Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এমনও করতে পারে স্বামী?

zareen-02আফগান এই তরুণীর নাম নাম শাকিলা জেরিন। বর্তমানে আছেন কানাডার ভ্যানকুভারে। শাকিলার ছিমছাম শোয়ার ঘরটাতে বিছানার পাশে তার একটা ছবি আছে। ছবিটাতে দেখা যায় উজ্জ্বল হলুদ রঙের একটা পোশাক পরা শাকিলার কানে লম্বা দুল, তার সঙ্গে মানিয়ে কেনা গলার হার ও আঙটি। খুব সাবলীলভাবে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।

এ ছবিটা আসলে শাকিলার কাছে এখন শুধুই স্মৃতি। কারণে ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে শাকিলার মুখের মসৃণ ত্বক, কালো চুলও। কিন্তু ২০১২ সালের পর শাকিলা আসলে এমন আর নেই। ওই বছরটাতে আফগানিস্তানে শাকিলার স্বামী তাকে গুলি করেন। তবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

chardike-ad

এ বছরের শুরুতে শরণার্থী হিসেবে কানাডার ভ্যানকুভারে এসেছেন তিনি।

শাকিলা জানিয়েছেন, তার বয়স যখন ১৭ বছর তখন তার চেয়ে বয়সে অনেক বড় এমন একজনকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন তার দুলাভাই। তিনি বলছেন, বিয়ের রাত থেকেই তার উপর নির্যাতন শুরু হয়।

একজন অনুবাদকের মাধ্যমে সিবিসি নিউজকে তিনি বলেছেন, বিয়ের রাত থেকে আমাকে সে মারপিট ও ধর্ষণ করতে শুরু করে। ওটাই আমার জীবন হয়ে গিয়েছিল।

সাহায্যের আশায় শাকিলা পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। পুলিশকে তিনি স্বামীর মারপিটের কথা জানান। তার স্বামী ও দুলাভাইয়ের সঙ্গে তালেবানদের যোগসূত্র রয়েছে বলেও পুলিশকে জানান তিনি।

শাকিলা জানিয়েছেন, এর জবাবে পুলিশ তাকে বলে, উনি আপনার স্বামী, আর তিনি অস্বাভাবিক কোনোকিছু আপনার সঙ্গে করেননি। সে আপনার কান কাটেনি, মুখ কাটেনি, নাক কাটেনি।

shakila-03আশার কোনো আলো না দেখে পুলিশের কাছ থেকে নিজের মায়ের বাসায় যান শাকিলা।

সে দিনের স্মৃতির কথা মনে করে শাকিলা বলেন, কয়েক ঘণ্টা পরিই আমার স্বামী সেখানে পৌঁছায় আর আমাকে গুলি করে।

শাকিলা বলেন, ‘গুলিটা আসলে আমার মুখের অর্ধেকটা কেড়ে নিয়েছিল। নাক, মুখ, চোখ, দাঁত, চোয়াল সব হারিয়েছিলাম আমি।’

২০১৭ সালে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে অস্বকৃতি জানান তার স্বামী। শাকিলার দুলাভাই গার্ডিয়ানকে বলেন, শাকিলা নিজের গুলিতে নিজে বিদ্ধ হন। এরপর তার স্বামীকে ১০ বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে।

ঘটনার পর একটি গাড়িতে শাকিলাকে কাবুলের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা নিয়ে জীবন বাঁচে তার।

এরপর শাকিলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে ভারত সরকার। শাকিলা, তার মা ও ছোট বোনকে ভারত সরকার দিল্লি নিয়ে যায়। পরের তিন বছর ধরে ভারত সরকার তার ছোটবড় বেশকিছু অস্ত্রোপচার করায়।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর তাদের তিনজনকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের পুনর্বাসনের আবেদন জানায়।

২০১৬ সালের জুনে শর্তসাপেক্ষে তা মঞ্জুর করে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান থেকে বহুদূরে ও স্বামীর থেকে নিরাপদে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন শাকিলা।

shakila-01যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাখ্যান
একবছর পর আরেকটি চিঠি পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে তাদের সেখানে থাকার অনুমতি বাতিল করা হয়।

শাকিলা বলেন, এরপর আমি খুব কেঁদেছি। আমাকে কেন কোনো একটা দেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। আমি খুব হতাশ হয়েছিলাম।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার ছয় মাস পর এ আদেশ এসেছিল। ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প যে শরণার্থী কমূসূচি বাতিল করেছিলেন তার বিরুদ্ধে তখন আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।

শাকিলাকে নিয়ে নিরাপত্তাজনিক কী সমস্যা হয়েছিল তা জানা যায়নি। কিন্তু শাকিলা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পর একইভাবে তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে সুইডেনও।

এরপর ইউএনএইচসিআর শাকিলার ফাইল কানাডায় পাঠায়। সেখানে বিষয়টি ‘আলোর গতিতে’ এগোতে থাকে।

শাকিলার এক বন্ধুর দেয়া তথ্য মোতাবেক, ২০১৭ সালের নভেম্বরে দিল্লিতে কানাডার হাইকমিশনে শাকিলার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শাকিলা, তার মা ও বোন কানাডার ভিসা পেয়ে যান। চলতি বছরের জানুয়ারির ৩০ তারিখে তারা কানাডার ভ্যানকুভারে পৌঁছান।

কানাডায় কেউ আমার নিয়ে ঠাট্টা করে না
ভারতে থাকা অবস্থায় মানুষের উপহাসের ভয়ে শাকিলা সবসময় নিজের মুখ ঢেকে রাখতেন। কানাডায় আসার পর সে অবস্থার পরিবর্তন হয়।

শাকিলার ভাষায়, আমি ঘোমটা সরিয়ে ফেলে বুক উঁচু করে হাঁটতে শুরু করি। এখানে আমাকে নিয়ে কেউ ঠাট্টা করে না আর এ জিনিসটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিয়েছে।

শাকিলা চান, কানাডার রাজনীতিবিদরা জানুক যে আফগানিস্তানে মানুষের জন্য এখনও অনেক কাজ করতে হবে।

আমরা চাই নারীর প্রতি এ সহিংসতা বন্ধ হোক
‘আমি চাই তারা জানুক আফগান মেয়েদেন জীবনটা কত কষ্টের। আফগান মেয়েরা যে অনেক শক্ত, আমি সে কথাটাও তাদের জানিয়ে রাখতে চাই। কিন্তু আমরা চাই মেয়েদের প্রতি এ সহিংসতা বন্ধ হোক।’

মার্কিন আইনপ্রণেতা কির্ম্বালে মোটলেও শাকিলার সঙ্গে একমত যে আফগানিস্তানে এখনও প্রচুর সমস্যা রয়ে গেছে।

মোটলে বলেছেন, আফগানিস্তানে যখন কোনো নারী পুলিশের কাছে স্বামীর হাতে নির্যাতিত হওয়ার কথা জানায়, পুলিশও ওই নারীকে জিজ্ঞাসা করেন সে কী ভুল করেছে এবং একপর্যায়ে তাকে স্বামীর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

শাকিলা জানেন নতুন জীবনে তাকে বহুদূর হাঁটতে হবে। তার এখন কাউন্সেলিং চলছে, সে ইংরেজি শেখার চেষ্টা করছে ও নতুন জীবনে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

খেতে গেলে শাকিলার এখনও কষ্ট হয়। তার ওজন কমে যাচ্ছে।

নিজের পুরনো ছবি কেন সবসময় রেখে দেন- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ছবিটা দেখে ভাবি আমি কী ছিলাম। আমি দেখতে চায় আমি কী ছিলাম আর এখন কী অবস্থা।

আমি ভাবি কোন ধরনের পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে এমন করতে পারে? কোন ধরনের পুরুষ কাউকে এভাবে আঘাত করতে পারে?