ভ্লাদিমির পুতিনের আমন্ত্রণে মস্কোয় শি জিনপিং

 

chardike-ad

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বৃহস্পতিবার (৮ মে) ক্রেমলিনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান। ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ অবস্থার মধ্যেই চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মস্কো পৌঁছেছেন শি।

দুই নেতার মধ্যে একান্ত বৈঠক ও দেশ দুটির প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণে আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ক্রেমলিনের প্রেস সার্ভিস জানিয়েছে, বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কসহ অন্যান্য ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ নিয়ে আলোচনা হবে।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় পুতিন বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়া ও চীনের মধ্যে যে ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে উঠেছিল, সেটিই আজকের কৌশলগত অংশীদারিত্বের ভিত্তি।’

‘আমরা আমাদের সম্পর্ককে উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এগিয়ে নিচ্ছি, কারো বিরুদ্ধে নয়। এই সম্পর্ক সমতা, পারস্পরিক লাভ এবং স্বল্পমেয়াদি উদ্দেশ্যে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত সমঝোতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে,’ বলেন পুতিন।

তিনি আরও বলেন, ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ প্রতিবেশী সম্পর্ক গড়ে তোলা, বন্ধুত্ব জোরদার করা এবং অংশীদারত্ব সম্প্রসারণের আকাঙ্ক্ষা—এগুলো রাশিয়া ও গণচীনের কৌশলগত সিদ্ধান্ত।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রধান মিত্র দেশগুলোর মধ্যে থাকলেও একসঙ্গে সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়ার সুযোগ তেমন হয়নি।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র এবারের সফর সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘গ্রেট প্যাট্রিয়টিক ওয়ারে’ বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে। ৯ মে বিজয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন তিনি।

এটি ২০২৫ সালে দুই নেতার মধ্যে তৃতীয় দফার যোগাযোগ। জানুয়ারিতে ভিডিও কনফারেন্সে ও ফেব্রুয়ারির শেষদিকে ফোনে কথা বলেছিলেন তারা।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাখো মানুষের আত্মত্যাগকে স্মরণ রেখে রাশিয়া ও চীন ঐতিহাসিক সত্য ও যুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা করে চলেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই পবিত্র দিনে আমার প্রিয় বন্ধু শি জিনপিং আমাদের সঙ্গে রয়েছেন, এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সোভিয়েত ইউনিয়নের ২৭ মিলিয়ন মানুষ দেশের জন্য, বিজয়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। চীনেও ৩৭ মিলিয়ন প্রাণ গেছে স্বাধীনতার যুদ্ধে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে এই বিজয় অর্জিত হয়েছিল।’

পুতিন বলেন, নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে এই বিজয়ের তাৎপর্য চিরন্তন। রাশিয়া ও চীন বর্তমান সময়ে নব্য নাৎসিবাদ ও সামরিকবাদবিরোধী সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ।

তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী জাপানের বিরুদ্ধে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চীনে আনুষ্ঠানিক সফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি আনন্দিত।

জবাবে শি জিনপিং বলেন, ইতিহাসের এক মহান বিজয়ের স্মৃতি ও বেইজিং-মস্কোর কৌশলগত একাত্মতা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করেছে।

‘চীনা ও রুশ জনগণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে এক ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছে। তারা বৈশ্বিক শান্তি ও মানবজাতির অগ্রগতিতে এক অবিচ্ছিন্ন অবদান রেখেছে,’ বলেন শি।

রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দেশ দুটি নিজেদের সম্পর্ককে ‘সীমাহীন অংশীদারিত্ব’ হিসেবে বর্ণনা করে। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতাও বেইজিং সবসময় করে আসছে।