Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

স্বৈরাচার বিদায় করেছি, হাসিনাকেও বিদায় করব : খালেদা

80318_Nilphamariআওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। শেখ হাসিনাকে বিদায় করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। একদলীয় বাকশাল, একদলীয় শাসন নয়, বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। আওয়ামী লীগকে বিদায় করে ঘরে ফিরব। সময়মতো আন্দোলনের ডাক দেব। এবার আর ব্যর্থ হবো না। অবশ্যই আগের মতোই জয়ী হব। রক্ত দেয়ার জন্য তৈরি আছি। স্বৈরাচার এরশাদকে বিদায় করেছি। হাসিনাকেও বিদায় করব।

তিনি আজ নীলফামারী জেলা ২০দলীয় জোটের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

chardike-ad

খালেদা জিয়া বলেন, সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকা করতে হয়। প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে। আগামী ৩০ তারিখ নাটোরে জনসভা আছে। জনগণের সাথে যোগাযোগ করে নিচ্ছি। আন্দোলন হবে, আওয়ামী লীগকে বিদায় করে ঘরে ফিরব।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন ‘অথর্ব’ আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এ কমিশনকে দিয়ে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়। এ কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন করতে হবে, যারা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে। পুলিশ প্রশাসনকেও নিরপেক্ষ না করলে কোনো দিন ভোটের অধিকার ফিরে পাবে না জনগণ।

তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রে মানুষ না থেকে কুকুর বসে থাকে। তারা আবার জনপ্রতিনিধি হয় কীভাবে। এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এ অবৈধ সরকার নতুন নতুন আইন করছে। সম্প্রচার নীতিমালা করছে। নির্বাচিত না হয়ে কোনো আইন করা যায় না। জনবিচ্ছিন্ন হয়েই সরকার নতুন নতুন আইন করছে।

তিনি বলেন. গণতান্ত্রিক সরকার নেই বর্তমানে। তারা অবৈধ। এরা নির্বাচিত সরকার নয়। নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশ পরিচালনা করার অধিকার তাদের নেই। অবিলম্বে নির্বাচন দিতে হবে।
২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর উপনির্বাচনগুলোতে যেভাবে ভোটকেন্দ্র দখল, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে না দেয়া, যুলুম নির্যাতন করা হয়েছে- তখন কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নাই। এমনকি এই অবৈধ সরকারের আমলে উপজেলা নির্বাচনে ভোটের বাক্স ছিনতাই করে, আগের দিন রাত তিনটার সময় ব্যালট বাক্স ভরে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করেছে। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকার মিথ্যার উপর ভর করে টিকে আছে। তাদের সাথে জনগণ নেই। জনগণ আছে বিএনপির সাথে।

এর আগে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে তিনি নীলফামারী জেলা স্কুল মাঠে পৌঁছান। চারটার দিকে তিনি বক্তব্য দেয়া শুরু করেন।

জেলা বিএনপির আহবায়ক আনিসুল আরেফীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে নীলফামারী হাইস্কুল মাঠে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় শুরু হওয়া এ জনসভায় জোটের স্থানীয় ও জাতীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

এর আগে জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বহনকারী গাড়িবহর দুপুর ২টার দিকে নীলফামারী সার্কিট হাউজে এসে পৌঁছায়।

এদিকে, ২০দলীয় জোটের এ জনসভাকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার বিএনপি ও ২০দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে।

দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হলেও সকাল থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য নীলফামারী হাইস্কুল বড় মাঠের দিকে আসতে থাকে। সৈয়দপুরের পর থেকেই বিশেষ করে নীলফামারীর প্রবেশমুখ দাড়োয়ানী এলাকা থেকে জনসভা স্থলের ১২ কিলোমিটার রাস্তায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর জনতার ভীড় ঠেলে আসতে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় লাগে।

দুপুর গড়ানোর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে জনসভার বিশাল মাঠ। সকাল থেকে ২০দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আধিক্য চোখে পড়ে। মাথায় জামায়াতের পট্টি বেধে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে মাঠের দিকে আসেন। এরপর অন্য শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের নেতাকর্মীরা মাথায় লাল টুপি ও লাল জামা-গেঞ্জি পড়ে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। জাগপারও বেশ কিছু নেতাকর্মীকে রঙিন পোষাকসহ সমাবেশের দিকে মিছিল নিয়ে আসতে দেখা যায়।

বেলা সোয়া ৩টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সমাবেশের মঞ্চে আসেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাসসহ সিনিয়র নেতারা জনসভায় বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া শরিক জোটের নেতাদের মধ্যে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অব. অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, ইসলামী ঐক্যজোটের মওলানা আবদুল লতিফ নেজামি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মওলানা ইসহাক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আব্দালিব রহমান পার্থ, সাম্যবাদী দলের আবু সাইদ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মজিবর রহমানসহ ২০দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।

স্থানীয় নেতাদের মধ্যে, জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি মওলানা আবদুর রশিদ, বিএনপিসহ সভাপতি আলমগীর সরকার, সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, সৈয়দপুর পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার ভজে, জলঢাকা উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী, ডোমার পৌরসভা মেয়র মনসুরুল ইসলাম দানু, জেলা বিএনপি নেতা মীর সেলিম, মোস্তফা ফিরোজ প্রমুখ বক্তব্য দেন।