Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফার্নিচার ব্যাবসায়ী থেকে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট

indonesiaইন্দোনেশিয়ার জাভায় এক কাঠুরে পরিবারে জন্ম হয় মুলিয়োনোর। এখানকার বস্তিতে সমবয়সীদের সঙ্গে নদীতে ঝাপিয়ে আর বনজঙ্গলে ঘুরে সময় কেটে যেতো তার। ১৯৬১ সালের ২১ জুন জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জাভা অঞ্চলে কারো নাম পরিবর্তন খুব স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে নাম পরিবর্তন করে এক সময় মুলিয়োনো হয়ে ওঠেন জোকো উইদোদো।

পরবর্তীতে ৫৩ বছর বয়সে এই জোকোই নির্বাচিত হন ইন্দোনেশিয়ার ৭ম প্রেসিডেন্ট হিসেবে। বাবা নোতো মিহার্জো এবং মা সুজিয়াতমির ৪ সন্তানের সবার বড় ছিলেন জোকো। এই পরিবারটি ছন্নছাড়ার মতো ছিলো। তার দাদা বোয়য়োলালির এক ছোট গ্রাম থেকে এসে কারানগানায়ারে বসত গড়েন। আর তার বাবা কারানাগায়ার থেকে জাভায়।

chardike-ad

ইন্দোনেশিয়ান সরকার গরিব জনগোষ্ঠীর জন্যে যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে সেরকম একটি স্কুল ১১১ তিরতয়োসোতে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শুরু করেছিলেন জোকো। ১২ বছর বয়সের বাবার আসবাবপত্রের দোকানে কাজ শুরু করেন তিনি।

মাধ্যমিক পার হতেই তিনবার স্কুল থেকে ঝড়ে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে এই অভিজ্ঞতার প্রভাব পড়ে তার রাজনৈতিক জীবনেও। প্রাথমিকের ধাপ শেষে স্টেট জুনিয়র হাই স্কুলে ভর্তি হন। এরপর স্টেট সিনিয়র হাই স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় নিম্ন সারির একটি স্কুলে ভর্তি হন।

আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করতে করতে কাঠ আর তৈরি আসবাবপত্রের উপর আগ্রহ জন্মে। এরপর অনেক অর্থকষ্টের মধ্য দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে নেন তিনি।

indonesia

যুগজাকার্তার গাদজাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্টি অনুষদ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন ১৯৮৫ সালে। সেখানেই তিনি প্লাইউডের ব্যবহারের উপর গবেষণা করেন। এরপর পিটি কেরতাস ক্র্যাফট আচেহতে কাজ শুরু করেন। কিছুদিন পর নিজের প্রদেশে ফিরে এসে দাদার প্রতিষ্ঠা করা ফার্নিচার ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করেন। পরে অবশ্য প্রথম সন্তান রাকাবুর নামে নিজের কোম্পানির যাত্রা করেন।

তার কোম্পানির ফার্নিচার দেশের বাইরে ইউরোপেও ভালো বাজার পায়। একজন ফরাসি ফার্নিচার ক্রেতা বার্নার্ড জোকো উইদোদোর নাম দেন ‘জোকো’। পরবর্তীতে এই নামেই তিনি রাজনৈতিক জীবনেও সাফল্য পান।

সুকার্তায় নিজের অঞ্চলের উন্নয়নে রাজনীতিতে নামেন তিনি। যোগ দেন ইন্দোনেশিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি অব স্ট্রাগলে। ওই বছরই সুকার্তার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

ইন্দোনেশিয়ার দৈনিক জাকার্তা পোস্টের ব্যবস্থাপণা সম্পাদক দামার হারসানতো বলেন, জোকো হঠাৎ করেই রাজনীতিতে আসেন। কিন্তু তার ব্যবহার আর বাচনভঙ্গি মানুষকে আকর্ষণ করে। তিনি সহজে মানুষের সঙ্গে মিশে যান। এর আগে ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে যেটা খুব দেখা যায়নি।

indonesiaএরপরই জাকার্তায় চলে আসেন জোকো। সেখানে ২০১২ সালে গর্ভনর পদেও জয়লাভ করেন। দুই বছর যেতেই ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে জোকো ক্ষমতা লাভের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের সামরিক বাহিনী বা বুর্জোয়া শ্রেণির কাছ থেকে রাজনীতি সাধারণের মাঝে আসে।

দামার বলেন, জোকো সাধারণের মন জয় করতে পেরেছিলেন। তিনি অনেক সময়ই কোনো নিরাপত্তা ছাড়া বেরিয়ে পড়েন। আবার নিজের নিরাপত্তা শৃঙ্খল নিজেই ভেদ করে সাধারণের মাঝে চলে যান। ‘তার নিরাপত্তাকর্মীরা অনেক সময় এ নিয়ে ঝামেলায় পড়ে যান। আবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার যাদুশিল্পের প্রদর্শনও তাকে অনেক জনপ্রিয় করে তোলে।’

প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন, তেলের দামে ভর্তুকি বাদ দেওয়াসহ বেশ কিছু শক্ত পদক্ষেপ নেন জোকো। গত ৪ বছরেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নিজেকে ক্ষমতাবান এবং প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ্য হয়েছেন তিনি। ভারত মহাসাগরকে ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক শক্তির সম্ভাবনার কথা বলছেন ইন্দোনেশিয়ার এই রাষ্ট্রপ্রধান।

সৌজন্যে- বাংলানিউজ