Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশ বিমানের কার্গোতে হরিলুট

biman-cargoবিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো পরিবহনে সুষ্ঠু বাণিজ্যিক পরিকল্পনার অভাবে ভালো ব্যবসা না হলেও থেমে নেই লুটপাট। বিগত বছরে কার্গো শাখায় নন-সিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে ইনবাউন্ড আউটবাউন্ড কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ ৭৬ কোটি টাকা লুটপাট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিমানের অভ্যন্তরীণ নীরিক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে। শাখার হিসেব মতে, ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর এ হারে লুটপাট হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা কিভাবে বছরের পর বছর এ অর্থ আত্মসাৎ করেছে, এ নিয়ে বিমানে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রশ্ন উঠেছে, পরিচালনা পর্ষদ ও বিমান ম্যনেজমেন্ট তাহলে কি করে। এত বড় পুকুর চুরি বুঝতে কি কারণে তাদের ১০ বছর লেগেছে।

chardike-ad

অডিট বিভাগের এক কর্মকর্তার মতে, ১০ বছরে উল্লেখিত খাত থেকে হাজার কোটি টাকার আত্মসাৎ করা হয়েছে। শীর্ষকর্তারা অনেকে দুবাইতে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ি গাড়ি কিনেছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিৎ।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, নন সিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে ইনবাউন্ড কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক নন সিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে ‘স্লেভ রেট’ ভিত্তিতে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ আদায় করা হয়। যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নন সিডিউল ফ্রেইটারের বহনকৃত ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড কার্গো হ্যান্ডলিং বাবদ কোনো চার্জ বিমানের একাউন্টে জমা করা হয়নি।

নন সিডিউল ফ্রেইটারের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের অর্থ কোষাগারে জমা না হওয়ার বিষয়টি বিমান কার্গো কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে গত ফেব্রুয়ারি (২০১৮) থেকে এ চার্জ বিমানের কোষাগারে জমা হতে শুরু করে।

বিমান ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে মনোনীত অডিটর বিগত বছরগুলোতে উক্ত চার্জ কোষাগারে জমা না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে কার্গো কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ নন সিডিউল ফ্রেইটার থেকে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ আদায়ের কোনো সার্কুলার নেই বলে জানায়।

পরবর্তীতে নিরীক্ষা তদন্তে ধরা পড়ে যে, ২০০৮ সালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কন্ট্রাক্ট শাখার টেলেক্সের মাধ্যমে জি-৯ এয়ারলাইন্সের ফ্রেইটারের ইনবাউন্ড এবং আউটবাউন্ড কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ আদায়ের স্লেভ রেটভিত্তিক একটি তালিকা চট্টগ্রাম স্টেশন কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি একই রেটে নন সিডিউল ফেইটার থেকে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ আদায়ের জন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কন্ট্রাক শাখা থেকে ই-মেইল করা হয়। যার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নন সিডিউল ফ্রেইটার থেকে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ আদায় করছে।

তদন্তে দেখা গেছে, নন সিডিউল ফ্রেইটার সিল্ক ওয়ে ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নং-ইউ৩ ৭২২৫ (২৪ নভেম্বর ২০১৭) এর মাধ্যমে বহনকৃত ১৬ হাজার ৬৮৪ কেজি কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবাদ দুই লাখ ৩৩ হাজার ৫২৯ টাকা (পেমেন্ট রিসিট নং- ১৫১৫৪৮), ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে সিল্ক ওয়ে ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নং- ইউ৩ ৭২২৫ (১ ডিসেম্বর ২০১৭) এর মাধ্যমে বহনকৃত ১৮ হাজার ১০৭ কেজি কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবাদ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৫ টাকা (পেমেন্ট রিসিট নং- ১৫২৭৪৮) আদায় করেছে বিমান।

তবে গত ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত নন সিডিউল ফ্রেইটারে বহন করা ইনবাউন্ড ৫ কোটি ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৭০ কেজি এবং আউটবাউন্ড ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৮ কেজি মালামালের হ্যান্ডলিং করে এসব কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ বিমানের আয় হওয়ার কথা ছিল ৯০ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৮ ডলার (প্রায় ৭৬ কোটি টাকা) যা আদায় করা হয়নি।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিমানের অডিট শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, এ অর্থের হিসাব বের করতে কার্গোর সদ্য বিদায়ী মহা ব্যবস্থাপককে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ. এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, বিষয়টি জানার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। নন সিডিউল ফ্রেইটার থেকে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ অর্থ আদায় না হওয়ার বিষয়টি বিমানের সাম্প্রতিক এক অডিটে উঠে এসেছে। বিষয়টি নজরদারিতে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সার্কুলার না থাকার কারণে চার্জ আদায় হয়নি বলে যে দাবি করছে কার্গো কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ সেটি আরও তদন্ত করে দেখা হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র- জাগো নিউজ