Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আমাকে আপনি চিনেন?

police-mobile-court‘ভাই আপনি আমাকে চিনলে আমার মোটরসাইকেল সিগন্যালই দিতেন না, আমার নাম ফরহাদ। আমি শহরেরই একজনের আত্মীয়, আমি তেঘরিয়ার ছমির ভাইর বাড়িতে থাকি। আমাকে আপনি চিনেন? আমার এক ভাই ডিজিএফআই আর আরেক ভাই পুলিশ, তবে সাধারণ পুলিশ না পুলিশের অফিসার রেঙ্কে চাকরি করে। আপনারা আমার সময় নষ্ট করছেন। আমার কাগজপত্র সব ঠিক আছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সের কোনো দরকার হয় না। আমি শহরে নতুন না, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই অনেকদিন ধইরা গাড়ি চালাচ্ছি। এইটা কোনো সমস্যা না। আপনি আপনার বড় স্যারকে কল করে বলেন আমার সময় নষ্ট হচ্ছে, আমাকে যেতে হবে, বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারবো না, জরুরি কাজ আছে।’ কথাগুলো এক মোটরসাইকেল চালকের।

বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের কাজিরপয়েন্ট এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে ড্রাইভিংয়ের প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকায় একটি প্লাটিনা (বাজাজ) ব্রান্ডের মোটরসাইকেল আটক করলে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার ইমতিয়াজকে এসব কথা বলেন মোটরসাইকেল চালক ফরহাদ। পরে তার ওপর মামলা দায়ের করেন পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তা।

chardike-ad

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহে গত কিছুদিন ধরেই বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, ইভটিজিং প্রতিরোধ এবং রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল ধরতে চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। প্রায় প্রতিদিনই শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে এ অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের বিশেষ অভিযানে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল চালকদের ওপর অনেকগুলো মামলা ও বেশ কিছু আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জুলাই মামলা হয়েছে ৩টি ও আটক করা হয়েছে ৮টি মোটরসাইকেল, ১৬ জুলাই মামলা হয়েছে ৩টি আটক ৩টি, ১৭ জুলাই মামলা ৩টি আটক ১টি, ১৮ জুলাই মামলা ৭টি আটক ৯টি, ১৯ জুলাই মামলা ৩৬টি আটক ১০টি ২০ জুলাই মামলা ১০টি আটক ১টি, ২১ জুলাই মামলা ১০টি আটক ৪টি এবং সর্বশেষ ২২ জুলাই বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত শহরে ১৫টি মোটরসাইকেল মালিকদের ওপর মামলা ও ১টি মোটর সাইকেল আটক করা হয়।

এছাড়াও এ অভিযানে সারা জেলায় মোটরসাইকেল মালিকদের ওপর মামলা ও মোটরসাইকেল আটকের খবর পাওয়া গেছে।

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৫ জুলাই থেকে এ অভিযানে সারা জেলায় ১০০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। আটক করা হয়েছে বেশ কিছু মোটরসাইকেল। এরমধ্যে গত ১৫ জুলাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযানে সারা জেলায় মোটরসাইকেল মালিকদের ওপর মামলা হয়েছে ১৬টি ও মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে ১১টি, ১৬ জুলাই মামলা হয়েছে ১৯টি আটক করা হয়েছে ১৮টি, ১৭ জুলাই মামলা হয়েছে ৯টি ও আটক ৪টি, ১৮ জুলাই মামলা ৭টি আটক ৯টি, ১৯ জুলাই মামলা ৩৭টি আটক ১৩টি, ২০ জুলাই মামলা ১৬টি আটক ১টি এবং ২১ জুলাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযানে সারা জেলায় মামলা হয়েছে ২৭টি ও আটক করা হয়েছে ২৩টি মোটরসাইকেল।

এদিকে, পুলিশের এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে শহরের নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী ফারহানা নিশি বলেন, ‘ শহরে বখাটেদের উৎপাত আগের চেয়ে কমে গেছে। পুলিশ সদস্যরা সড়কের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে বখাটে মোটরসাইকেল চালক কিছু ছেলেদের শায়েস্তা করেছে। এদের যন্ত্রণায় রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যেতো না। ওরা মোটরসাইকেল থেকে বাজে বাজে কথা বলে চলে যেতো। বেপরোয়াভাবে ড্রাইভ করতো। পুলিশের এ অভিযানকে সাধুবাদ জানাই।’

মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা রাজন বলেন, ‘যে ইচ্ছা সে-ই মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পরে। গাড়ির তো কোনো কাগজপত্র নাই তার উপর আবার ড্রাইভিংয়ের কোনো নিয়ম সম্পর্কেও অনেকেই জানে না। পুলিশের এ অভিযান নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকলে শহরবাসী একটু শান্তিতে থাকবে।’

পুলিশের বিশেষ এ অভিযানের ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ইভটিজিং, বখাটেপনা রোধে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহে চেকপোস্ট বসিয়েছি। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বখাটেরা এখন সহজেই মোটরসাইকেল নিয়ে মহরা দিতে পারছে না। কাউকে উত্ত্যক্ত করতে পারছে না। সাধারণ নাগরিকরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারছেন। বর্তমানে শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’ (বাংলামেইল২৪)