Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মৃত্যুর ওষুধ ইয়াবা

সিউল, ১৫ মে ২০১৪:

ইয়াবাকে আরেক নামে বলা যায় মৃত্যুর ওষুধ। ইয়াবাসেবীরা প্রতিদিন একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে অনেকে ইয়াবা সেবন করে থাকেন। কিন্তু পরে কৌতূহল থেকে পরিবর্তিত হয়ে এ ইয়াবা গ্রাস করে নেয় বিবেক, বুদ্ধি ও জীবন। মরণনেশা ইয়াবা স্বাস্থ্যের জন্য যতটা ক্ষতিকর সমাজের জন্যও ঠিক ততটাই ভয়াবহ।

chardike-ad

다운로드ইয়াবা একটি থাই শব্দ। এর অর্থ হলো ক্রেজি মেডিসিন বাংলায় আকর্ষণীয় বা পাগলা ওষুধ। অর্থ শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এটি মানুষের বিবেক-বুদ্ধি সব লোপ করে দিয়ে তাকে পাগলের মতো আচরণ করতে উদ্ধুদ্ধ করে। ইয়াবার মূল উপাদান মেটামফিটামিন। এর সঙ্গে যোগ হয় উত্তেজক পদার্থ ক্যাফিন। সাধারণত ২৫ থেকে ৩৫ মিলিগ্রাম মেটামফিটামিনের সঙ্গে ৪৫ থেকে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যাফিন মিশিয়ে তৈরি করা হয় ইয়াবা। এ ট্যাবলেটের রঙ সবুজ কিংবা গোলাপি লালচে হয়ে থাকে।

এবার জানা যাক মেটামফিটামিনের ইতিহাস। ১৯১৯ সালে জাপানে সর্দি আর নাক বন্ধের ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার করা হতো। এক সময় মেদভুঁড়ি কমানোর জন্য ইয়াবা ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান, ব্রিটেন, জার্মানি ও আমেরিকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা জেগে থাকতে এবং ক্লান্তি দূর করতে ওষুধ হিসেবেই ইয়াবা খেতেন। যুদ্ধের পর এ ওষুধের বিশাল মিলিটারি স্টক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের হাতে। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় এ ওষুধটি আইনসঙ্গতভাবে তৈরি হতো। পরে দেখা যায়, এক সময় সেখানকার ছাত্রছাত্রী, ট্রাকচালক ও খেলোয়াড়সহ সমাজের একটা বড় অংশই এর প্রতি খুব বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। এর পর গবেষকরা এর ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে থাকেন এবং ১৯৭০ সালে বিশ্বব্যাপী এটি নিষিদ্ধ করা হয়।

ইয়াবার তাৎক্ষণিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া_
* সাময়িক আনন্দ ও উত্তেজনা
* অনিদ্রা, খিটখিটে ভাব
*আগ্রাসী প্রবণতা বা মারামারি করার ইচ্ছা
* ক্ষুধা কমে যাওয়া ও বমি ভাব
*ঘাম ঝরা ও কান-মুখ লাল হয়ে যাওয়া
* শারীরিক কাজের চাহিদা বেড়ে যাওয়া
ইয়াবা সেবনে দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন_
* হৃৎস্পন্দনের গতি, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং শরীরের তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাবে।
* মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলোর ক্ষতি হতে থাকে এবং কারও কারও এগুলো ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়।
* কিছুদিন পর থেকেই ইয়াবাসেবীর হাত-পা কাঁপতে শুরু করে।
* মাঝেমধ্যেই শরীরে খিঁচুনি হওয়া ও যৌন উত্তেজনা লোপ পাওয়া।
* হেলুসিনেশন হওয়া_ হেলুসিনেশন হলে রোগী উল্টাপাল্টা দেখে, গায়েবি আওয়াজ শোনে।
* ইয়াবাসেবীরা তীব্র মানসিক সমস্যায় ভোগে। তারা আশপাশের অনেককেই নিজের শত্রু ভাবতে শুরু করে। অনেক সময় মারামারি ও সন্ত্রাস করতে পছন্দ করে। খিটখিটে ভাব, অহেতুক রাগারাগি, ভাংচুর, নার্ভাসনেসে ভুগতে ভুগতে ইয়াবাসেবীরা এক সময় নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে।
* স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা এবং কারও কারও সিজোফ্রেনিয়া দেখা দেয়।

এছাড়াও যারা প্রতিনিয়ত ইয়াবা সেবন করে থাকেন, তারা দীর্ঘদিন না ঘুমানোর ফলে শারীরিক সমস্যায় যখন তখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন। তাই আর ইয়াবা সেবন নয়। যারা ইয়াবাসেবী আছেন তারা আজ থেকেই ইয়াবাকে না বলুন।

গ্রন্থনা : ডা. মহসীন কবির, জনস্বাস্থ্যবিষয়ক লেখক ও গবেষক