Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

হাঁটলেই হবে

স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যাণে বিদেশী একটি সেলফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখে থাকবেন অনেকেই। ওই বিজ্ঞাপনের মূল স্লোগান ছিল ‘ওয়াক অ্যান্ড টক’। অর্থাত্ সেলফোনে কথা বলার সময়টুকুতে হাঁটুন। ফোন কোম্পানিগুলোর নানা অফারের বদৌলতে সেলফোনে কথা বলার প্রবণতা যে ব্যাপক হারে বেড়েছে, এ কথা অনস্বীকার্য। এমনকি অনেককে বিছানায় গা এলিয়ে অথবা সোফায় পিঠ হেলিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেলফোনে কথা বলতে দেখা যায়। বিজ্ঞাপনে এ কথা বলার সময়টুকুতে বসে বা শুয়ে না থেকে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলার পরামর্শ দেয়া হয়। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের শেষাংশে দেখানো হয়, এ অভিনব ‘আইডিয়া’ অনুসরণের ফলে সেলফোন ব্যবহারকারীরা শারীরিকভাবে আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘ফিট’ হয়ে উঠেছেন।

মূলত আলোচ্য কোম্পানির প্রচারণার জন্যই বিজ্ঞাপনটির সৃষ্টি; কিন্তু এর অন্তর্নিহিত বক্তব্যটিও রসিকতার ঢঙে উপস্থাপন করা হলেও বেশ গুরুত্ব বহন করে। অনেক আগে থেকেই চিকিত্সক ও বিজ্ঞানীরা মেনে আসছেন, হাঁটাই সর্বোত্কৃষ্ট ব্যায়াম। সব বয়সের মানুষের জন্য উপযোগী এ ব্যায়াম সবচেয়ে কম খরচে শারীরিকভাবে ভালো থাকার অন্যতম উপায়। জন্মের এক বছরের মাঝেই শিখে নেয়া এ ব্যায়াম ঘরে-বাইরে যে কোনো জায়গায় করা যায়, ব্যক্তির শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী এর তীব্রতা বাড়ানো-কমানো যায়, উপযুক্ত পোশাক ও এক জোড়া ভালো জুতো ছাড়া এর জন্য আর কোনো অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রয়োজন পড়ে না।

chardike-ad

walkingহূদযন্ত্রের সুরক্ষা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত হাঁটার ফলে হূদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ে। হূদযন্ত্র স্বল্প চেষ্টায় দেহে অধিক পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে পারে এবং ধমনীর ওপরও চাপ কম পড়ে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটা অনেকটা রক্তচাপরোধী ওষুধের মতোই কাজ করে। এছাড়া হাঁটার ফলে রক্তে ‘খল কোলেস্টেরল’ নামে পরিচিত লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন কমে যায়। এ কোলেস্টেরল পরিমাণে বেড়ে গেলে তা ধমনীর গায়ে জমা হয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭২ হাজার নারীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে অন্তত ৩ ঘণ্টা অথবা দৈনিক আধঘণ্টা করে হাঁটেন, তাদের ক্ষেত্রে হূদরোগের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ কম।

ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস: যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিস প্রিভেনশন প্রোগ্রামের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা আর দৈহিক ওজন ৭ শতাংশ কমানোর মাধ্যমে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৫৮ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়। অন্যদিকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, দৈনিক ১ ঘণ্টা করে সপ্তাহে পাঁচদিন হাঁটার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে।

হাড়ের ক্ষয় ও ভাঙন রোধ: গবেষণায় দেখা গেছে, রজঃনিবৃত্তি-পরবর্তী বয়সে যেসব নারী প্রতিদিন অন্তত এক মাইল করে হাঁটেন, তাদের হাড়ের ঘনত্ব কম সচল নারীদের তুলনায় বেশি। হাঁটার ফলে যেমন হাড় ক্ষয়ের প্রবণতা কমে, তেমনি আর্থ্রাইটিসসহ হাড়ের নানা রোগ হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন: হাঁটার ফলে ভালো লাগার অনুভূতি জাগে মনে, মানসিক চাপ বোধ হয় কম। এ সময় শরীরে এন্ডোরফিন নামের রাসায়নিকের ক্রিয়া বেড়ে যায় বলে ঘুম হয় আরামদায়ক। মেডিসিননেট ডটকম ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেছেন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩-৫ মিনিট হাঁটার ফলে বিষণ্নতার উপসর্গ ৪৭ শতাংশ কমে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী সপ্তাহে অন্তত দেড় ঘণ্টা হাঁটেন, তাদের বোধশক্তি সপ্তাহে ৪০ মিনিটের কম হাঁটা নারীদের তুলনায় বেশি।

ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে সপ্তাহে দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টা হাঁটেন, তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি যারা হাঁটেন না তাদের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম। ব্রিটিশ জার্নাল অব ক্যান্সার স্টাডিতে প্রকাশিত আরেক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাঁটার ফলে খাদ্যনালীর নিম্নাংশের ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ কমে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ ও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি: স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার ও নিয়মিত হাঁটা দীর্ঘমেয়াদি ওজন নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মূল চাবিকাঠি। হাঁটার মাধ্যমে শারীরিক সক্ষমতা বাড়ে। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও সবলতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত হাঁটা প্রয়োজন।

হাঁটার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। যে কোনো ধরনের হাঁটাই উপকারি। তবে প্রকৃত সুফল পাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন আধঘণ্টা করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন মধ্যম গতির হাঁটার উপদেশ দেন। তবে কোনো ধরনের শারীরিক অসুস্থতা থাকলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন, কতটুকু হাঁটা আপনার জন্য উপযোগী। বণিকবার্তা থেকে নেওয়া।