবে সবকিছুকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মিলা। কিন্তু গেল শুক্রবার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বিচ্ছেদের কথা স্বীকার করে নেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি ডিভোর্স দিতে যাচ্ছি। পারভেজ সানজার সঙ্গে ১০ বছর প্রেম করার পর বিয়ে করেছিলাম কিন্তু বিয়ের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় জানতে পারি আমার স্বামী একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িত। আমার স্বামী ক্রমাগত আমার সাথে প্রতারণা করতে থাকে। বিয়ের আগে যখন আমরা ডেটিং করতাম তখনও একাধিক নারীর সঙ্গে প্রেম করে আমার সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছিল সে। এমন প্রতারকের সঙ্গে বসবাস করা অসম্ভব।’

দুই বছর পর জানা গেল বাঁধনের ডিভোর্স: এরও আগে প্রকাশ হয় লাক্স তারকা আজমেরি হক বাঁধনের বিচ্ছেদের নিশ্চিত খবর। প্রায় তিন বছর ধরেই নিজের বিচ্ছেদের কথা গোপন রেখেছিলেন এ তারকা। এর আগে বেশ কয়েকবার বাজারে ছড়িয়েছে বাঁধনের ঘর ভাঙনের খবর। তবে সাংবাদিকদের কাছে বরাবরই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন এই অভিনেত্রী। তিনি দাবি করেছেন, স্বামীর সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়েছে। সেটা যে কোনো মুহূর্তেই মিটে যাবে। তবে তা আর হয়নি।

বাঁধনের স্বামী মাশরুর সিদ্দিকী সনেট মুখ খুলেছেন গণমাধ্যমে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর তাদের আনুষ্ঠানকি বিচ্ছেদ হয়। এরপর বাঁধনও বিষয়টি স্বীকার করে নেন।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের উপস্থিতিতে ব্যবসায়ী সনেটের সঙ্গে বাঁধন বিয়ের পিড়িঁতে বসেন।

দ্বিতীয় সংসারও টিকল না হাবিবের: চলতি বছরের শুরুতেই দারুণ ধাক্কা দিয়েছিল হালের মিউজিক ক্রেজ হাবিব ওয়াহিদের সংসার ভাঙনের খবর। গেল বছরের শেষদিকে হঠাৎ গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল হার্টথ্রব সংগীতশিল্পী হাবিবের সাংসারিক টানাপোড়ন চলছে। হাবিবের একাধিক ঘনিষ্ঠজনও বলেছিলেন সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না এই দম্পতির। দু’জনে নাকি গেল বছরের শেষে আলাদাও থেকেছেন কিছুদিন। সেই গুঞ্জন সত্যি হলো অবশেষে।

দ্বিতীয় স্ত্রী রেহানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিভোর্স হয়ে গেল হাবিবের গত ২৬ জানুয়ারি। দুই পরিবারের সমঝোতায় ডিভোর্স হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাবিব। শিল্পী জীবনের প্রথমে ২০০৩ সালে লুবিয়ানা নামের এক নারীর সঙ্গে প্রেম করে প্রথম বিয়ে করেন হাবিব ওয়াহিদ। কিছুদিন পর সেই সংসার ভেঙে যায়। এরপর মডেল-অভিনেত্রী মোনালিসার সঙ্গে গভীর সম্পর্কে জড়ান এই শিল্পী। ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তারা বিয়েও করবেন। কিন্তু কোনো এক কারণে সেই সম্পর্কে পরিণতি আসেনি।

তার কিছুদিন পরই হুট করে ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর পারিবারিক সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের মেয়ে রেহানকে বিয়ে করেন হাবিব। এই সংসারে হাবিবের আলিম ওয়াহিদ নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এই দম্পতির বিচ্ছেদের কারণে হিসেবে জানা যায়, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির প্লেবয় খ্যাত এ তারকা সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন অভিনেত্রী তানজিন তিশার সঙ্গে। সেই জের ধরেই রেহানের সঙ্গে বিচ্ছেদ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাবিবের সঙ্গে এখন তিশার সম্পর্কটাও ভালো যাচ্ছে না। বর্তমানে সিঙ্গেলই রয়েছেন হাবিব।

মেনে নেয়া যায়নি তাহসান-মিথিলার বিচ্ছেদ: তবে চলতি বছরে ডিভোর্স ঘোষণা নিয়ে ভক্তদের শোকের মিছিলে ভাসিয়েছেন শোবিজের আদর্শ জুটি বলে খ্যাত তাহসান-মিথিলা। অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন এলে তারা দুজনই কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গেল ২০ জুলাই দুপুরে তাহসানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাহসান-মিথিলা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ডিভোর্সের বিষয়টি স্বীকার করে নেন।

দুজন যৌথভাবে এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘অতি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরেই আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমরা জানি আমাদের এ সিদ্ধান্তে অনেকে ব্যথিত হবেন। সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’

এদিকে তাহসানের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত জানাতে দেরি হলেও দুই বছর ধরেই আলাদা থাকছেন তাহসান-মিথিলা। তাহসানের ওই সূত্রের দাবি, ২০১৪ সাল থেকেই অবিশ্বাস দানা বাঁধে এই দম্পতিদের মধ্যে। তার কারণ কোনো এক মডেল-অভিনেত্রীর প্রতি তাহসানের দুর্বলতা। একটা সময় দুজন মিলে সব অনুষ্ঠান ও নাটক-বিজ্ঞাপনে অংশ নিতেন তারা। কিন্তু হঠাৎ করেই তাহসান এড়িয়ে চলতে থাকেন মিথিলাকে।

এই নিয়ে প্রায়ই মনোমালিন্য হতো। অবনতি হতে থাকে দাম্পত্যের। একটা পর্যায়ে তাহসানও মিথিলার গোপন সম্পর্কের নানা তথ্য পান। এক গায়ক ও অভিনেতার সঙ্গে মিথিলার সখ্যতার গুঞ্জনও চাউর হয় চারদিকে। এ নিয়ে তাহসানের অবিশ্বাস চরমে পৌঁছায়। যদিও কারও কাছে এসব সম্পর্কের কোনো তথ্য প্রমাণ ছিল না। তবু সন্দেহের জের ধরে তাদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয় বলেই ধারণ করছেন তাহসান-মিথিলার ঘনিষ্ঠজনরা।

সেই মতবিরোধের সূত্রে দুজন মিলেই আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৫ সাল থেকেই আলাদা থাকতে শুরু করেন তারা। এরপর তারা একসঙ্গে কিছু নাটক-টেলিফিল্মে কাজ করলেও তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব ধরা পড়েছে শুটিং স্পটে। আর সে থেকেই ছড়াতে থাকে এই দুই তারকার সম্পর্ক ভাঙনের গুজব।

এদিকে তাহসান-মিথিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার নিশ্চিত খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল সমালোচনা।

কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আবার তাহসান-মিথিলা এই দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে সংসার ভাঙার জন্য দায়ী করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। আর শোবিজের মানুষেরা মনে করছে, এমন একটি আদর্শ ও সুখী দম্পতির পতন তারকাদের সংসার জীবনের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধে দারুণভাবে আঘাত করেছে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন মেধাবী ছাত্র তাহসান। ওই সময় মিথিলার সঙ্গে পরিচয়। এরপর তাহসানের মনের ঘরে বাঁধেন মিথিলা। ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট এক সুতোয় বাঁধা পড়ে তাহসান-মিথিলার জীবন। তাহসান-মিথিলার ঘরে রয়েছে একমাত্র কন্যাসন্তান আইরা তাহরিম খান। বর্তমানে মিথিলার কাছেই থাকে আইরা।

বিচ্ছেদের পথেই হাঁটলেন নিলয়-শখ: একইভাবে অবাক করেছে আরেক জনপ্রিয় জুটি শখ-নিলয়ের ডিভোর্সের খবরও। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দীর্ঘদিনের প্রেমকে মধুর পরিণতি দিতে বিয়ে করেন নিলয়-শখ। পারিবারিক আয়োজনের বিয়েতে তাদের দেনমোহর নির্ধারিত ছিল ১০ লাখ টাকা। তারপর শখ তার পুরান ঢাকার বাসা ছেড়ে মিডিয়ায় নিয়মিত কাজ করবেন বলে নিলয়ের সঙ্গে উত্তরায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের বছর না পেরোতেই শোবিজে গুঞ্জনের ডালপালা মেলেছে নিলয়-শখের বৈবাহিক সম্পর্কে ফাটল ধরেছে!

বারবার সেই প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেও সম্প্রতি জানা গেল, বিচ্ছেদের পথেই এগিয়েছে এ সংসার। গেল ১৭ জুলাই বিচ্ছেদের কথাই স্বীকার করে নিলেন নিলয়। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এখনও ডিভোর্স হয়নি, প্রক্রিয়া চলছে। নানা কারণেই আমরা দীর্ঘদিন ধরে আলাদা থাকছি।’

দাম্পত্যে সুখে থাকুন প্রিয় তারকারা: ঘর ভাঙার এই লম্বা মিছিল দেখে বিব্রত ও বিরক্ত শোবিজের নানা অঙ্গনের মানুষেরা। তারা দাবি করেন, তারকাদের ডিভোর্সের সংস্কৃতি বেশ পুরনো। কিন্তু সাম্প্রতিককালে তার হার বেড়েই চলছে। যা বেদনার ও অমর্যাদাকর। ভাঙনের এইসব খবর সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দর্শক-ভক্তদের মনে তারকাদের নিয়ে মন্দ উপলব্দির জন্ম দিচ্ছে। সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে সংসার টিকিয়ে রাখতে তারকাদের আরও মনযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন মনস্তত্ববিদরা।