Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

jobaidaনিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে পরিচিত মুখ বাংলাদেশি-আমেরিকান মেরী জোবাইদাকে স্টেট অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ থেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান যিনি এই আসনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রাইমারিতে অ্যাসেম্বলি ওম্যান পদে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন।

প্রার্থিতার মধ্য দিয়ে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন নিউইয়র্কের বর্তমান অ্যাসেম্বলি ওম্যান ক্যাথরিন নোলানকে। অ্যাসেম্বলি ওম্যান ক্যাথরিন দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে এই আসনের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনির ক্যাপিটাল হিলে প্রতিনিধিত্ব করছেন।

chardike-ad

আগামী ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনে বিজয়ী হলে মেরি জোবাইদা প্রথমবারের মতো আলবেনির প্রতিনিধি সভায় যোগ দেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবেন। প্রতিনিধিত্ব করবেন নিউইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ এর। ইতোমধ্যেই দেশটির কমিউনিটিভিত্তিক একাধিক সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে তার প্রার্থিতার খবর প্রকাশ করেছে।

সেই সঙ্গে বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ অন্যান্য কমিউনিটিতে খবরটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স ব্রিজ, লং আইল্যান্ড সিটি, সানি সাইড, উডসাইড, ম্যাসপাথ ও রিজউড নিয়ে অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ আসন। ২০১০ সালের আদমশুমারির হিসেবে এই আসনে ১, ২৯, ১৮৭ মানুষের বসবাস।

জানা গেছে, গত ৩৫ বছর ধরে নিউইয়র্কের অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন ক্যাথরিন নোলান। এমনকি গত এক দশকে কেউ প্রাইমারি নির্বাচনে তাকে চ্যালেঞ্জটুকুও জানায়নি। দশ বছরে এবারই প্রথম ক্যাথরিন নোলান প্রাইমারিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেন।

এদিকে ক্যাথরিন নোলান নিউইয়র্কের জনপ্রিয় রাজনীতিকদের একজন। গত বছর তিনি নিউইয়র্কের স্টেট অ্যাসেম্বলি হাউসের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পান। নিউইয়র্কের শিক্ষা-বিষয়ক কমিটির প্রধান হিসেবে শিক্ষাখাতে নানা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

সম্প্রতি নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে সিটিতে আমাজনের সদর দফতর স্থাপনের পক্ষে অবস্থান করা ক্যাথরিন নোলানের জনপ্রিয়তা সম্প্রতি কিছুটা কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

অপরদিকে বাংলাদেশি-আমেরিকান অ্যাক্টিভিস্ট মেরী জোবাইদা প্রার্থিতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ ইহুদী, জুইস, খ্রীস্টান ও স্প্যানিশ কমিউনিটি তার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন।

মেরী জোবাইদা তার প্রার্থিতা ঘোষণার বিষয়ে জানান, দীর্ঘদিন থেকে দেখেছি ব্যালটে এক জনেরই নাম। ভোটারদের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিষয়টি রীতিমতো বিস্ময়কর। গণতন্ত্রের এ চেহারা আমাকে বিস্মিত করেছে। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।

ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রাইমারিতে নিজের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে মেরী জোবাইদা বলেন, ‘নির্বাচিত হলে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ও পরিবেশ নিয়ে সোচ্চার থাকব। পাশাপাশি স্টেট অ্যাসেম্বলি হাউজ সদস্যদের নির্বাচনের মেয়াদ নির্দিষ্টকরণে কাজ করব। নাগরিকদের সম্পদের বৈষম্য নিয়ে সব সময় সোচ্চার মেরি জোবাইদা বলেন, ‘ধনী-গরিবের সম্পদের ফারাক আমাদের জন্য পীড়াদায়ক।’

নির্বাচনী তহবিল প্রসঙ্গে মেরী জোবাইদা বলেন, ‘আগামী বছরের জুন মাসে দলের প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নির্বাচনী খরচ ব্যয়ে ফান্ড রেইজ করা হবে। আমি জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচন করায় বিশ্বাসী।’ কোনো কালো অর্থ বা আবাসন ও নির্বাচনী দাতাদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা বা অনুদান নেবেন না বলে তিনি জানান।

নিজের প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করে মেরী জোবাইদা বলেছেন, ‘এই দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) আমাকে এত বেশি দিয়েছে যে, আমার মন থেকে আমি এদেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। এই দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে চাই।’ নিজেকে প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট হিসেবে উল্লেখ করে মেরী জোবাইদা বলেন, ‘আমি মানুষের শক্তি আবারও মানুষের কাছে ফেরত দিতে চাই। নিজের ডিস্ট্রিক্টে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে চাই, নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণ চাই।

ব্যক্তিগত জীবনে তিন সন্তানের জননী মেরী জোবাইদা নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড সিটির কোর্ট স্কয়ারে গত দুই দশক ধরে সপরিবারে বাস করছেন। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তিনি পরিচিত মুখ। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে মিডিয়া, কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশনসে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে সাংবাদিকতার পাশাপাশি সেবামূলক বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে আসছেন।

কমিউনিটির পাশাপাশি মূল ধারায়ও তার কাজের পরিধি বাড়িয়েছেন। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে আরবান হেলথ প্ল্যান’র আউটরিচ স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত। এর আগে প্যানোরামা বাংলাদেশ’র ক্যারিয়ার অ্যাডভাইজর, নিউইয়র্কে বাংলা ভাষার অনলাইন টেলিভিশন চ্যানেল টাইম টিভি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার ফিচার রাইটার হিসেবে কাজ করেছেন।

ছাত্র জীবন থেকেই সাংগঠনিক সক্ষমতা অর্জন করেছেন মেরী জোবাইদা। লাগর্ডিয়া কমিউনিটি কলেজ (কিউনি)’র স্টুডেন্ট গভর্নমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভিপি ও এপিআই লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়াও নিউইউয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির কমিটি ফর চাইল্ড কেয়ার’র সিনেটর/চেয়ার ছিলেন। বরিশালে জন্মগ্রহণকারী মেরী জোবাইদা যুক্তরাস্ট্রের অভিবাসী জীবনের আগে ঢাকাস্থ লালমাটিয়া মহিলা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।