Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বিলের পানিতে রোগমুক্তি, গুজবে হাজারও মানুষের ভিড়

bilনেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে এসেছেন রোস্তম-ছমিরন দম্পতি। সঙ্গে এনেছেন একমাত্র ছেলেকে। উদ্দেশ্য ছয় বছরের প্রতিবন্ধী ছেলের রোগমুক্তি। নেত্রকোনা থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় বাসে রওনা হয়ে ত্রিশালে এসে পৌঁছান দুপুরে। অনেক আশা নিয়ে কাদামাটি মাড়িয়ে ছেলেকে কাঁধে করে নামেন স্থানীয় চেচুয়াবিলে। ছেলেকে নিয়ে গুনে গুনে বিলের পানিতে তিনটি ডুব দেন এই দম্পতি। কিন্তু ডুব দেওয়ার পর বারবার ছেলের হাত-পা দেখলেন। ভালো হয়নি।

ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চেচুয়াবিলের পানিতে ডুব দিলে সেরে যায় কঠিন সব রোগ। এমন খবরে রোস্তম-ছমিরন দম্পতির মতো হাজারো মানুষ এসে ভিড় করছেন বিলের পাড়ে। রোগমুক্তির এ গুজবের কারণে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ, পুলিশ লাঠিচার্জ করেও ফেরাতে পারছে না মানুষকে।

chardike-ad

স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) প্রায় একশ’ একরের সরকারি চেচুয়াবিলের মাঝখানে একশ মিটার জায়গাজুড়ে থাকা কচুরিপানা হঠাৎ অন্য জায়গায় সরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এলাকার একশ্রেণির অসাধুচক্র প্রচার শুরু করে, গায়েবি ও অলৌকিক কোনও শক্তি এখানে এসে কচুরিপানা সরিয়ে দিয়েছে। এখানকার পানি পান করলে মনোবাসনা পূরণ হবে এবং সব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কে বা কারা আবার তা ফেসবুকসহ যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রচার করেছে। এ গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশ থেকে সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগী নিয়ে ছুটে আসছে। এত লোক সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে।

bil

সরেজমিন দেখা যায়, জন্ম থেকেই কারও দুই পা নেই, কারও হাত বাঁকা, কেউ বাকপ্রতিবন্ধী, কেউ আবার সিকল দিয়ে বেঁধে মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে এসেছেন। এছাড়াও অনেকে বিভিন্ন রোগী নিয়ে নেমে পড়েছেন নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে। শুধু ডুব দেওয়া নয়, কেউ কেউ ওই পানি খাচ্ছেন, আবার অনেকে বাড়ি ফেরার সময় সঙ্গেও নিয়ে যাচ্ছেন এ নোংরা পানি। কিন্তু এতে রোগমুক্তি তো দূরের কথা, উল্টো বিলের পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে।

এখান থেকে ভালো হয়ে ফিরেছেন এমন কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিলে আসা কয়েকজন জানান, বিভিন্নজনের কাছ থেকে জেনেছেন এই বিলে ডুব দিলে ও পানি খেলে রোগমুক্তি হয়। এ খবর শুনে তারা এখানে চলে এসেছেন।

ডুব দেওয়ার পর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আলমাস নামের একজন বলেন, ‘এখনো পরিবর্তন হয়নি। পানি সঙ্গে করে নিয়েছি, বাড়ি গিয়ে ছেলেকে খাওয়াবো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুস্থ করবেন।’

রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল সরকার বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে বিলে না আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। পানি খেয়ে কিংবা ডুব দিয়ে কেউ ভালো হয়েছেন এমন কাউকে আমরা খুঁজে পাইনি। একটি চক্র এই বিলের কাছের সহজ সরল মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে মাজার তৈরির পায়তারা করছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি।

bilপ্রতিদিন হাজারো মানুষকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল জাকির বলেন, ‘জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেজন্য উপজেলা প্রশাসন মাঠে রয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনতার জন্য তাদের বুঝানো হচ্ছে। আমরা মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করেছি যাতে সত্য বিষয়টা মানুষ বুঝতে পারেন। রোগের জন্য যে নির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে, সেটাই আসল পদ্ধতি। বিকল্প উপায়ে রোগ ভালো হয়ে যাওয়ার ঘটনা শুধু কাল্পনিক বিষয়। এটাই আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, কোনও ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছি। আমরা মেডিক্যাল টিম নিয়ে এসে মানুষকে বুঝাচ্ছি এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে লোকজনকে সরিয়ে দিচ্ছি। একই সঙ্গে এই গুজব ছড়ানো নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করছি কারা এর সঙ্গে জড়িত। তাদের বের করার চেষ্টা চলছে।’ তবে প্রশাসনের তৎপরতায় ব্যাপকভাবে মানুষ বিলে নামতে পারছে না বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার জানান, বিলের পানিতে রোগমুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। কাদাযুক্ত বিলের পানি পান করলে কিংবা গোসল করলে পানিবাহিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।’ এ ধরনের গুজব থেকে সবাইকে সাবধান থাকার আহ্বান জানান তিনি।