Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় কোমেন: ৭ নম্বর বিপদ সংকেত

cycloneকক্সবাজার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘুর্ণিঝড় কোমেন। এই ঘূর্ণিঝড় উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। এ ছাড়া মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বুধবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্র এই তথ্য জানিয়ে বলেছে, এর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় সব ধরনের জাহাজ, নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

chardike-ad

এছাড়া বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরার উপকূলীয় চর এলাকা পাঁচ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে। উপকূলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার দুপুরের পর উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। উপকূলে পাঁচ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশংকা করা হচ্ছে।

এদিকে কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়াসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৫-৬ হাজার লোককে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাত ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। সেখান থেকে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাইকিং করার জন্য বলা হয়েছে। এরপরই সব উপজেলায় মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।

ঝড় মোকাবেলায় রাতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি বৈঠকে বসে। ওই সভায়ই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে তৈরি রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় ঢাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বাস্তবায়ন বোর্ডও জরুরি বৈঠকে বসে বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি গবাদি পশুর নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে জনগণকে স্থানান্তর, বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণ, মেডিকেল টিম ও হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকদের সম্ভাব্য যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে সম্ভাব্য ভূমিধসের বিষয়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও সিপিপির সদর দপ্তর সার্বক্ষণিক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকেও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রেডক্রিসেন্ট ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এর আগে পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর জানায়, নিম্নচাপটি সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪০ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬০ কি. মি. দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮০ কি. মি. দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কি. মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৬০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গভীর নিম্নচাপ অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলাগুলো এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ সহ ঘণ্টায় ৬০-৭০ কি. মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাষে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায়, সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ এবং দেশের অন্যত্র মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।

এদিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। ঝড়ো হাওয়ায় রাত ১২টার দিকে বেশ কিছু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার ডিকসন চৌধুরী জানান, সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ পাড়ায় ঝড়ো হাওয়াতে প্রায় ২০টির অধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ৩০টি মতো গাছ উপড়ে পড়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। প্রায় ছয় শতাধিক লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি প্রবল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। (রাইজিংবিডি)