Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

একটি ইতালিয়ান পাসপোর্টের গল্প

italy-passportপাসপোর্ট মানেই একটি দেশের নাগরিকত্বের পরিচয়। এটি জাতীয় পরিচয় বহন করে। বিশ্ব ভ্রমণে এর কোনো বিকল্প নেই। আর সেই পাসপোর্ট যদি হয় বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশের তাহলে তা পাওয়ার সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে চান না।

ইতালির পাসপোর্ট হলো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী পাসপোর্ট। লাল রঙের এই পাসপোর্ট পেতে জীবন-যৌবন পার করে দিয়েছেন বাংলাদেশিসহ অসংখ্য প্রবাসী। বছরের পর বছর পার করেও অনেকেই পাননি। ইতালির পাসপোর্ট পেতে আইনের প্যাচে পড়ে এবং দীর্ঘ সময় লাগায় টগবগে যুবক থেকে অনেকেই বৃদ্ধ হয়ে যান। কেউ আবার বাধ্যক্যকে অতিক্রম করে চলে গেছেন না ফেরার দেশেও।

chardike-ad

এর মধ্যে যেসব বাংলাদেশি অভিবাসী ইতালির আইন মেনে আবেদন করেছেন তাদের অনেকেই পেয়েছেন বহু কাঙ্খিত ‘লাল পাসপোর্ট’। বিশ্বকে পেয়েছেন হাতের মুঠোয়। তবে এ জন্য সময় লাগে একযুগ।

ইতালিতে প্রথম প্রবেশ করার দিন থেকে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয় একটি লাল পাসপোর্ট পাওয়ার আবেদন করতে। এর আগে ‘স্টে পারমিট’ (ইতালিয়ান ভাষায় ‘সৌজন্য’) পাওয়ার পরপরই পাসপোর্ট পেতে একটি স্থায়ী ঠিকানা করতে হয়। ওই ঠিকানার মেয়াদ ১০ বছর হওয়ার পর আইনগতভাবে নাগরিকত্ব পেতে আবেদন করতে পারে যেকোনো অভিবাসী। এর একদিন আগেও আবেদন গ্রহণযোগ্য হয় না।

এরপর নাগরিকত্ব প্রত্যাশীদের নিয়মিত কাজ, বাৎসরিক আয়ের হিসাব-নিকাশ দাখিল, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রতারণায় জড়িত না হওয়া, অকারণে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না থাকা, দেশদ্রোহী কোনো কাজে সম্পৃক্ত না হওয়া – এসব শর্ত অভিবাসী অফিসে যাচাই বাছাই করার পর সব ঠিক থাকলে আবেদনের পরও দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে পাসপোর্ট হাতে পেতে। এর আগে পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের শপথ পাঠ করতে ডাকা হয় অভিবাসী অফিসে।

এই ‘সোনার হরিণ’ ধরতে বৈধ-অবৈধভাবে বাংলাদেশিরা ইতালিতে আসতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। ইতালির পাসপোর্ট বিশ্বের মাঝে ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে তৃতীয় স্থানে। সেনজেনভুক্ত ২৮টি দেশে ভ্রমণ ভিসামুক্ত করা হয়েছে। ইতালির ভিসা কোনো পাসপোর্টে থাকা মানেই ২৮টি দেশে নিশ্চিন্তে ভ্রমণের সুযোগ। এ ছাড়া গ্লোবাল র্যাংকিং স্কোর হিসেবে এর অবস্থান ১৫৭। ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা ১২৪টি দেশে। ভিসাসহ ভ্রমণ ৩২টি দেশে। পাসপোর্ট নামের এই সোনার হরিণ পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষায় আছেন প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের অভিবাসীরা।

সাদা-কালো মানুষের বৈষম্য থাকলেও ইতালিই ইউরোপের একমাত্র মানবাধিকারের দেশ; যারা সহজে কোনো অবৈধকে নিজ দেশে ফেরত পাঠায় না। ফলে বিভিন্ন দেশের মানুষ ইউরোপে প্রবেশের জন্য ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেন ইতালিকে।

এ ছাড়া খ্রিষ্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মশালা রয়েছে ইতালিতে। যাকে গোটাবিশ্ব ভ্যাটিকেন শহর নামে চেনে। একে অন্যভাবে বলা যায় একটি দেশের ভেতরে আরেকটি ছোট্ট দেশ। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকের দল ছুটে আসে শহরটিকে এক নজর দেখতে। এরকম একটি সমৃদ্ধশালী দেশে বাংলাদেশিদের বসবাস কয়েক যুগ ধরে। ইতোমধ্যে হাজার হাজার বাংলাদেশি পেয়েছেন দেশটির নাগরিকত্ব।

লিখেছেন: জমির হোসেন, সৌজন্যে: জাগো নিউজ