আগামীকাল বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা, কোরবানির ঈদ। ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। গত শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় ঈদুল আজহা পালিত হলেও দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসীরা আগামীকাল ফোনে পরিবার পরিজনের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় করবেন।
মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত এই ঈদ। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দেয়ার প্রস্তুতির শিক্ষাই এই ঈদের শিক্ষা।
ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। শুক্রবার পবিত্র নগরী মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ২০ লাখের বেশি মুসলমান হজ পালন করেছেন। স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী শনিবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কাজ সম্পাদন করেছেন।
প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে। তবে ঈদের পরও দুই দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার ধর্মীয় বিধান আছে।
সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। শরিয়তে সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করার পর আনন্দ থেকেই পালিত হয় ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।
ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে সূরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে- “অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।”
কোরবানির মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া বা খোদাভীতি। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে- “এগুলোর গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।”
রাসূল (সা.) বলেছেন, “ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দীয় নয়।” অন্যত্র বলেছেন, “যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পারও কোরবানি দিলো না সে যেন আমার ঈদগাহে না যায়।”
বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে মানবজাতির সূচনা থেকেই কোরবানির প্রচলন। হজরত আদম (আ)-এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানি দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে- “আপনি তাদেরকে আদম (আ.)-এর দুই ছেলের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়ে কিছু কোরবানি করেছিল, তখন তাদের একজনের কোরবানি গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনেরটি গৃহীত হয়নি” (সূরা মায়েদা-২৭)। তবে ইসলামে যে কোরবানির বিধান তা হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত।
৮৫ বছর বয়সে আল্লাহ তাকে সন্তান দান করলেন। আবার আল্লাহর পক্ষ থেকে সে সন্তানকেই কোরবানি করার নির্দেশ এলো স্বপ্নযোগে। পরীক্ষায় বাপ-বেটা দুইজনেই উত্তীর্ণ হলেন। একজন নিজ ছেলেকে কোরবানি করার জন্য, আরেকজন নিজে কোরবানির জন্য মাথা নুয়ে দিয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালনের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করলেন।
গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা প্রাণী থেকে যেকোনো একটি দিয়ে কোরবানি দেয়া যায়। ৯ জিলহজ হাজিদের আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিন ফজরের নামাজ থেকে ১৩ জিলহজ আসরের নামাজ পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবির উচ্চারণ করা জরুরি- “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।”
কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ আত্মীয়স্বজনকে, আরেক ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন এবং বাকি একভাগ নিজেরা খাওয়া সুন্নত। ঈদুল আজহার দুই রাকাত নামাজ জামাতে আদায় করা ওয়াজিব। কোরবানি ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজের যেকোনো দিন করা যায়।
বাণী: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।