Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

তিক্ততা ছাড়াই কেইপিজেড ইস্যু সমাধানের আশা

Lee_Yun_youngকোন প্রকার তিক্ততা ছাড়াই যথাযথভাবে কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রদূত লি ইয়ুন-ইয়ং। তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে বাংলাদেশ ছাড়ার আগে বাংলানিউজকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কেইপিজেড ইস্যু দুদেশের মধ্যকার সম্পর্কে কোন সমস্যা তৈরি করবে না বলেও মনে করেন কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত।

পাশাপাশি এদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সফলতার উদাহরণ সৃষ্টি করার আহবান জানান তিনি।

chardike-ad

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পাশে ১৯৯৯ সালে বিনিয়োগের জন্য কোরিয়াকে দুই হাজার ৪৯২.৩৫ একর জমি দেয় বাংলাদেশ সরকার। কোরীয় সরকারের মনোনীত প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশন সরকারের নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে ওই জমিতে একটি ইপিজেড প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বাস্তবায়ন ব্যর্থতার অযুহাতে সেখান থেকে দুই হাজার একর জমি ফিরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছে সরকার।

‘এ বিষয়টি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভূল বার্তা দেবে’ বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত লি। এছাড়া ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের মতো বিষয় কাজে লাগানোসহ ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ জোটে যোগ দেওয়া বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর সে উন্নয়নের পথে আরো এগিয়ে যেতে বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে অবশ্যেই সফলতার উদাহরণ বা সাকসেস স্টোরি থাকতে হবে। যেমন, ২০১২ সালে যখন কোরিয়ার বৃহত্তম কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসেছিল। তখন তাদের কাছে কোরিয়ান ইপিজেড বাজে উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। এদেশে সুযোগ না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করে। সেখানে এখন তাদের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বিলিয়ন ডলারের উপর আয় সেখান থেকে। এই উদাহরণ অন্যান্য বিনিয়োগকারীদেরও ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করতে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। যেন কেইপিজেডের মতো কোন উদাহরণ আর সৃষ্টি না হয়। জাতীয় ইমেজ একটি দেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি বিষয়।

স্যামস্যাং আবারও বাংলাদেশে ফিরতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, কোম্পানিটি এশিয়ায় তাদের স্মার্টফোনের আরো কারখানা করতে চায়। এজন্য বাংলাদেশেও আসতে পারে। যদি তারা এবার সফলভাবে এদেশে কারখানা তৈরি করতে পারে, তাহলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও ইতবাচক হবে। সেটাও বাংলাদেশের জন্য একটি সফল উদাহরণ হতে পারে।

রাষ্ট্রদূত লি ইয়ান ইয়ং বলেন, বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম শক্তি হতে চলেছে। তবে এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। বাংলাদেশে যেহেতু মধ্যম আয়ের দেশ হতে চায় তাই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি ট্রান্স-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজিক ইকোনমিক পার্টনারশিপ জোটে যোগ দেওয়া উচিত।

২০০৬ সালে ব্রুনাই, চিলি, সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ড- এই চার দেশ ট্রান্স-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজিক ইকোনমিক পার্টনারশিপ গঠন করে। সমুদ্রবেষ্টিত এই দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোই এ জোটের লক্ষ্য। দুই বছর পরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ আরো কয়েকটি দেশ এই জোটে যোগ দেয়। তখন এর নাম দেওয়া হয়ে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ।

লি বলেন, সদস্যদেশগুলো এই জোটে ভারত ও বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে। তবে তার আগে বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ আরো উন্নত করতে হবে। এই জোটে যোগ দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির চাকাও বাড়তি গতি পেয়েছিল।

তবে বিনিয়োগকারী দেশগুলোর আস্থা অর্জনে কেইপিজেড সমস্যার যথাযথ সমাধান জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কোরিয়ার অতীতের কথা স্মরণ করে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বললেন, বাংলাদেশ এখন যে পর্যায়ে আছে, কোরিয়া সেদিন পার করেছে খুব বেশি আগে নয়। ১৯৫০ সালেও গৃহযুদ্ধ চলছিল কোরিয়ায়, তিন বছরের সে যুদ্ধ পুরো দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তবে এখন কোরিয়া পৃথিবীর অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশকেও তার লক্ষ্যে পৌছাতে আগামীতেও সব সময় পাশে থাকবে কোরিয়া। এর উদারহরণ হিসেবে বলা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় কোরিয়ান ওডিএ (অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স) প্রাপক দেশ।

জনশক্তি খাতেও কোরিয়ার সহায়তা অব্যাহত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইপিএস(এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম)কর্মসূচির আওতায় দ‌ক্ষিণ কোরিয়ায় এ মুহূর্তে ১৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। বাংলাদেশের জন্য এ কোটা আরো বাড়ছে। দ‌ক্ষিণ কোরিয়ায় উন্নত কর্মপরিবেশে কাজ করার পাশাপাশি ভালো বেতন পান কর্মজীবীরা। দ‌ক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের গড় মাসিক আয় দুই হাজার মার্কিন ডলারের কাছাকাছি, যা মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো দেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া সেখানে স্বাস্থ্যসেবা আর মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার না হয়ে শ্রম আইন মেনেই তাদের সব পাওনা মেটানো হয়।

এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত কোরিয়ান কোম্পানিগুলোকে এদেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।(বাংলানিউজ)