Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মিলানে কারফিউ, আতঙ্কে প্রবাসী বাংলাদেশীরা

milanবিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত কোটি প্রবাসী বাংলাদেশী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সময় কাটছে মারণব্যাধি নভেল করোনাভাইরাস আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মধ্যে। দিন যত যাচ্ছে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের উদ্বেগও বাড়ছে। ইতোমধ্যে শ্রমবান্ধব দেশ হিসেবে পরিচিত ইউরোপের অন্যতম দেশ ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইরান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুত এ ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এতে ওই সব দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেও বিরাজ করছে আতঙ্ক। কোনো কোনো দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

এই অবস্থায় পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে সেজন্য ইউরোপের দেশ ইতালি সরকার রাজধানী রোম থেকে সাড়ে ৭০০ কিলোমিটার দূরের পর্যটননগরী মিলানে কারফিউ করেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আপাতত মিলানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কনসুলেট অফিসও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুধু ইতালিতে নয়, বিশ্বের যেসব দেশে বাংলাদেশী শ্রমিক বেশি যাচ্ছে সেখানে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা কমে আসছে। এতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও আগামীতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে প্রবাসীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিদেশে থাকা প্রবাসীরা ওই সব দেশের সরকারের পক্ষ থেকে যে নিয়মকানুন মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে সেভাবে চললে কোনো অসুবিধা হবে না।

chardike-ad

ইতাালর মিলান শহর থেকে গতকাল মঙ্গলবার প্রবাসী বাংলাদেশী বাবু নয়া দিগন্তকে বলেন, এখানে আসার পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুন্দরভাবেই দিন কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাস রোগটি এসে আমাদের সবকিছু উলটপালট করে দিচ্ছে। আমরা প্রতি মুহূর্তে নানাভাবে সরকারের পক্ষ থেকে আপগ্রেড জানতে পাচ্ছি। এর মধ্যে ইতালির রোম থেকে সাড়ে ৭০০ কিলোমিটার দূরের এই শহরটিতেই সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি।

সরকারিভাবে বলা হচ্ছে ৫২ জন মারা গেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছে ২০০ হাজারেরও বেশি। তবে এখন পর্যন্ত সুস্থ আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতালি সরকার মিলানের ১০টি পৌরসভায় কারফিউ জারি করেছে। কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। এক মাসের খাবার মজুদ রেখেছিলাম। সেটিও প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এখানকার সব হাসপাতাল বন্ধ রাখা হয়েছে। দূতাবাসের কনসুলেট অফিসও আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যেন কেউ ঘর থেকে বের না হয়। আর আসার আগে যেন টেলিফোন করে আসে। মোটকথা পুরো মিলান শহর এখন ভুতুড়ে নগরী। বিপজ্জনক ঘোষণা করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কেউ এ দেশ থেকে কোথাও যেতেও পারবে না (মিলান) আবার আসতেও পারবে না। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসটি চীনের পর সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে মিলান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইরানে। এর আগে গতকাল সন্ধ্যার আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সাথে এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি।

তবে সোমবার সন্ধ্যার পর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সামছুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে করোনাভাইরাস নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে এ নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যে নির্দেশনা দেয়া হবে আমরা সেই মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আর আমাদের কাজ হচ্ছে প্রশাসনিক। তবে শ্রমিকদের কল্যাণ নিয়ে আমাদের মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ড কাজ করে থাকে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেসব দেশে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে সেখানে থাকা আমাদের প্রবাসী শ্রমিকরা যাতে দেশটির সরকারের নেয়া জরুরি সতর্কতাগুলো মেনে চলেন। এর মধ্যে হাত ধোয়া, জনসমক্ষে না যাওয়াসহ অন্যান্য নিয়ম মানলে কোনো সমস্যা হবে না।

প্রসঙ্গত, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখার ক্লিয়ারেন্স নিয়ে প্রতি বছর দেশটিতে নারী পুরুষ মিলিয়ে ছয়-সাত লাখ শ্রমিক যাচ্ছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত যত শ্রমিক বিভিন্ন দেশে গেছেন এবং দেশে ফিরেছেন সেই পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটির মতো বাংলাদেশী শ্রমিক কর্মরত। এ ছাড়াও অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী তাদের পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এ দিকে গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশী যারা বিদেশে চাকরি করেন, জরুরি না হলে এখন তারা দেশে আসা এড়াতে হবে। কারণ আমরা চাই না আমাদের দেশ আক্রান্ত হোক। নিশ্চয়ই প্রবাসী বাংলাদেশীরাও চান না তাদের মাধ্যমে দেশের মানুষ কিংবা পরিবারের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হোন। দেশ ও পরিবারের স্বার্থেই এখন বিদেশে গমনাগমন বন্ধ রাখতে হবে।