Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের প্রতারণার দায় কার?

malaysiaমালয়েশিয়ায় অভিবাসন-প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের প্রায় ৫১ শতাংশই প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অধিকার মর্যাদা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় লড়াই করে চলেছেন অভিবাসীরা। কিন্তু কতটুকু ন্যায়বিচার, অধিকার ও মর্যাদা পেয়েছেন তারা। তাদের এই প্রতারণার শিকার হওয়ার পেছনে কে বা কারা দায়ী?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার জনশক্তি রফতানি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার কথা বললেও বাস্তবতা হলো প্রতিবছরই হাজার হাজার শ্রমিক প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরত আসেন। কতজন শ্রমিকের ক্ষেত্রে এমন হয়ে থাকে, তারও কোনো পরিসংখ্যান নেই বাংলাদেশ সরকার ও দূতাবাসের কাছে। এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে শুধু আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়। এখানে দরকার, মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি। একই সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা রোধে সরকারিভাবে রেজিস্ট্রেশনের যে ব্যবস্থা আছে তা কাজে লাগাতে হবে।

chardike-ad

বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বলছে, এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে তারা শক্ত আইন প্রণয়নের কাজ করছেন।

কাজের জন্য অনেক মানুষ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যান। এই বিপুল কর্মশক্তির একটি অংশ আবার বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে ফেরত আসেন। তাছাড়া তাদের মধ্যে অনেকে অপহরণের শিকার হয়ে মুক্তিপণের মাধ্যমে প্রাণে বেঁচে দেশে আসেন। আবার অনেকে মারাও যান।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার মেন্তারি কোর্ট এলাকায় জামাল (২৮) নামের এক বাংলাদেশি শ্রমিককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কোম্পানির মালিক বাদী হয়ে মামলা করলেও এখনও তার সঠিক কোনও তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। জামালের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কে থামাবে জামালের পরিবারের কান্না?

লিজা বেগম (২৬) তিনি বছর খানেক আগে স্থানীয় দালালের হাত ধরে ট্যুরিস্ট ভিসায় কাজের জন্য গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। পাঁচ মাসের মাথায় নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন জেল খেটে ফিরে আসেন। মালয়েশিয়া থেকে এক কাপড়েই ফিরতে হয়েছে তাকে।

রিপন কুমার বিশ্বাস নামের আরেকজন, বছর খানেক আগে দুই লাখ টাকার বেশি খরচ করে গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখানে আট মাস কাজ করেও কোনও বেতন পাননি তিনি। উপরন্তু বেতন চাওয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন রিপন। এরই মাঝে হারিয়েছেন তার মাকে। পৃথিবী ছেড়ে তার মা চলে গেছেন পরপারে। ছোট্ট দুটি ভাই-বোনের দেখভাল করার কেউ নেই। বাবা থেকেও নেই । এ অবস্থায় দেশেও ফিরতে পারছেন না তিনি। কারণ মালয়েশিয়া সরকার স্পেশাল পাস দিচ্ছে না। সহসা ইচ্ছা করলেই অবৈধরা দেশে ফিরতে পারছেন না।

একদিকে মায়ের শোক। অন্যদিকে ছোট্ট দুটি ভাই-বোনের চিন্তায় দিন কাটছে রিপনের। ঠিক কী পরিমাণ অভিবাসী শ্রমিক এ ধরনের সমস্যার শিকার হয় তার সঠিক কোনও সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও অভিবাসী শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে প্রতি বছর এমন প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরেন অন্তত ৫০ হাজার শ্রমিক।

মালয়া ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক খালেদ শুকরান বলছেন, ‘এই প্রতারণার দায়ভার কেবল দালালদের কাঁধে দেয়ার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রকেও এর দায় নিতে হবে। কোথায় কীভাবে মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে তা খুঁজে সমাধান করতে হবে সরকারেই। বিদেশে যেতে ব্যর্থ শতকরা ১৯ ভাগকে শূন্যতে নামিয়ে আনতে হবে। কারণ, বিলেতফেরত বাংলাদেশিদের সংখ্যাও এখন অনেক বড়।’

বিদেশ থেকে ফেরার পর তাদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন এ গবেষক। এ জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বাড়ানো এবং মধ্যস্থতাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তেনাগা ইন্ট : ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার প্রফেসর নওশাদ আমিন বলেন, বিপুলসংখ্যক অভিবাসন-প্রত্যাশীকে পরিকল্পনামাফিক কাজে না লাগালে তারা দেশের বোঝা হয়ে যাবেন।

তার ভাষ্য, ‘অভিবাসন প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটানো প্রয়োজন। এ জন্য এ বিষয়ের উপর বিভিন্ন সময় হওয়া গবেষণার তথ্য কাজে লাগাতে হবে। যারা স্টুডেন্ট বা ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে থেকে যাওয়ায় অবৈধ হয়ে পড়েন, এটিও একটি প্রতারণা। এ ধরনের প্রতারণা রাতারাতি কমানো যাবে না। রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি দালাল ও এজেন্সিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

‘যদিও উল্লেখযোগ্যহারে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে আগ্রহী কর্মীরা চাকরি নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন, মানসম্মত জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুব্যবস্থা আমরা কতটুকু করতে পেরেছি তা বিবেচনা করা দরকার।’

‘সরকারের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৬ থেকে এ পর্যন্ত মোট বিদেশগামী কর্মীর প্রায় অর্ধেকই ছিলেন অদক্ষ।
ফলে কর্মসংস্থানের বিপরীতে কাঙ্ক্ষিত রেমিটেন্স আনতে আমরা পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। যদি আরও বেশি দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করা যায় তাহলে রেমিটেন্সের হার অনেক বাড়বে’,- বলছিলেন প্রফেসর নওশাদ আমিন।

লেখক- আহমাদুল কবির, সৌজন্যে- জাগো নিউজ