
ছবি: বিবিসি ওয়ার্ল্ড
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার এক নির্বাহী আদেশে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নতুন নাম দিয়েছেন “ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার” (যুদ্ধ মন্ত্রণালয়)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ মন্ত্রণালয়টি “ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স” (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়) নামে পরিচিত ছিল।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষকরা দেখছেন তার সামরিক বাহিনীকে নতুনভাবে উপস্থাপন বা রি-ব্র্যান্ডিং প্রচেষ্টার সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে। এর আগে তিনি ওয়াশিংটনে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করেন এবং ২০২০ সালের বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পর নাম পরিবর্তিত হওয়া কয়েকটি সামরিক ঘাঁটির পুরনো নাম পুনর্বহাল করেন।
পেন্টাগনে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন
নির্বাহী আদেশ জারির পরপরই ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সদরদপ্তর পেন্টাগন নামফলক ও পদবির পরিবর্তন শুরু করে। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের দরজায় এখন লেখা হয়েছে “সেক্রেটারি অব ওয়ার”, আর তার ডেপুটি স্টিভ ফেইনবার্গকে বলা হচ্ছে “ডেপুটি সেক্রেটারি অব ওয়ার”।

হোয়াইট হাউসে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন, কারণ এটি মনোভাবের ব্যাপার। মূলত এটি জেতার ব্যাপার।
আইন ও কংগ্রেসের প্রশ্ন
এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে ‘সেক্রেটারি অব ওয়ার’ হেগসেথকে প্রয়োজনীয় আইন ও নির্বাহী পদক্ষেপের প্রস্তাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাধারণত মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করতে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগে। তবে সত্যিই তার কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প। বর্তমানে রিপাবলিকানরা সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে অল্প ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে।
ইতিমধ্যে রিপাবলিকান সিনেটর মাইক লি, রিক স্কট এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য গ্রেগ স্টিউবে শুক্রবার এ পরিবর্তনকে আইনি স্বীকৃতি দিতে একটি বিল উত্থাপন করেছেন।
হেগসেথের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী পিট হেগসেথ বহুদিন ধরেই এ পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন। নির্বাহী আদেশ ঘোষণার পর তিনি বলেন,
আমরা কেবল প্রতিরক্ষায় নয়, আক্রমণেও যাবো। লক্ষ্য সর্বোচ্চ শক্তি, শিথিল আইন নয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ‘ওয়ার ডিপার্টমেন্ট’ নামে পরিচিত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে একীভূত করে কংগ্রেস ‘ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স’ নামকরণ করে। তখন বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, পারমাণবিক যুগে নাম পরিবর্তন শান্তি রক্ষার প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।
খরচ ও সমালোচনা
পুনরায় নাম পরিবর্তন করতে ব্যাপক খরচ হবে বলে জানানো হয়েছে। পেন্টাগন ছাড়াও দেশ-বিদেশের সব সামরিক ঘাঁটিতে সাইনবোর্ড, চিঠিপত্র, সরকারি নথি ও ব্র্যান্ডিং পরিবর্তন করতে হবে।
এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কনফেডারেট নেতাদের নামে থাকা ৯টি ঘাঁটির নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা কেবল সেনাবাহিনীর জন্যই প্রায় ৩৯ মিলিয়ন ডলার খরচের হিসাব দেওয়া হয়েছিল। সেই উদ্যোগ হেগসেথ এ বছর বাতিল করেন। সমালোচকরা বলছেন, নতুন নামকরণ শুধু ব্যয়বহুলই নয়, বরং পেন্টাগনের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি তৈরি করবে।
হেগসেথ অবশ্য একে কেবল শব্দের পরিবর্তন নয়, বরং “যোদ্ধার মানসিকতার প্রতিফলন” বলে বর্ণনা করেছেন।


































