Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পরিবারকে ভালো রাখতে ২০ ঘণ্টা কাজ

zahidকাজে যোগ দিতে হয় সন্ধ্যা সাতটায়। পরের দিন সকাল সাতটায় ছুটি। ছুটি না বলে যায় ফের নতুন কাজে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি। বেশ কিছুটা দূরে খণ্ডকালীন কাজ। সময় দিতে হয় আরও আট ঘণ্টা। নিজের জন্য সময় বলতে চার ঘণ্টা। এ সময়ের ভিতরেই ঘুম, অন্য আনুষঙ্গিক কাজ।

অনেকটা অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি, পরিবারকে ভালো রাখতে প্রবাসে এভাবেই দিন কাটছে জসিম উদ্দিনের।

chardike-ad

অভাব ঘুচিয়ে দেশে প্রিয় স্বজনের মুখে হাসি ফোটাতে প্রবাসে বিরামহীনভাবে কাজ করেন অনেক প্রবাসী শ্রমিক। তাদের দিনরাত পরিশ্রম আর রক্ত পানি করা অর্থে দিন দিন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার সমৃদ্ধ হলেও নিজেরা সয়ে যাচ্ছেন বঞ্চনা।

তাদেরই একজন জসিম উদ্দিন (৪৫)। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরপার্বতী গ্রামের মুর্শিদুর রহমানের ছেলে। পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন কুয়ালালামপুরের আমপাঙ এলআরটি (লাইট ট্রেন ট্রানজিট) ষ্টেশনে। থাকেন পুডোতে।

পর্যটক ভিসায় ২০০৭ সালে এসেছিলেন মালয়েশিয়ায়। উদ্দেশ্য বেড়ানো নয়, কাজ করে নিজের পরিবারের অভাব ঘোঁচানো। ছিলেন অবৈধ শ্রমিক। পরে সরকারের দেওয়া সুযোগ নিয়ে হয়েছেন বৈধ।

এখানে ১২ ঘণ্টা ডিউটি। সন্ধ্যা সাতটায় কাজে যোগদান, পরদিন সকাল সাতটায় ফেরা। বছরের পর বছর ধরে এই রুটিনে এলআরটি ষ্টেশনে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন তিনি। মালয়েশীয় মুদ্রায় বর্তমান বেতন ১ হাজার ৩০ রিঙ্গিত। যার বাংলাদেশি মান প্রায় সাড়ে ২২ হাজার টাকা। থাকা খাওয়া নিজের। তবে স্টেশনে চাকরির সুবাদে ট্রেনে চেপেই বিনামূল্যে কর্মস্থলে যাওয়া-আসার সুযোগ রয়েছে তার।

তবুও এ টাকায় প্রবাসে বাসা ভাড়া, খাওয়া খরচা বাদে নিজের হাতেই বা অবশিষ্ট কি থাকে। আর দেশেই বা পাঠাবেন কি?

তাই বাড়তি উপার্জনের জন্যে জসিম উদ্দিনকে ছুটতে হয় অন্যত্র। পুডো থেকে বেশ দূরত্বে বাংছারে একটি ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে। সেখানে খণ্ডকালীন কর্মী হিসেবে কাজ নিয়েছেন তিনি। এখানে আট কর্মঘণ্টা সময় দিতে হয় তাকে। বেতন সাড়ে আট’শ রিঙ্গিত। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯ হাজার। এই টাকাটাই তিনি দেশে পাঠান প্রিয় পরিবার পরিজনের কাছে।

দুটো কাজ করতে গিয়ে গিয়ে দিন রাতের ২৪ ঘণ্টার ২০ ঘণ্টাই জসিমের চলে যায়। তাহলে তিনি ঘুমান কখন! দুটো কর্মস্থলেই বা যাওয়ার সময় দেন কখন?

‘এটাই তো কেউ বুঝতে চায় না। এর মধ্যেই বিরতির সময় একটু জিরিয়ে নেই।’- জীবনকে যন্ত্রে পরিণত করা এমন আরও অনেক জসিম উদ্দিনের দেখা মিলবে এদেশে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কিংবা রক্ত পানি করা পরিশ্রমের বিনিময়ে সামান্য অর্থ উপার্জনের গল্পটি-ও সবাই মোটামোটি একই ধরনের।

আমার জীবন তো শেষ। দুটো সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই কষ্ট করছি। ওরা যদি একটু সুখে শান্তিতে থাকে এ আশায়। বলেন জসিম।

কথার এক পর্যায়ে ঝাপসা হয়ে আসে জসিম উদ্দিনের দুটি চোখ। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া মাহিনুর রহমান আর তিন বছরের তুহিনের কথা। তিন বছর ধরে চোখের আড়ালে ওরা। প্লাটফর্মে ট্রেন আগমনের শব্দ! সবাই ব্যস্ত নিজ গন্তব্যে। কিন্তু জসিম উদ্দিনদের নিয়তির গন্তব্য এটাই। সবাইকে পরিচ্ছন্ন স্টেশনে ট্রেনে তুলে দেওয়া।

দেশ, রাষ্ট্র, নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে নানা চাওয়া-পাওয়ার হিস‍াব মেলাতে মেলাতে গলা ধরে আসা জসিমদের দুই চোখ উত্তর খুঁজছিলো নানা প্রশ্ন।

সৌজন্যেঃ বাংলানিউজ২৪