
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী-ফাইল ছবি
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাভাষীদের ‘হেনস্তা’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। “কেউ বাংলায় কথা বললে তিনি বাংলাদেশি হয়ে যান না” এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি।
দিল্লির বসন্তকুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনিতে বাংলাভাষী পরিবারগুলোকে বাংলায় কথা বলার কারণে নিশানা করা হচ্ছে, তাদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেওয়া হচ্ছে, জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবার মতো মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের জোর করে ওই অঞ্চল থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে–– বৃহস্পতিবার দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে এমন একাধিক অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী লিখেছেন, নয়াদিল্লির বসন্তকুঞ্জের ‘জয় হিন্দ’ কলোনি থেকে উঠে আসা একের পর এক ভয়ঙ্কর হেনস্তার ঘটনার খবর শুনে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও বিচলিত। এই বসতি মূলত সেই বাংলাভাষী মানুষেরা তৈরি করেছেন, যারা দিল্লিকে গঠন করার অসংগঠিত শ্রমশক্তির গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ।
এরপরই মমতা লিখেছেন, বিজেপি পরিচালিত সরকারের নির্দেশে তাদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিন কয়েক আগে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে এবং ইলেকট্রিসিটি মিটার তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, তারা নিজেদের টাকায় যে প্রাইভেট পানির ট্যাঙ্কারের ব্যবস্থা করেছিলেন, তা দিল্লি পুলিশ এবং আরএএফ-এর সহায়তায় আটকে দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে একপ্রকার জবরদস্তি উচ্ছেদ চলছে, যদিও এই বিষয়ে গত ডিসেম্বরেও একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দিল্লি পুলিশের হস্তক্ষেপের পর আদালতে এ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আশ্রয়, পানি ও বিদ্যুৎ, এই মৌলিক অধিকারগুলো যদি এইভাবে পদদলিত করা হয়, তাহলে আমরা কীভাবে নিজেদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বলে দাবি করব?
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গে দেড় কোটিরও বেশি অন্য রাজ্য থেকে আসা শ্রমিক রয়েছেন, যারা সম্মানের সঙ্গে বসবাস করেন। কিন্তু বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে সেই কথা জোরের সঙ্গে বলা যায় না, যেখানে বাংলাভাষীদের নিজের দেশেই অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেউ বাংলায় কথা বললে, তিনি বাংলাদেশি হয়ে যান না। ভাষা নির্বিশেষে তারা ভারতেরই নাগরিক, যেকোনো ভারতীয় নাগরিকের মতোই সমান অধিকারসম্পন্ন।
পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার যেসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এবার সেই বাংলাবিরোধী অপচেষ্টাকে দেশের অন্যান্য প্রান্তে শুরু করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। গুজরাট, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা ও মধ্যপ্রদেশ থেকেও বাংলাভাষীদের উপর নিপীড়ন করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখন সেই বিদ্বেষের ছায়া এসে পড়েছে দেশের রাজধানীতেও।
সবশেষে মমতা লিখেছেন, এই দেশেই বাংলার মানুষ যদি অনাহূত অতিথির মতো আচরণের শিকার হন, তাহলে আমরা চুপ করে থাকব না। বাংলা সমস্ত নির্যাতিত কণ্ঠের পাশে দাঁড়াবে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সর্বত্র আওয়াজ তুলব।
তবে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চললেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা বাধা দিচ্ছে, কারণ তাদের ভোট ব্যাংক রাজনীতি জড়িত।
বিজেপি নেতা অমিত মালব্য জানান, “বেশিরভাগ ভুয়া আধার ও রেশন কার্ড উত্তর ২৪ পরগনা থেকেই ইস্যু করা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশিরা ভারতে অবস্থান করছে।”
তিনি মমতাকে উদ্দেশ করে বলেন, “বাংলাকে অপমান করা বন্ধ করুন। অবৈধ বসতি রক্ষা করা বন্ধ করুন।”
জয় হিন্দ কলোনি প্রসঙ্গে বিজেপির দাবি, ওই বসতি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। আর সেখানে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা আইনি প্রক্রিয়া মেনেই হয়েছে। তাঁদের আরও দাবি, সম্প্রতি ওই এলাকা থেকেই ২৬ জন অবৈধ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিজেপির যুক্তি, শুধু বিজেপি নয়, কেরালা ও তামিলনাড়ুর মতো বিরোধী দল পরিচালিত রাজ্যও অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করছে। অথচ তৃণমূল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই প্রচেষ্টাকে বাধা দিচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা







































