Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ইজ্জত-আব্রু সবই খোয়াতে হচ্ছে শরণার্থীদের!

refugeeসিরিয়ার যেসব শরণার্থী নতুন জীবনের সন্ধানে ইউরোপে আসছেন তাঁদেরই কয়েকজনকে ক্যামেরায় ধরে রাখছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের আলজিরীয় চিত্রসাংবাদিক জোহরা বেনসেমরা। যেখানে বলা হচ্ছে উদ্বাস্তু সমস্যায় সব থেকে ইতিবাচক ভূমিকা জার্মানির, সেখানে বেনসেমরা বলছেন বাস্তবচিত্র কিছুটা আলাদা। তিনি জানাচ্ছেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে নাকি নগ্ন করে তল্লাশি করা হচেছ। তাঁর বয়ানেই শোনা যাক এক সিরীয় পরিবারের দুর্দশার কথা…

দক্ষিণ জার্মানির রোজেনহাইম স্টেশনে নামার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইহাবের পরিবারের একটা গোটা দিন কেটে গেল পুলিশ স্টেশনে। সেখানে ধূমপান নিষেধ, তাই ইহাবের উদ্বেগ কিছুতেই কমে না। ছোট মেয়ের কান্না থামছে না, কিন্তু তার মা আবিরের ওষুধ আনার কোনও উপায় নেই। শৌচালয়ে একা যাওয়ারও অনুমতি নেই। আবির আমাকে বললেন, ‘ভাবতে পারবেন না ওই অভিজ্ঞতা কত অপমানজনক ছিল!’

chardike-ad

ইহাব ও আবির ইউফ্রেটিস নদীর পাড়ের সুন্নিপ্রধান শহর দেইর-আল-জোর-এর বাসিন্দা। দেশের গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে তাঁরা প্রথমে আসেন তুরস্কে। সেখান থেকে নৌকা, বাস, ট্রেন ও কিছুটা পায়ে হেঁটে জার্মানি। তাঁদের আশা ছিল, গন্তব্যস্থল উত্তর জার্মানি পৌঁছাতে বেগ পেতে হবে না। পুলিশও যে হয়রান করতে পারে, সে কথা তাঁদের একবারও মনে হয়নি।

থানায় আসার সাত ঘন্টা পরে ভোর ছয়টায় শুরু হল জিজ্ঞাসাবাদ। ‘সিরিয়ার ঠিক কোন জায়গা থেকে আসছেন? আপনাদের ক’টি সন্তান? সঙ্গে কী কী কাগজপত্র আছে?’ পুরো কথোপকথনই চলে দোভাষীর মাধ্যমে। ইহাবের কাছে সেই দোভাষীর আচরণ ছিল পুলিশের থেকেও বেশি ভয়ের।

এর প্রায় ১২ ঘন্টা বাদে, সন্ধ্যা সাতটায় আবার ডাক এল থানা থেকে। এবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। ইহাব বললেন, ‘পুরো উলঙ্গ করে আমার তল্লাশি করল ওরা। মনে হচ্ছিল আসাদ (সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট) বাহিনীর কাছেই যেন আমি বন্দি। দুয়ের মাঝে কোনও তফাৎ নেই। থানা ছাড়ার আগে ওরা আমাদের ছবি তুলল। আমি বুঝি দেশকে রক্ষা করা তাদের ধর্ম। চিরকালই, কিছু লোকের খারাপ কাজের দাম চোকাতে হয় ভাল লোকেদেরই।’

মধ্যরাতের কিছু পরে ইহাবের পরিবারকে রেল স্টেশনে ফেরত পাঠানো হয়। ভোর সাড়ে চারটেয় মিউনিখের ট্রেন আসে। কয়েক ঘন্টা পরে শ্রান্ত, ক্লান্ত পরিবারকে নিয়ে স্টেশনে নেমে নতুন সিম কিনে ইহাব আমায় ফোন করে। চব্বিশ ঘন্টা ওদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগই ছিল না। আবার দেখা হওয়ার পর, সবাই মিলে লুবেক-এর টিকিট কিনলাম। হ্যামবার্গ হয়ে যেতে হবে।

যখন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি তখন শূন্য দৃষ্টি মেলে আবির বললেন, ‘নিজের দেশে হিজাব পরি আর এখানে এসে জীবনে প্রথম অপরিচিতদের সামনে পোশাক খুলতে হল। ওই ২৪ ঘন্টা কখনও ভুলতে পারব না।’।