Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যেভাবে সাম্প্রদায়িকতার শিকার হচ্ছেন ভারতীয় মুসলমানরা

Indian-Political-embargoদিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে ভারতের মুসলমানেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা। ১৯৯০ সালে অর্থনৈতিক আইন সংস্কারে মুসলিমরা বেশ খানিকটা উপকৃত হয়। এতে করে তাদের উপর নেমে আসে বিদ্বেষের বিষবাষ্প। এই বিদ্বেষ পর্যবসিত হয় ঘৃণায়। সবমিলে এখন ভালো নেই ভারতের মুসলমানরা। তাদের সাম্প্রতিক অবস্থা আর অবস্থানের প্রসঙ্গ ধরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’ তে নিবন্ধ লিখেছেন সংবাদমাধ্যমটির সহযোগী সম্পাদক স্মিতা গুপ্তা। দেখিয়েছেন, কী করে মুসলমানদের জীবন হরণ না করেও জীবিকা হরণের মধ্য দিয়ে তাদের নিঃশেষ করার চেষ্টা চলছে।

‘অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার রাজনীতি’ (দ্যা পলিটিক্স অব ইকোনমিক ইমবার্গো) শিরোনামের সেই লেখায় তিনি বলেন, মুসলিমদের উপর বিদ্বেষের প্রতিফলন পাওয়া যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলোতে। মুজাফফারনগর ও আতালির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে মুসলিম ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি হামালার শিকার হয় বলে নিবন্ধে উল্লেখ করেন তিনি।

chardike-ad

নব্বই দশকের শুরুতে অর্থনৈতিক আইন সংস্কার মুসলিমদের জন্য ব্যবসার দরজা খুলে দেয় বলে মনে করেন স্মিতা। বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভুমি মন্দির নিয়ে যে দাঙ্গা শুরু হয়েছিলো; এই সংস্কারের মধ্য দিয়ে সেই পরিস্থিতি থেকে কিছুটা অগ্রগতি হয় বলে নিবন্ধে উল্লেখ করেন স্মিতা। তখনকার মুসলিম নেতারাই সর্বপ্রথম এটা উপলব্ধি করে যে মুসলমানদের জন্য এমন কোনো একটা সংস্কারের রাস্তা প্রয়োজন। তাদেরকে যেন সবাই অপরাধী বা সমাজের গৌণ অংশ মনে না করে এজন্য নির্বাচনে দাড়ানো জরুরি ছিলো তাদের।

একইসঙ্গে নব্বই দশকে নব্য উদারবাদের হাতছানিতে কথিত বিশ্বায়নের কারণে সেসময়ের তরুণ প্রজন্ম সাম্প্রদায়িক চিরাচরিত ধারণা ভেঙ্গে ফেলার প্রত্যয়ে কাজ শুরু করে। তারা অর্থনীতির মূলধারায় আসতে চায়। ভাঙতে চায় মুসলমানদের নিয়ে ‘সন্ত্রাসবাদ’র মিথ।

২০০৭ সালে উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের সময়টাতে এই উত্তেজনা টের পাওয়া যায়। সংঘ পরিবার যে উত্তর প্রদেশে দাঙ্গার উস্কানি দিয়েছলো সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তারা মুসলিম-বিরোধী স্লোগান সম্বলিত বিলবোর্ড লাগিয়েছিলো, এমনকি মুসলিম বিরোধী প্রচারণায় সিডিও বিলি করে তারা। মুসলিম নেতারা এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন। মুসলিম নেতারা সহনশীল অবস্থানে ছিলেন। এতে করে ৫৬টি আসন পায় তারা; যা স্বাধীনতার পরে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে বিজেপি’র সিট ৮৯ থেকে কমে দাঁড়ায় ৪৯ এ। মন্ত্রীসভার ১৪ শতাংশ সিট পায় তারা। ২০১২ সালে গিয়ে যা দাঁড়ায় ৬৪ শতাংশে।

২০০৮ সালে যখন তিনি সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত আতিফ আলামিন ও মোহামেদ সাজিদ এর জানাযায় অংশ নিতে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় স্মিতা। আতিফ ও সাজিদকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যার কারণে মুসলিম যুবকদের ঘরের বাইরে পাঠাতে ভয় পেতে লাগলেন। তারা বলেন, মৃত সন্তানের চেয়ে বেকার সন্তান ভালো। কিন্তু ঘরের মাঝে বন্দী থাকতে চায় না এসকল তরুণরা। তাদের অন্যান্য বন্ধুরা পড়াশোনা করে ভালো চাকরি করছে। এটা দেখে নিজেদের অবস্থান কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনা তারা। তখন উদারীকৃত অর্থনীতি তাদের জীবন পাল্টাতে শুরু করে। অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থা সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আসতে থাকে তাদের।

শিক্ষার অভাব, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মুসলিমরা চাকরি না পাওয়ায় নিজেদের ব্যবসা শুরু করেন তারা। আর এই পরিবর্তনই আসলে বর্তমানের ধর্মীয়ভাবে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করেন। যেখানে দেখা যায় মুসলিমদের জনসংখ্যার হার হিন্দুদের চেয়ে বেশি।

ইউএনডিপি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা যায়, ১৯৯০ এবং ২০০০ সালের জনসংখ্যার হারে মুসলিমদের বৃদ্ধি হার বেশি।

তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই সব মুসলিমরা উন্নতি করেনি। তবে যারা করছে তারা খুবই দৃশ্যমান। উত্তরপ্রদেশ সহ প্রায় সব জায়গাতেই অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছে মুসলিমরা।

তবে এই অর্থনৈতিক উন্নতির বিপরীতে রয়েছে ঘৃণা আর বিদ্বেষের আরেক বাস্তবতা। কেবল মুসলমানের জীবন নয়, লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে এই সম্প্রদায়ের জীবিকাকেও। গুজরাট দাঙ্গায় কেবল মুসলমানদের মারা হয়নি, তাদের নিঃস্ব করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে তাদের স্থাপনা-ব্যবসা-বাণিজ্য। উত্তরপ্রদেশের মুজাফফর নগরে ২০১৩ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়েও গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ৫০ হাজার মানুষ।

জীবনের পাশাপাশি জীবিকাকেও লক্ষ্যবস্তু করার এই প্রবণতাকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নতুন ফর্ম বলে দাবি করেছেন স্মিতা গুপ্তা। দিল্লির ত্রিলোকপুরিতেও নির্বাচনের আগে এ অবস্থা দেখা গেছে। আর এখন এটা দেখা যাচ্ছে বিহার নির্বাচনেও।

আর বিজেপি’র এক নেতা মুসলিমদের উদ্দেশ্যে ‘দ্য হিন্দু’কে বলেন, ‘আমরা তোমারে বাস করতে দিচ্ছি এটাই অনেক, মাথা উঁচু করো না।’