Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যেমন ছিল প্রথম বিশ্বকাপ

world cup 1stবিশ্বকাপের রঙে রঙিন এখন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। এ রঙ ছড়িয়ে পড়েছে ক্রিকেটপ্রেমী দেশগুলোতেও। চারদিকে এখন ব্যাট-বলের জয়োত্সব। মাঝ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ টুর্নামেন্ট চলবে মার্চের শেষ অবধি। আজকের ক্রিকেটের বিশ্ব আসর বেজায় জাঁকজমক ও চমকে ঠাসা। কিন্তু কেমন ছিল প্রথম বিশ্বকাপ? বর্তমানের থেকে বেশ ভিন্ন ছিল ১৯৭৫ সালে আয়োজিত সেই আসর।

এখন ধোনি-ক্লার্ক-মাশরাফিরা মাঠে নামেন হরেক রঙের জার্সি গায়ে, যা একই সাথে বিভিন্ন দেশেরও প্রতিনিধিত্ব করে। তবে প্রথম বিশ্বকাপটি ছিল একদমই সাদা-কালো। তাতে খেলোয়াড়রা টেস্টের মতোই সাদা পোশাকে নামতেন। অবশ্য কোনো কোনো ক্রিকেটারের মনে রঙ ঠিকই লেগেছিল। যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা সেসময় পরতেন রঙিন টুপি। রৌদ্রের হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করা এসব গোলাকার ‘হ্যাট’ ছিল ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের ট্রেডমার্ক। গর্ডন গ্রিনিজ পরতেন হালকা নীল রঙের টুপি। অন্যদিকে রয় ফ্রেডেরিকের আবার পছন্দ ছিল সাদা রঙ। আর আলভিন কালিচরণের মাথায় থাকতো উজ্জ্বল লাল রঙের হ্যাট।

chardike-ad

১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপটি ‘প্রুডেনশিয়াল কাপ’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। ৭-২১ জুনের মধ্যেই হয়ে গিয়েছিল এর ফাইনালসহ সবগুলো ম্যাচ। প্রুডেনশিয়াল ইন্সুরেন্স কোম্পানি ছিল এ টুর্নামেন্টের প্রধান স্পন্সর। অংশ নিয়েছিল ৮টি দেশ। এদের মধ্যে ছিল টেস্ট খেলুড়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এছাড়াও অংশ নিয়েছিল শ্রীলংকা ও তত্কালীন পূর্ব আফ্রিকা। আটটি দল দুইটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলায় অংশ নিয়েছিল। প্রতি গ্রুপে পড়েছিল ৪টি করে দল। নিজেদের মাঝে খেলার শেষে প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল উঠেছিল সেমি-ফাইনালে। আর তা থেকে দুইটি দল ফাইনালে। দলের মতো মোট ম্যাচের সংখ্যাতেও তাই ১৯৭৫ থেকে অনেক এগিয়ে ২০১৫। এবার মোট ম্যাচ হচ্ছে ৪৯টি। আর ঠিক ৪০ বছর আগে বিশ্বকাপের প্রথম আসরে সাকুল্যে হয়েছিল মাত্র ১৬টি ম্যাচ!

এখনকার মত ক্রিকেট নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর তখন এত মাতামাতি ছিল না। তাই বোকা বাক্সের কথা খুব বেশি ভাবেননি আয়োজকরা। এক এক দিনে তাই কখনো ৪টি ম্যাচও হয়েছে। তবে এর পেছনে আবহাওয়ারও হাত ছিল। ধারণা করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের খামখেয়ালী আবহাওয়া ভেস্তে দিতে পারে অনেক ম্যাচ। শেষতক অবশ্য ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চেয়েছিলেন। রৌদ্রজ্জ্বল পরিবেশেই হয়েছিল বেশীরভাগ ম্যাচ।

১৯৭৫ সালের সেই বিশ্বকাপের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল ওভালে ডেনিস লিলি ও কালিচরণের মধ্যকার দ্বৈরথ। গ্রুপ পর্বে হওয়া সেই ম্যাচে লিলির ১০ বল থেকে ৩৫ রান তুলেছিলেন কালিচরণ। চিত্রটা ছিল এরকম- ৪, ৪, ৪, ৪, ৪, ১, ৪, ৬, ০, ৪! লিলিও কম যান না। সেই ম্যাচে ৭৮ রান করা এ ব্যাটসম্যানকে আউট করেই মিটিয়েছিলেন তার অপমানের জ্বালা। তবে ম্যাচ জিতেছিল ক্যারিবীয়রাই। জিতেছিল ফাইনালও।

প্রথম আসরে একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ ছিল ৬০ ওভারে। ছিল না আজকের মতো ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতা। ছিল না ফিল্ডারদের বৃত্তাকারে সাজানোর চল। বোলাররা ইচ্ছেমতো দিতে পারতেন বাউন্সার। এতে ছিল না কোনো বিধি-নিষেধ। রান তোলার গতি তো ছিল আরও চিত্তাকর্ষক। আসলে সেই একদিনের ম্যাচগুলো ছিল টেস্ট ক্রিকেটেরই সংক্ষিপ্ত রূপ। এখন এবি ডি ভিলিয়ার্স-ব্রেন্ডন ম্যাককুলামরা কত কম বলে রান করা যায়, তার প্রতিযোগিতায় নামেন হরহামেশা। আর ১৯৭৫ সালের ফাইনাল ম্যাচে ব্যাটসম্যান রোহান কানহাই ১১ ওভারে তোলেননি একটি রানও! এখনকার যুগে এ ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট দলের কোচিং স্টাফরা নিশ্চয়ই হার্ট অ্যাটাকই করতেন! তাই বলে রান যে একদমই উঠতো না তা নয়। ১৯৭৫-এ হয়েছিল ৪টি ৩০০ ছাড়ানো স্কোরও। এর মধ্যে ছিল ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সেই বিখ্যাত ৩৩৪, যার জবাবে ৩ উইকেটে ১৩২ রান করেছিল ভারতীয়রা। পুরো ৬০ ওভার ব্যাট করে সুনীল গাভাস্কার অপরাজিত ছিলেন ৩৬ রানে।

এখন ক্রিকেট বদলে গেছে অনেক। এসেছে নতুন নতুন নিয়ম ও উন্নত প্রযুক্তি। তবে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ কিন্তু আছে ঠিক আগের মতই। তাতে বদল আসেনি একটুও।

সূত্র: ক্রিকইনফো