বিদেশগামী কর্মীদের শতভাগ বীমার আওতায় আনতে তোড়জোড় শুরু করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ বিষয়ে গত জুনে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সেই খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করতে সোমবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাসের সভাপতিত্বে আইডিআরএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বীমার পরিধি, বীমা অংক, বীমা চুক্তির জন্য মেডিকেল রিপোর্ট, বীমার বিপণন পদ্ধতি, কারা বীমা পরিকল্পটি বিপণন করবে এবং বীমা দাবি কি উপায়ে নিষ্পত্তি করা হবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের বিষয়ে গকুল চাঁদ দাস বলেন, খসড়া নীতিমালা আমরা এখনো চূড়ান্ত করিনি। বীমা হলো টেকনিক্যাল বিষয়। তাই এ বিষয়ে আমরা একজন অ্যাকচুয়ারিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি এক মাসের মধ্যে একটি নীতিমালা তৈরি করে দেবেন। খসড়া নীতিমালায় যা ছিল তার সঙ্গে আরও নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হবে। অ্যাকচুয়ারি নীতিমালা তৈরি করে দেয়ার পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি জানান, বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দফতর থেকে এ সংক্রান্ত ছাড়পত্র সংগ্রহের আগেই এককালীন প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে। বিদেশগামী কর্মীদের প্রকৃতি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বীমা সুবিধার প্রয়োজনীয়তা, কর্মীদের আর্থিক সক্ষমতা, কর্মকালীন ঝুঁকিসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নীতিমালা করা হবে।
এদিকে বিদেশগামী কর্মীদের শতভাগ বীমার আওতায় আনতে গত বছরের জুনে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে তা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইডিআরএ। ওই খসড়া নীতিমালা অনুসারে, কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশগামী ও বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের বাধ্যতামূলক ৩ প্রকারের বীমা সুবিধা গ্রহণ করতে হবে। যাত্রার সময় থেকে পরবর্তী ১ মাসের জন্য স্বাস্থ্য বীমা, জীবন বীমা এবং চাকরি হারানো, বাফার টাইম, লে-অফ বা কোম্পানি বন্ধের জন্য বীমা সুবিধা করতে হবে।
বিদেশগামীদের বীমা পলিসি নিতে বৈধ পাসপোর্টের কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, নিয়োগকর্তার দেয়া ওয়ার্ক পারমিট ও বৈধ ভিসা, কর্মক্ষেত্রের ঠিকানা, মেডিকেল রিপোর্ট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী জমা দিতে হবে।
বিদেশে কর্মরত এবং বিদেশে কাজ করতে যাবে এমন দক্ষ, অদক্ষ ও সেমি দক্ষ শ্রেণির শ্রমিকদের জন্য এ সুবিধা প্রদান করা হবে। তবে যারা ফ্রি ভিসায় বিদেশে যাবে তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা ব্যাতীত অন্য কোনো বীমা সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। বীমার বিষয়টি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনেও চেক করা হবে।
বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে যাত্রার দিন থেকে পরবর্তী একমাসের জন্য স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা দেবে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো। বিদেশে কাজে যোগদানের তারিখ থেকে প্রাথমিকভাবে কর্ম মেয়াদের সময় পর্যন্ত জীবন বীমা পলিসি কিনতে হবে বিদেশগামীদের। পরে বীমা গ্রহীতার কাজের মেয়াদ বাড়লে নিয়োগকর্তার দেয়া চাকরির সময় বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নমিনি বীমা কোম্পানিতে জমা দিয়ে পলিসির মেয়াদ বাড়াতে পারবেন।
কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকের অপ্রত্যাশিত চাকরিচ্যুতি ঘটলে বীমা স্কিমের আওতায় আর্থিক সুবিধা দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বীমা অংক হবে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা। বীমার মেয়াদ হবে দুই বছর। ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সী শ্রমিকরা এ পলিসি নিতে পারবেন। বীমা চলাকালে গ্রহীতার মৃত্যু অথবা অঙ্গহানি ঘটলে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে।
মৃত্যুবরণ, স্থায়ী সম্পূর্ণ বা আংশিক পঙ্গুত্ববরণ, দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেলে, কব্জির ওপর থেকে উভয় হাত, হাঁটুর ওপর থেকে উভয় পা, কব্জির ওপর থেকে এক হাত ও হাঁটুর ওপর থেকে এক পা কাটা পড়লে এবং এক চোখ দৃষ্টিশক্তি হারালে মূল বীমার শতভাগ পরিশোধ করা হবে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের ভিত্তিতে দাবি পরিশোধ করা হবে।
জাগো নিউজ এর সৌজন্যে