Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অস্ত্র দিয়েই দমন করা হবে : বিবিসি সংলাপে খাদ্যমন্ত্রী

kamrulআওয়ামী লীগ নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বিএনপির চলমান আন্দোলনকে সন্ত্রাস আখ্যায়িত করে বলেছেন অস্ত্র দিয়েই এ সন্ত্রাস দমন করা হবে এবং শিগগিরই দেশের পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।

বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

chardike-ad
তবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেছেন অস্ত্র বা শক্তি দিয়ে রাজনৈতিক সংকটের সমাধানের সুযোগ নেই।

রোববার দুপুরে রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংলাপের এবারের পর্বে মূলত বাংলাদেশের চলমান সহিংস পরিস্থিতির গন্তব্য, সহিংসতার দায় এবং সমাধানের সম্ভাবনার মতো বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে এসেছে।

সংলাপের এবারের পর্বে আরও আলোচক ছিলেন বাংলাদেশর কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রথম প্রশ্ন করেন সানফিরা সাদমানি।

তিনি জানতে চান চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রতিনিয়ত প্রাণহানি আর সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির জন্য আমরা কাদেরকে দায়ী করতে পারি ?

জবাবে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “সারাদেশেই সব মানুষের জন্য আতঙ্ক ও উদ্বেগের বিষয় যে সহিংসতা চলছে এবং ক্রমাগতভাবে তা বাড়ছে। সহিংসতা বন্ধ হওয়ার কোন নিশানা দেখা যাচ্ছেনা। উভয় রাজনৈতিক শক্তিই এ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী।”

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “সংকটটা রাজনৈতিক। দেশের সাধারণ মানুষ এ সংকট তৈরি করেনি। এটা রাজনৈতিক সংকট আর তাই রাজনৈতিক ভাবেই এর সমাধান করতে হবে। দু প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে, আর তা হলো- আমরা স্বাভাবিক জীবন ও স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার চাই।”

কজন দর্শক বলেন, “দু পক্ষেরই দায় আছে। তবে যেহেতু বিএনপি অবরোধ ডেকেছে, তাই তাদের দায় বেশি”। আরেকজন দর্শক বলেন, “অগণতান্ত্রিক শাসনের কারণেই এ ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছে”।

রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার কারণেই চলমান রাজনৈতিক সংকটের সূচনা হয়েছে। মূলত সংকটের জন্য সরকার দায়ী। কারণ তারাই এ সংকটের সূচনা করেছে। তবে যারা রাজনীতি করছেন তারা সবাই কমবেশি দায়ী”।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির যৌক্তিকতা এখন আর নেই। এখন পরিস্থিতির জন্য আমাদের কোন দায়িত্ব নেই। তারা ভুল করেছে নির্বাচনে না গিয়ে তার খেসারত জনগণ কেন দেবে”?

তিনি বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল তার চরিত্র পাল্টিয়ে তাদের সাথে সমঝোতার কোন প্রশ্ন উঠেনা। তাদের রাজনৈতিক চরিত্র আর নেই। তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।”

কামরুল ইসলাম বলেন, “সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে। এ দায়িত্ব সরকারের। শিগগিরই এ অবস্থার পরিবর্তন হবে।”

১/১১ র দিকে যাত্রা ?
মো: আলাউদ্দিন জানতে চান বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় দুই প্রধান রাজনৈতিক জোটের অনমনীয় অবস্থান কি বাংলাদেশকে আবার ১/১১ র মতো পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে ?

রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেন, “মারাত্মক অনিশ্চয়তা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যারা গুম খুনের সাথে জড়িত তারা দেশকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে।”

কামরুল ইসলাম বলেন, “পরিকল্পিতভাবে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য এ সহিংসতা করা হচ্ছে। এটা কোনো আন্দোলন নয়। আমরা সন্ত্রাসীদের নির্মূলের চেষ্টা করছি। এক সপ্তাহের মধ্যেই তা হবে”।

একজন দর্শক বলেন, “এতো দমন পীড়ন কেন হচ্ছে বিএনপির ওপর?”

আরেকজন দর্শক বলেন, “সরকার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?”

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “ দেশের পরিস্থিতি কেমন হবে তা নির্ভর করবে দলগুলোর ওপর।১/১১ কোনো সমাধান নয়।”

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “উভয় পক্ষ নমনীয় না হলে একপক্ষ সহিংসতা আর অন্য পক্ষে পুলিশি রাষ্ট্র করবে। এটার অবধারিত পরিণতি হবে পরস্পরকে নির্মূল নয়, বরং তারা আত্মহননের দিকে চলে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিলো আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে। আবার এখন বলা হচ্ছে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আর বিএনপির কি হবে জানিনা কিন্তু দেশের গণতন্ত্রের ভাগ্য নিশ্চিহ্ন করার দিকে নেয়া হচ্ছে।”

অভিযান নাকি আলোচনা – সমাধান কোন পথে ?
মো: আলাউদ্দিন জানতে চান, “আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মধ্যেই কি বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান নিহিত, নাকি রাজনীতিবিদরা আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করতে পারবেন?”

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “রাজনৈতিক সংকটের সমাধান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করতে পারবে না, দলগুলোকেই করতে হবে।”

কামরুল ইসলাম বলেন, “এ সমস্যা রাজনৈতিক নয়। এটা রাজনৈতিক সংকট নয়। এটা সন্ত্রাস অরাজকতা। এটা জনদুর্ভোগ। আলোচনার মাধ্যমে এর মীমাংসা করা যায়না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ভূমিকা দিয়েই এর সমাধান করতে হবে”।

রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেন, “ অত্যাচার নির্যাতন পাকিস্তান বাহিনীর চেয়ে বেশি কেউ করেনি। কিন্তু টিকতে পারেনি। এখন যারা বিএনপিকে সন্ত্রাসী বলতে চায় একদিন তারাই বিলীন হয়ে যাবে”। সংকটের সমাধান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ আমি আশাহীন নই। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই দেখে দেশের অবস্থা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ নিবেন।”

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “বিএনপিকে জামায়াতকে ত্যাগ করতে হবে। আওয়ামী লীগকে এরশাদকে ত্যাগ করতে হবে। এরপর সমঝোতার জন্য জাতীয় সংলাপ কিভাবে করা যায় সেটি দেখতে হবে।”

স্থায়ী সমাধান দরকার
সাইফুল ইসলাম শিমুল জানতে চান নির্বাচন নিয়ে গভীর সংকটের মুখোমুখি হওয়ার যে একটি অবস্থা বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের সাময়িক পথ না খুঁজে সবার কি উচিত এখনই একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে যাওয়া ?

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “এখন যা চলছে সেটি ক্ষমতা কেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব। সমাধানের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থাকে আমূল ঢেলে সাজাতে হবে।”

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “স্থায়ী সমাধান হচ্ছে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা। জামায়াতের কারণেই বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। তবে যারা সন্ত্রাস করছে তাদের সাথে আলোচনা হতে পারে না। কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা হবে।”

রফিকুল ইসলাম মিঞা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। তার আশা প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজনৈতিকভাবেই সমাধানের উদ্যোগ।– বিবিসি